×

জাতীয়

আমসহ ভেজাল ফলে ছেয়ে গেছে বাজার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ মে ২০১৯, ১১:১৩ এএম

আমসহ ভেজাল ফলে ছেয়ে গেছে বাজার
আমসহ ভেজাল ফলে ছেয়ে গেছে বাজার
র‌্যাবের হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করেই আমসহ ভেজাল ফলে ছেয়ে গেছে বাজার। কার্বাইডসহ ক্ষতিকর বিভিন্ন রাসায়নিক দিয়ে পাকানো ফল দেখে চোখ জুড়িয়ে গেলেও অপরিপক্ব এসব ফলে নানা ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। মধুমাস শুরু হয়েছে। মৌসুমি ফলে ছেয়ে গেছে বাজার। তবে বেশিরভাগ ফলই অপরিপক্ব ও বিষাক্ত। আগামী ২৩ মের আগে কোনো আড়তে আম আনা যাবে না বলে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের সতর্ক বার্তাও কাজে আসেনি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সময়ভেদে আম পাকে। তারা ওই সব আমই আনছেন, যা পাকার সময় হয়েছে। এ দিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ভ্রাম্যমাণ আদালত ও মান নিয়ন্ত্রক সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রতিটি ফল একটি নির্দিষ্ট সময়ে পাকে। এর আগে তা কেমিক্যাল বা অন্য উপায়ে পাকানো হলে স্বাদ ও গন্ধ তো পাওয়াই যায় না, উল্টো ক্ষতির কারণ হয়। কার্বাইড দিয়ে ফল পাকানো বন্ধ করতে হবে। তবে সঠিক মাত্রায় ইথরেল দিয়ে ফল পাকানো যেতে পারে। ইথরেল ব্যবহারে নিয়ম মানা হচ্ছে না। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মিয়ার উদ্দিন ভোরের কাগজকে বলেন, ফলে কার্বাইড ব্যবহার সরকারিভাবে নিষিদ্ধ। আমরা এভাবে ফল পাকাতে সবাইকে নিরুৎসাহিত করি। প্রকৃতপক্ষে কার্বাইড একটি এসিটিলিন গ্যাস। ওই গ্যাসই ফল পাকাতে সহায়তা করে, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তিনি আরো বলেন, ফল পাকানোর জন্য ইথোফেনও ব্যবহার করা হয়। এটিকে ইথরেল বা ইথরিলিন নামেও ডাকা হয়। আমাদের এক গবেষণায় দেখা গেছে, আম পাকানোর ক্ষেত্রে ৫০০-৭৫০ পিপিএম ইথরেল ব্যবহার করা যেতে পারে। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় আম পাকানো হলে কিছু কিছু করে পাকে। আর সঠিক মাত্রায় ইথোফেন ব্যবহারে সুষমভাবে সব আম একত্রে পাকানো সম্ভব হয়। ইথরেল দিয়ে আম পাকানোর পরে মেক্সিমাম রেসিডিউয়ের (খাওয়ার সময় বা পাকার পর কি পরিমাণ ইথরেল রয়ে গেল) বিষয়টিও আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি। আমরা আমের শরীরে ১ পিপিএমের বেশি ইথরেল পাইনি, যা মানব শরীরের জন্য ক্ষতিকারক। কলার ক্ষেত্রে ৭৫০-১০০০ ইথরেল ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে দুঃখের বিষয়, আমাদের দেশের উৎপাদনকারী থেকে বিপণনকারীর এ বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা নেই। তারা নিষিদ্ধ কার্বাইডের ব্যবহার করছে। তিনি আরো বলেন, লিচু ও আনারস এমন একটি ফল, যা গাছেই পাকাতে হয়। তাই চাইলেও এতে কার্বাইড দেয়া যায় না। তবে গাছে পাকার পর ইথরেল দেয়া যায়। এটি পরিমাপ মতো দিলে ফলের রং সুন্দর হয়। আনারস গাছে বিভিন্ন সময় ফল আসে। বিভিন্ন সময় ফুল আসার জন্যই মূলত ইথরেলে উৎপত্তি হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, আনারস গাছের বয়স যখন ৯ মাস থেকে ১ বছর হবে ও এতে ৩৪-৪০টা পাতা থাকবে তখন গাছে ২০-২৫ এমএল ইথরেল ব্যবহার করা যাবে। এর ফলে এক মাসের মধ্যেই ৯৫ শতাংশ গাছে এক সঙ্গে ফুল আসবে। কিন্তু চাষিরা অতি