×

জাতীয়

ঈদ ঘিরে বেপরোয়া অজ্ঞান-প্রতারক চক্র

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ মে ২০১৯, ১১:০৬ এএম

ঈদ ঘিরে বেপরোয়া অজ্ঞান-প্রতারক চক্র
রমজান এলেই বেপরোয়া হয়ে ওঠে অজ্ঞান-মলম পার্টি, ভুয়া ডিবিসহ প্রতারক চক্রের সদস্যরা। দিন যত যায় ততই বাড়ে এদের অপতৎপরতা। অভিনব নানা কৌশলে টার্গেট ব্যক্তিকে অচেতন করে সর্বস্ব হাতিয়ে নেয় প্রতারক চক্রের সদস্যরা। ইদানীং প্রতারণার নতুন কৌশল নিয়েছে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা। সর্বস্ব কেড়ে নেয়ার পর ভিকটিমের মোবাইল থেকে পরিবারের সদস্যদের ফোন করে ‘আপনাদের আত্মীয় অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে, এখনই টাকা না পাঠালে বাঁচানো যাবে না’ জানিয়ে উদ্বিগ্ন পরিবারের কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে তারা। রমজানের গত ১৫ দিনে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে শুধু ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৫ জন। একই সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় শতাধিক অজ্ঞান-মলম পার্টির সদস্য গ্রেপ্তার হয়েছে। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আব্দুল্লাহপুর, মিরপুর, মহাখালী, গাবতলী, যাত্রাবাড়ী, কামরাঙ্গীরচরসহ রাজধানীর বিভিন্ন বাস টার্মিনাল, লঞ্চ, রেলস্টেশনে ও ঢাকার আশপাশে সাভার, আশুলিয়া, সিদ্ধিরগঞ্জে অজ্ঞান-মলম পার্টির ১০-১২টি সংঘবদ্ধ চক্রের কয়েকশ সদস্য তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন সময় এসব চক্রের সদস্য ও দলনেতারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়লেও তাদের গডফাদার ফরিদকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। গডফাদার ফরিদই রাজধানীতে ছড়িয়ে থাকা অজ্ঞান-মলম পার্টি চক্রগুলোকে নেতৃত্ব দিচ্ছে বলে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে ঢাকার বিভিন্ন মার্কেট, শপিংমল, বাসস্ট্যান্ড ও রেলস্টেশনে নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা যাত্রীকে টার্গেট করে প্রথমে সখ্যতা গড়ে তোলে তারা। মোবাইলে ওয়াজ ছেড়ে নিজেকে পরহেজগার সাজার চেষ্টা করে। পরে সময় বুঝে টার্গেট ব্যক্তিকে খাবার খেতে আমন্ত্রণ জানায়। এ সময় বিশ্বাস অর্জনের জন্য দলের অন্য সদস্যরা মিলে সাধারণ খাবার গ্রহণ করে। টার্গেট ব্যক্তি রাজি হলে তাকে চেতনানাশক মিশ্রিত খাবার খাওয়ানো হয়। অচেতন হয়ে গেলে প্রতারক চক্রের সদস্যরা মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে দ্রুত সেখান থেকে সটকে পড়ে। এমনকি ভিকটিমের মোবাইল থেকে পরিবারের সদস্যদের ফোন করে জানায়, আপনার আত্মীয় রাস্তায় অজ্ঞান হয়ে আছে। এখনই টাকা না পাঠালে মারা যাবে। এরপর বিকাশের মাধ্যমে টাকা নিয়ে মোবাইল ফোনটি বন্ধ করে দেয়। অচেতন করার ক্ষেত্রে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা খাদ্যদ্রব্য হিসেবে চা, কফি, জুস, ডাবের পানি, পান, ক্রিম জাতীয় বিস্কিটের সঙ্গে ইদানীং খেজুর ব্যবহার করছে। গত ১৭ মে রাতে রাজধানীর উত্তরা, মিরপুর, নিউমার্কেট, গুলিস্তান, কুড়িল বিশ^রোড, ফকিরাপুল ও জয়কালী মন্দির এলাকা থেকে অজ্ঞান পার্টির ৬৫ সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে জব্দ করা হয়েছে ২০৭ পিস চেতনানাশক বড়ি। এর আগে গত ১৩ মে রাতে রাজধানীর খিলগাঁওয়ে সিএনজি চালক জয়নালকে (৪৫) শরবতের সঙ্গে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে সিএনজি চুরি করে নিয়ে যাওয়ার সময় অজ্ঞান পার্টির ২ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত ১১ মে শেরেবাংলা নগরের পঙ্গু হাসপাতালের সামনে অভিযান চালিয়ে অজ্ঞান পার্টির ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। এ সময় তাদের কাছ থেকে চেতনানাশক বড়ি জব্দ করা হয়। একই দিন ডেমরার রানীমহল সিনেমা হলের সামনে থেকে অজ্ঞান পার্টির ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৪৩ পিস চেতনানাশক বড়ি জব্দ করা হয়। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি-উত্তর) উপপুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর থেকে সদরঘাটগামী বাসে, সাভার-আশুলিয়া থেকে ঢাকাগামী বাসে এবং যাত্রাবাড়ীর শনিরআখড়া ও সিদ্ধিরগঞ্জে ঢাকাগামী বাসে সহজ-সরল যাত্রীদের টার্গেট করে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা। পরে চেতনানাশক ওষুধ দিয়ে অচেতন করে সব ছিনিয়ে নেয় তারা। এমনকি ভিকটিমের মোবাইল নম্বর পরিবারের সদস্যদের ফোন করে টাকা অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। আরেক গ্রুপ রয়েছে যারা ঈদকে সামনে রেখে ঢাকার বিভিন্ন মার্কেট, শপিংমলের সামনে অবস্থান নিয়ে টার্গেট ব্যক্তিকে অচেতন করে সর্বস্ব হাতিয়ে নেয়। আমরা জানতে পেরেছি, ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায় অন্তত অজ্ঞান পার্টির ১০-১২টি চক্র রয়েছে। বিভিন্ন সময় এদের সদস্য ও দলনেতাদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হলে তাদের গডফাদার ফরিদকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। ফরিদই এই চক্রগুলোকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। তাকে ধরতে গোয়েন্দা নজরদারি চালানো হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের গ্রেপ্তারের পর বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভিকটিমকে ছাড়া মামলা করতে হয় পুলিশের। ফলে আইনি দুর্বলতার কারণে আসামিরা জামিন বা খালাস পেয়ে থাকে। পরে জেল থেকে বের হয়েই তারা কৌশল বদলে আবার একই অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। যার কারণে পুরোপুরি তাদের অপতৎপরতা রোধ করা যাচ্ছে না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App