×

জাতীয়

ক্ষুব্ধ মৎস্যজীবীদের কঠোর আন্দোলনের হুমকি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ মে ২০১৯, ০১:৩৪ পিএম

ক্ষুব্ধ মৎস্যজীবীদের কঠোর আন্দোলনের হুমকি
সাগরে মাছ আহরণে ৬৫ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা জারি করায় মৎস্যজীবীরা বেকার হয়ে পড়েছেন। সরকারের এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে কঠোর আন্দোলন ও হাইকোর্টে রিট করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। মৎস্যজীবীরা বলছেন, ৬৫ দিন বঙ্গোপসাগরে মাছ আহরণ বন্ধ থাকলে তাদের না খেয়ে থাকতে হবে। ওই সময় তাদের ভিক্ষা করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। এ ছাড়া সামনে ঈদ, এ সময় মাছ ধরতে না পারলে বোট মালিকরা ক্ষতির মুখে পড়বে। জেলেরা এ নিষেধাজ্ঞা কমিয়ে ৩০ দিন করার দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি মে থেকে জুলাই মাসের পরিবর্তে এ নিষেধাজ্ঞা চৈত্র থেকে বৈশাখ করার দাবি জানিয়েছেন তারা। বাংলাদেশ সামুদ্রিক মৎস্য আহরণকারী ও বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাবুল সরকার বলেন, ‘আগে ইলিশ না ধরতে ৬৫ দিন মাছ ধরা বন্ধ ছিল। এবার সব ধরনের মাছ ধরার ওপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন ধ্বংস হবে। সরকার দ্রুত এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না করলে আমরা কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি দেব।’ তিনি আরও বলেন, প্রয়োজনে আমরা হাইকোর্টে রিট করব। দেশে মাছ ধরার ৬৫ হাজার বোট রয়েছে। প্রতি বোটে ২০ জন করে কাজ করে। মাছ ধরতে না পারলে তাদের খরচ আসবে কোথা থেকে?’ চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোমিনুল হক বলেন, ‘মৎস্যজীবীরা আন্দোলন করলেও আমাদের কিছুই করার নেই। তাদের ভালোমন্দ সরকার দেখবে। কিন্তু আমাদের পার্শ¦বর্তী দেশ ভারত, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কাসহ সব দেশে বছরে ৬৫ দিন সমুদ্রে মাছ ধরা বন্ধ থাকে। কারণ এই সময়ে মা মাছ পোনা ছাড়ে ও অন্যান্য মাছও বড় হয়। তাই এই সময়ে মাছ ধরা বন্ধ থাকলে পরবর্তীতে জেলেরাই লাভবান হবেন। তা ছাড়া সমুদ্রে মৎস্য সম্পদ বিলুপ্তের কথা বিবেচনা করেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।’ এদিকে গত ১৬ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে এক মতবিনিময় সভায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু বলেন, মাছের মজুদ সংরক্ষণ সুষ্ঠু ও সহনশীল আহরণ নিশ্চিত করার স্বার্থেই এটা করা হচ্ছে। মাছ প্রাকৃতিক সম্পদ হলেও তা অফুরন্ত নয়। সমুদ্র মৎস্য সম্পদ সহনশীল পর্যায়ে আহরণ না করলে এমন সময় আসবে যখন সমুদ্র থেকে মাছ আহরণ অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হবে না। মাছ বড় হওয়ার সুযোগ দিতে হবে। ডিম ছাড়ার মৌসুমে মাছ আহরণ করে ফেললে একদিন তো আমাদের সমুদ্র মৎস্য শূন্য হয়ে যাবে। নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী ৬৫ দিন মাছ ধরা বন্ধ রাখার সুফল সারা বছর পাওয়া যাবে বলেও মন্তব্য করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আগামী বছর থেকে মাছ ধরা বন্ধের সময়ে প্রণোদনা দেয়া হবে। সরকারি নিষেধাজ্ঞা না মেনে সাগরে মাছ আহরণ করলে কঠোরভাবে ‘আইন ও বল’ প্রয়োগ করা হবে। এ ছাড়া গত ১৯ মে বঙ্গোপসাগরে সামুদ্রিক মাছ আহরণে সরকারি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে চট্টগ্রাম নগর ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেন জেলেরা। নগরীর পতেঙ্গা, ফিরিঙ্গিবাজার, পাথরঘাটাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা জেলেরা ‘মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা, মানি না মানব না’ স্লোগান দিতে থাকেন। উত্তর চট্টলা উপক‚লীয় মৎস্যজীবী জলদাস সমবায় কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি লিটন দাস বলেন, ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই ৬৫ দিন সমুদ্রে সব ধরনের মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। কিন্তু জেলে পেশার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চট্টগ্রামের প্রায় ৫০ হাজার পরিবারের জন্য বিকল্প কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। তিনি বলেন, আমরা মাছ ধরে দৈনিক যা আয় করি, তা দিয়েই সংসার চালাই। প্রায় আড়াই মাস যদি মাছ ধরা বন্ধ রাখতে হয়, তাহলে এতগুলো পরিবার চলবে কীভাবে? আমরা সরকারের কাছে অনুরোধ জানাই, মাছ আহরণে সরকারি নিষেধাজ্ঞা পুনরায় বিবেচনা করুন। জেলেদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা নিন। অর্থাভাবে কোনো জেলে খারাপ কাজে জড়িয়ে গেলে এর দায়ভার কে নেবে? প্রসঙ্গত, ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন বঙ্গোপসাগরে সামুদ্রিক মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। সাগরে বাণিজ্যিক ট্রলার ও সব ধরনের যান্ত্রিক এবং অযান্ত্রিক নৌযান দ্বারা মাছ আহরণ বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App