×

জাতীয়

যেখান থেকে খালি হাতে ফেরে না কোনো রোজাদার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ মে ২০১৯, ০১:১৭ পিএম

যেখান থেকে খালি হাতে ফেরে না কোনো রোজাদার
শুরুটা হয়েছিল আজ থেকে ৭ বছর আগে ২০১২ সালে। রমজান মাসে ইফতারের আগ মুহূর্তে ভিক্ষার থালা নিয়ে বিভিন্ন দোকান ঘুরে খালি হাতে ফিরলেন কয়েকজন দরিদ্র মানুষ। আজান দেয়ার সময় থালায় যেটুকু খাবার ছিল তা দিয়েই রোজা ভাঙলেন দরিদ্র ওই মানুষগুলো। এ দৃশ্য দেখে মন ভারি হয়ে ওঠে বাংলাদেশ বৌদ্ধ ভিক্ষু মহাসভার সংঘনায়ক ও বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের সভাপতি শুদ্ধানন্দ মহাথেরোর। সংঘে ফিরে অন্য ভিক্ষুদের ঘটনাটি বললেন। জানতে চাইলেন, প্রতি বছর রমজান মাসে দরিদ্র ও দুস্থ মানুষদের মাঝে ইফতারির সামগ্রী বিতরণ করলে কেমন হয়? সংঘনায়কের এমন বক্তব্যে সবাই বিনাবাক্য ব্যয়ে সায় দিলেন। এরপর থেকে বাসাবোর ধর্মরাজিক বৌদ্ধবিহারে দরিদ্র রোজাদারদের মাঝে বিতরণ করা হয় ইফতার সামগ্রী। সেই থেকে এখানে এসে খালি হাতে ফেরেন না কোনো দরিদ্র রোজাদার। প্রতিদিন এখানে প্রায় ৩০০ মানুষের মাঝে ইফতারি বক্স বিতরণ করা হয়। বিকেল থেকেই মন্দিরের মূল গেটের বাইরে জড়ো হতে থাকেন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার দরিদ্র মানুষ। বিকেল ৫টার পর থেকে গেট খুলে দেয়া হয়। অপেক্ষায় থাকা মানুষের হাতে একটি করে টোকেন দেন একজন বৌদ্ধ ভিক্ষু। সেই টোকেন নিয়ে মন্দিরের ভেতরে খোলা জায়গায় সারি বেঁধে দাঁড়ান সবাই। বক্স হাতে নিয়ে একে একে বাইরে বেরিয়ে আসেন। প্রতিটি বক্সে থাকে ছোলা, পেঁয়াজু, বেগুনি, আলুর চপ, জিলাপি ও মুড়ি। পাশের একটি হোটেল থেকে ইফতারিসামগ্রী কিনে আনা হয়। প্রতি প্যাকেটের দাম পড়ে ৫০ টাকা। বৌদ্ধবিহারের এমন আয়োজন ‘অসামান্য সম্প্রীতির’ নজির সৃষ্টি করছে বলে মনে করেন এলাকাবাসী। টিটিপাড়া এলাকা থেকে ২ সন্তান নিয়ে দুপুর থেকেই বৌদ্ধবিহারের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন সালেমা বেগম (৩০) এবং জানালেন, কয়েক বছর ধরেই এখান থেকে ইফতারির বক্স সংগ্রহ করেন। বক্সের খাবার দিয়েই সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে রোজা ভাঙেন। বৌদ্ধ মহাবিহারের আবাসিক ভিক্ষু নিব্বুতি থেরো ভোরের কাগজকে বলেন, আমাদের অনাথ আশ্রম চালানোর জন্য সরকার থেকে কিছু অর্থ সাহায্য দেয়া হয়। এ ছাড়া এলাকার মানুষ এবং ভক্তরা সাহায্য-সহযোগিতা করেন, সেখান থেকে কিছু টাকা বাঁচিয়ে হতদরিদ্রদের জন্য ইফতারের ব্যবস্থা করা হয়। ইতোমধ্যে এই বিষয়টি অনেকেই জানেন। দিন দিন আগত লোকজনের সংখ্যাও বাড়ছে। সংখ্যা যাই হোক, দরিদ্র কোনো মানুষকে ফেরানো হয় না। আগতদের অধিকাংশই নারী। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ড. প্রণব কুমার বড়ুয়া বলেন, বৌদ্ধ ধর্মের মূল মন্ত্র হলো অহিংসা পরম ধর্ম। এই উদ্যোগের মূলে রয়েছে সবার প্রতি মৈত্রী ও জাতিগত বিদ্বেষ দূর করে আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি স্থাপন। গত ১০ বছর ধরে বিহারের মূল গেটের নিরাপত্তার দায়িত্বে আছেন আজাদ মুন্সি। তিনি জানান, শুধু হতদরিদ্র মানুষদেরই নয় বিহারে কর্মরত মুসলিম কর্মচারীদের ইফতারও এখানে করানো হয়। দুই বছর আগেও ঈদে এই মন্দির থেকে গরিবদের চাল, আলু, সেমাই, চিনি ও নারকেল দেয়া হতো, যা এখন বন্ধ আছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App