×

জাতীয়

ধান সংগ্রহে অনিয়ম

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ মে ২০১৯, ১০:৩৭ এএম

ধান সংগ্রহে অনিয়ম
সরকারিভাবে ধান ও চাল সংগ্রহের শুরুতেই ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নীতিমালা অনুযায়ী কার্ডধারী কৃষক ও বৈধ চালকল মালিকদের কাছ থেকে ধান ও চাল কেনার বিধান থাকলেও অধিকাংশ জেলাতেই সেটি কার্যকর হচ্ছে না। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, কার্ডধারী কৃষকের বদলে ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও প্রভাবশালীরা ধান ও চালের জোগান দিচ্ছেন। কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনে সরকারি গুদামে বিক্রি করছেন তারা। এবারের বোরো মৌসুমে সাড়ে ১২ লাখ টন ধান ও চাল সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ২৫ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ধান ও চাল সংগ্রহের এই অভিযান চলবে। এর মধ্যে ধান সংগ্রহ করা হবে দেড় লাখ টন, বাকিটা চাল ও গম। এটা মোট উৎপাদনের ০ দশমিক ৩ শতাংশের বেশি নয়। এ বছর বোরো উৎপাদন ১ কোটি ৯৬ লাখ টন হয়েছে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ। বোরো মৌসুমে এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। ঠিক ধান কাটার সময়ে ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ ছোবল হানায় কিছুটা ক্ষয়ক্ষতি হলেও ফসল ঘরে তুলতে সমর্থ হয় কৃষক। কিন্তু গোল বাঁধে ধানের দাম নিয়ে। ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় হাসি নেই কৃষকের মুখে। ধানক্ষেতে আগুন দিয়ে, রাস্তায় ধান স্তূপ ও ছিটিয়ে মানববন্ধন-সমাবেশ করে প্রতিবাদ করছেন কৃষকরা। শ্রমিক সংকট, শ্রমিকের অতিরিক্ত মজুরি, বাজারে ধানের কম দাম, সরাসরি সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে না পারাসহ নানা কারণে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়েছেন তারা। কোনো সমাধান না পেয়ে ধান চাষকেই অভিশাপ হিসেবে দেখছেন অনেক কৃষক। তারা বলছেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকায় এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ধান উৎপাদন হয়েছে। কিন্তু বেশি ধান হওয়ার কারণে সংকটও বেড়েছে। ধান চাষ ও বাজারে তোলার মাঝখানে বেশ কয়েকটি ধাপে নানা ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের। কৃষকদের জন্য কৃষি বিভাগের দেয়া কার্ড নিয়ে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। একজনের নামে একাধিক কার্ড, অস্তিত্ব নেই এমন লোকের নামে ভুয়া কার্ড, যার নামে কার্ড তাকে না জানানো, চাপ প্রয়োগ করে একজনের কার্ড নিয়ে অন্য কৃষকের কাছ থেকে কম দামে ধান কিনে সরকারের কাছে বেশি দামে বিক্রির মতো অভিযোগও রয়েছে। আবার উপজেলা পর্যায়ে মধ্যস্বত্বভোগীরা কৃষকের নাম দিয়ে ধান বিক্রির একাধিক কার্ড হাতিয়ে নিয়েছেন, এমনও ঘটনা ঘটছে। মাগুরা সদর উপজেলার নান্দুয়ালী গ্রামের কৃষক রজব আলী বলেন, মহাজনের দেনার চাপেই দুই সপ্তাহ আগে ধান বিক্রি করেছি ১৮ টাকা কেজি দরে। কিন্তু এখন শুনছি সরকার ধান কিনবে ২৬ টাকা কেজি দরে। এতে আমার কোনো লাভ নেই। কারণ, আমার গোলায় এখন কোনো ধান নেই। কৃষকরা জানান, তারা চাইলেই