লাভের আশায় ইথরেল দেয়ার পর তাড়াতাড়ি আনারস বড় করতে অন্য রাসায়নিকও দেন। আবার পরিপক্ব হওয়ার আগেও ইথরেল দেন। ফলে আনারস মিষ্টি কম হয়। লিচুতেও পরিপক্ব হওয়ার আগে ইথরেল ব্যবহারের ফলে রং আসলেও স্বাদ হয় না। এ বিষয়ে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের মহাপরিচালক মোহাম্মদ মাহফুজুল হক ভোরের কাগজকে বলেন, রাসায়নিক দিয়ে ফল পাকানো রোধে সচেতনতার বিকল্প নেই। যিনি ফলে রাসায়নিক দিচ্ছেন তিনিও ফল খান। এ ছাড়াও আমাদের সমন্বয়হীনতার জন্যও কিছু ভুল হচ্ছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা অধিদপ্তরের উপপরিচালক রফিকুল ইসলাম ভুঁইয়া ভোরের কাগজকে বলেন, ফলে কেমিক্যালের ব্যবহারকে আমরা নিরুৎসাহিত করি। আমরা কৃষকদের প্রাকৃতিকভাবে ফল পাকানোর কৌশল শেখানোর চেষ্টা করি। তবে এরপরও এক ধরনের অসাধু ব্যক্তি বেশি লাভের আশায় ফলে কেমিক্যাল দিচ্ছে। যেমন কলা কখনো এক সঙ্গে পাকে না। বাজারে আমরা এত পাকা কলা দেখি, যার অধিকাংশই নিষিদ্ধ কার্বাইড দিয়ে পাকানো হয়। কেমিক্যাল না দিয়ে প্রাকৃতিকভাবেও আম পাকাতে পারি। এ ক্ষেত্রে একটি শিশু যে পরিমাণ গরম থাকলে পানিতে হাত ডুবিয়ে রাখতে পারবে সেই উষ্ণতায় আম ১০ মিনিটের বেশি চুবিয়ে রাখতে হবে। এরপর তা বাতাসে শুকিয়ে নিতে হবে। পরে এ আম খড়ে রেখে দিলে সময় হলে নিজেই পেকে যাবে। তিনি বলেন, প্রত্যেক জেলায় জন্মানো আমের জাতগুলোর পরিপক্বতার সময় এক নয়। গুণগতমান নিশ্চিত, বিষমুক্ত ও স্বাস্থ্যসম্মত আম বাজারজাতকরণের লক্ষ্যে বিভিন্ন জেলায় আম সংগ্রহের সময় ভিন্ন হয়। সাতক্ষীরা-খুলনা-খাগড়াছড়ি এলাকায় আম পরিপক্ব হওয়ার সময় : গোবিন্দ ও গোপাল ভোগ ১০ মে, হিমসাগর ও খিরসাপাত ২০ মে, ল্যাংড়া ও বোম্বাই-বাড়ি আম এবং ২ (ল²ণ ভোগ) ২৮ মে, ফজলি ১২ জুন, বারি আম ৩ ও ৮ (রাঙ্গুয়াই) ১৫ জুন। যশোর-মেহেরপুর-ঝিনাইদহ-দর্শনা-চুয়াডাঙ্গা-কুষ্টিয়া এলাকায় গোবিন্দ ও গোপাল ভোগ ১২ মে, হিমসাগর ও খিরসাপাত ২৫ মে, ল্যাংড়া ও বোম্বাই-বাড়ি আম এবং ২ (ল²ণ ভোগ) ৩ জুন, ফজলি ১৫ জুন, বারি আম ৩ ও ৮ (রাঙ্গুয়াই) ১৮ জুন পরিপক্ব হয়। পাবনা-নাটোর-সিরাজগঞ্জ-টাঙ্গাইল-নওগাঁ-রাজশাহী এলাকার গোবিন্দ ও গোপাল ভোগ ২৫ মে, হিমসাগর ও খিরসাপাত ৩০ মে, ল্যংড়া ও বোম্বাই-বাড়ি আম এবং ২ (ল²ণ ভোগ) ৭ জুন, ফজলি ১৭ জুন, বারি আম ৩ ও ৮ (রাঙ্গুয়াই) ২২ জুন, আশি^না ১০ জুলাই পরিপক্ব হবে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ (পোরশা-সাপাহার) এলাকায় আম পরিপক্ব হওয়ার সময় : গোবিন্দ ও গোপাল ভোগ ২৭ মে, হিমসাগর ও খিরসাপাত ৪ জুন, ল্যাংড়া ও বোম্বাই-বাড়ি আম এবং ২ (ল²ণ ভোগ) ১২ জুন, ফজলি ২০ জুন, বারি আম ৩ ও ৮ (রাঙ্গুয়াই) ২৫ জুন এবং আশি^না ১৫ জুলাই। রংপুর-দিনাজপুর-ঠাকুরগাঁ-পঞ্চগড় এলাকায় আম পরিপক্ব হওয়ার সময় : গোবিন্দ ও গোপাল ভোগ ২৯ মে, হিমসাগর ও খিরসাপাত ৭ জুন, ল্যাংড়া ও বোম্বাই-বাড়ি আম এবং ২ (ল²ণ ভোগ) ১৪ জুন, ফজলি ২২ জুন, বারি আম ৩ ও ৮ (রাঙ্গুয়াই) ২৭ জুন, হাড়িভাঙ্গা ১৫ জুন ও আশি^না ২০ জুলাই। র‌্যাব সদর দপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বলেন, এখন বাজারে হলুদ রংয়ের পাকা আম পাওয়া যাচ্ছে। তবে এ সময় আমতো এভাবে পাকার কথা নয়। বিভিন্ন সময় আম পাকে। সেই অনুযায়ী ২৩ মের আগে আড়তে আম না তোলার পরামর্শ দিয়েছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App