সরকারি খাদ্য গুদামে ধান বিক্রি করতে পারেন না। এই বাধা দূর করা দরকার। স্থানীয় কৃষি স¤প্রসারণ বিভাগ কৃষকদের যে তালিকা তৈরি করে, সেই তালিকায় কৃষকের নাম থাকতে হবে। কৃষকের নিজের জমি না বর্গাচাষি তা উল্লেখ করতে হবে। কৃষকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে এবং জাতীয় পরিচয়পত্র থাকতে হবে। খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার কৃষক ইউনুস বলেন, এবার প্রয়োজনের বাইরে ধান চাষ করিনি। গতবার অনেক ক্ষতি হয়েছে। আমার নামে ধান বিক্রির কার্ড হয়েছে, অথচ আমি তা জানি না। কার্ড দিয়ে কারা ধান বিক্রি করছে, তাও জানি না। এলাকায় কিছু লোক রয়েছে, তারা খাদ্য অফিসে যোগযোগ করে কার্ড করে নেয়। তারা আবার গরিব কৃষকের কাছ থেকে কম দামে ধান কিনে মজুত রাখে। যশোরের অভয়নগর উপজেলার দিয়াপাড়া গ্রামের কৃষক রবিউল বলেন, সরাসরি ধান বিক্রি করতে গেলে সরকারি অফিসের লোকরা ধানের আদ্রতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। কিন্তু খাদ্য অফিসের নিজস্ব কিছু লোক আছে, তারা যে ধানই নেয়, সেটা চলে। বগুড়ায় ধান-চাল-গম সংগ্রহ অভিযান নিয়ে চাষিদের সঙ্গে ছলচাতুরী শুরু করেছে খাদ্য বিভাগ। জেলায় এখনো শুরুই হয়নি অভিযান। তৈরি করা হয়নি চাষিদের তালিকাও। সরকারের নির্ধারিত দরকে স্বাগত জানালেও অভিযান কার্যক্রম নিয়ে খুশি নয় চাষিরা। তারা বলছে, এখনো খাদ্য বিভাগ চাষিদের তালিকাই তৈরিই করেনি। কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী এলাকার চাষি আব্দুল বাতেন বলেন, সরকার প্রতি বছর ধান কেনে। কিন্তু সে সুযোগ প্রকৃত চাষিরা পায় না। এখন চাষিরা ধান ঘরে তুললেও ধারদেনা পরিশোধ করতে গিয়ে কম দামে হলেও বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের। কিন্তু সরকার যখন কেনা শুরু করে, চাষিদের ঘরে তখন ধান থাকে না। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে বাজারে দাম কমিয়ে দেয়। এতে চাষিরা ন্যায্যমূল্য পায় না। সুনামগঞ্জের চাষিদের কাছ থেকে ধানের বদলে চাল সংগ্রহের পরিমাণ বাড়ছে। এতে চাষিরা বঞ্চিত হলেও লাভবান হচ্ছেন মিল মালিকরা। সুনামগঞ্জের নোয়াগাঁও গ্রামের কৃষক সুন্দর আলী আক্ষেপ করে বলেন, আমি কখনো সরকারকে ধান দিতে পারিনি। এবার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু প্রথমে কৃষি অফিস, পরে ইউএনও অফিস আরো পরে খাদ্য অফিসে দৌড়াদৌড়ি করে আমার আগ্রহ মরে গেছে। শেরপুরের শ্রীবরদীতে সরকারিভাবে চাল সংগ্রহের তালিকা ও বরাদ্দ দেয়ার ক্ষেত্রে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। কয়েক বছর ধরে পরিত্যক্ত থাকা কিছু রাইস মিলের নামেও দেয়া হয়েছে চালের বরাদ্দ। এসব বিষয়ে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আরিফুর রহমান অপু বলেন, কৃষকের বদলে প্রভাবশালীদের কাছ থেকে ধান ও চাল কেনা হচ্ছে মর্মে এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। তবে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ দেখে আমরা নিজেরাই ইতোমধ্যে অনিয়ম খতিয়ে দেখতে সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রককে তদন্ত করার জন্য নির্দেশ দিয়েছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App