×

বিনোদন

টুরিস্ট ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিট জটিলতা ভারত-বাংলাদেশ শুটিং

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ মে ২০১৯, ০২:৫১ পিএম

টুরিস্ট ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিট জটিলতা ভারত-বাংলাদেশ শুটিং

ফেরদৌসের এক কাণ্ডে বাংলাদেশি শিল্পীদের ভারতে কাজ করার পরিবেশ বিরূপ হয়ে উঠেছে

টুরিস্ট ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিট জটিলতা ভারত-বাংলাদেশ শুটিং

প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, ‘অনভিপ্রেত সামাজিক ও রাজনৈতিক কারণে’ আরিফিন শুভর সঙ্গে তারা কাজ করতে পারছে না

গত মাসে চিত্রনায়ক ফেরদৌস গিয়েছিলেন ভারতে। শুটিংয়ে কিংবা বেড়াতে হরহামেশাই তিনি যান দেশটিতে। প্রতিবার ভালোয় ভালোয় ফিরে এলেও শেষবারের সফর তার জন্য সুখকর হয়নি। ভারতের জাতীয় নির্বাচনে নাক গলানোর অভিযোগ নিয়ে ফিরে আসতে হয় তাকে। তৃণমূল দলের এক প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিয়ে টালিগঞ্জে তার দুই দশকের ক্যারিয়ার এখন হুমকির মুখে। ভারত সরকার তার ভিসা বাতিল করে তাকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে। দুই দেশে তার ভাবমূর্তি প্রচণ্ডভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে। এ ঘটনার পর বাংলাদেশি শিল্পীদের ভারতে গিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা আসতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়। আশঙ্কাকে সত্যি প্রমাণ করে দিয়ে গেল সপ্তাহে আরিফিন শুভ অভিনীত ভারতীয় একটি ছবি থেকে তাকে বাদ দেয়া হয়। কলকাতার ‘অভিযাত্রিক’ সিনেমায় অপু চরিত্রে অভিনয় করার কথা ছিল আরিফিন শুভর। সবকিছু ঠিক থাকলে ১৫ মে ছবিটির শুটিংয়ে অংশ নিতেন শুভ। ছবির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, ‘অনভিপ্রেত সামাজিক ও রাজনৈতিক কারণে’ আরিফিন শুভর সঙ্গে তারা কাজ করতে পারছে না। তবে এই সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে শুভর সঙ্গে আলোচনা করেছে প্রযোজনা সংস্থাটি। ছবির পরিচালক শুভজিৎ জানিয়েছেন, তারা শুভর ভিসা করানোর জন্য দিল্লি পর্যন্ত দৌড়াদৌড়ি করেছেন। কিন্তু তাতে কোনো ফল আসেনি। আপাতত বাংলাদেশি শিল্পীদের ওয়ার্ক পারমিট দেবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। যদিও এই সিদ্ধান্ত ‘আনঅফিসিয়াল’। ফেরদৌসের এক কাণ্ডে বাংলাদেশি শিল্পীদের ভারতে কাজ করার পরিবেশ বিরূপ হয়ে উঠেছে। কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের শিল্পীদের চাহিদা বাড়ছিল ভারতে। সেখানকার অনেক নির্মাতাই এদেশে টিভি ও চিত্রশিল্পীদের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠছিলেন। নির্মাতাদের কাছে এ দেশি শিল্পীদের চাহিদা আগের মতো থাকলেও সাংস্কৃতিক জগতে রাজনীতির হাওয়া ঢুকে পড়ায় কলুষিত হচ্ছে সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান। এখন কথা উঠেছে- বাংলাদেশের ক’জন শিল্পী ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে ভারতে যান সেই প্রসঙ্গে। শিল্পীদের অনেকেই টুরিস্ট ভিসা নিয়ে ভারতে গিয়ে কলকাতার নাটক-সিনেমায় কাজ করে আসছেন। ফেরদৌসও গিয়েছিলেন টুরিস্ট ভিসাতেই, সেরে এসেছেন নির্বাচনী প্রচার। এভাবেই অনেকে টুরিস্ট ভিসায় ভ্রমণের কথা বলে দিব্যি শুটিং করে আসছেন। যার প্রমাণ পাওয়া যায়, অভিনেতা ইমতু রাতিশের এক সাক্ষাৎকারে ‘সরল স্বীকারোক্তি’তে। ইমতু বলেন বলেন, ‘বিদেশের শিল্পীরা আমাদের দেশে কাজ করতে আসলে ওয়ার্ক পারমিটের জন্য তাগিদ দেয়া হয়। ভালো কথা! কই, আমরা যখন শুটিং করতে দেশের বাইরে যাই, তখন তো ওয়ার্ক পারমিট নেই না। আমরা টুরিস্ট ভিসায় গিয়ে শুটিং করে আসি। গত রোজায়ও কলকাতাতে এই ‘ফোন এক্স’র (ওয়েব সিরিজ) শুটিং করেছি ১০ দিন। তখনো ওয়ার্ক পারমিট নেইনি’। ইমতু আরো বলেন, ‘আমি ছাড়াও আমাদের বেশিরভাগ শিল্পী অনুমতি না নিয়ে বিদেশে শুটিং করেন। তখন বাইরের দেশ থেকে তো কোনো বাধা আসে না। তাহলে বাইরের শিল্পীরা আমাদের দেশে এলে এত সমস্যা কেন? এরপর আমরা কি দেশের বাইরে গিয়ে কাজ করতে পারব?’ [caption id="attachment_138602" align="aligncenter" width="700"] প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, ‘অনভিপ্রেত সামাজিক ও রাজনৈতিক কারণে’ আরিফিন শুভর সঙ্গে তারা কাজ করতে পারছে না[/caption] ইমতুর আশঙ্কা শেষ পর্যন্ত সত্যি হয়েছে। টুরিস্ট ভিসায় গিয়ে অভিনয় করার ব্যাপারে সতর্ক হয়েছে ভারত। অনন্য মামুনের মতো নির্মাতারা (‘ফোন-এক্স’ সিরিজের নির্দেশক) যারা এতদিন অবাধে ভারতে গিয়ে টুরিস্ট ভিসায় কাজ করে এসেছেন, তারা বিপাকে পড়েছেন। অবশ্য শুধু যে বাংলাদেশি শিল্পীরাই ওয়ার্ক পারমিট ছাড়া ভারতে গিয়ে কাজ করেন তা নয়, ভারতীয় শিল্পীরাও ওয়ার্ক পারমিটের থোরাই কেয়ার করে বাংলাদেশে এসে কাজ করছেন। ২০১৭ সালে বিনা অনুমতিতে কাজ করতে এসে তোপের মুখে পড়েছিলেন বেশ কয়েকজন ভারতীয় অভিনেতা-অভিনেত্রী। কালকাতার অভিনেতা ও পরিচালক পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় ফেলুদা সিরিজ বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত একটি সিরিজে ফেলুদা চরিত্রে অভিনয় করছিলেন। কিন্তু নিয়ম না ওমনে বাংলাদেশি নাটকে অভিনয়ের অভিযোগ করে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি বা জিডি করেন পরিচালক ও অভিনেতা গাজী রাকায়েত। তার জিডিতে উল্লেখ করা হয়- পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় ও ক্যান্ডি প্রডাকশন হাউজের নাম। গাজী রাকায়েত বলেন, ‘এখানে যা হচ্ছে যে বিদেশি শিল্পী কলাকুশলীরা আসছেন টুরিস্ট ভিসায়। এখানে পরমব্রতের বিরুদ্ধে জিডি নয়। এখানে বাংলাদেশের যে বিশৃঙ্খলা ইন্ডাস্ট্রিতে চলেছে তার বিরুদ্ধে এবং একটা কেইস হিসেবে ক্যান্ডি প্রডাকশন যারা সিরিজটা করছে তাদের কথা উল্লেখ করে জিডি করেছি। যাতে ভবিষ্যতে এমন অবৈধ শুটিং যেন বন্ধ করা হয়। যেহেতু পরমব্রত ওই প্রডাকশনের সঙ্গে জড়িত সেজন্য তার নাম আসছে। আমরা চাই এখানে যারাই কাজ করতে আসবে সেটা তারা দুদেশের নিয়ম মেনে করবে।’ শুধু নাটকই নয়, প্রায়শই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ঢাকায় বিশেষ করে ভারতীয় শিল্পীদের নিয়ে নানা ধরনের অনুষ্ঠান করতে দেখা যায়। বলিউডের অভিনেতা শাহরুখ খানসহ নামিদামি অভিনেতা শিল্পীরাও ঢাকায় এসেছেন কনসার্টসহ নানা অনুষ্ঠানে। বাংলাদেশের প্রবীণ অভিনেতা ও পরিচালক মামুনুর রশীদ বলেছেন, এখন শুধু একটি বা দুটি অনুষ্ঠান নয় বরং বাংলাদেশি সিনেমা নাটকে তাদের অংশগ্রহণের প্রবণতা অনেক বেড়েছে কিন্তু এদের বেশিরভাগই নিয়ম মেনে কাজ করছেন না। তার মতে এতে করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বাংলাদেশি শিল্পীরা। তিনি বলেন, ‘এখন নাটকের ক্ষেত্রেও’ যৌথ প্রযোজনা শুরু হয়েছে যথাযথ অনুমোদন ছাড়া। যেভাবে আগাচ্ছে তাতে আমাদের ইন্ডাস্ট্রি শূন্য হয়ে যাবে। এখানে কেউ কাজ করতে চাইলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে ওয়ার্ক পারমিট নিতে হবে। পরিচালক ও অভিনেতা হলে সংশ্লিষ্ট সংগঠনের সদস্য হতে হবে।’ মামুনুর রশীদ ও গাজী রাকায়েত দুজনেই অভিযোগ করেন কিছু প্রতিষ্ঠান বিদেশি শিল্পীদের জন্য কোনো ধরনের অনুমতিই নেয় না। তারা মনে করেন, বিদেশি শিল্পীদের পর্যটন ভিসায় বাংলাদেশে এসে যথাযথ অনুমোদন না নিয়ে নাটক সিনেমায় অংশগ্রহণ ঠেকাতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আরো সক্রিয় হওয়া উচিত। পরমব্রত ঘটনার রেশ এদেশে ছিল অনেকদিন। দু’তিনটি যৌথ প্রযোজনার ছবির বিরুদ্ধেও বিনা অনুমতিতে শুটিং করার অভিয়োগ ওঠে। যার মধ্যে অভিনয়শিল্পী, নৃত্যপরিচালক, মারপিট পরিচালকের ওয়ার্ক পারমিট ছাড়া কাজের অভিযোগ ছিল। বাংলাদেশে ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে হৈচৈ হলেও এতদিন ভারতের দিক থেকে কোনো ঝামেলা ছিল না। ফেরদৌসের ঘটনার পর এখন ওপারে কাজ করা নিয়ে বাংলাদেশের শোবিজের অনেকের দুশ্চিন্তা বেড়েছে। ফেরদৌস ছিলেন প্রথম শিকার। তার নির্মাণাধীন ছবিগুলো আটকে গেছে। তারপর শিকার হলেন আরিফিন শুভ। এরপর বাংলাদেশি শিল্পীদের ভারতে গিয়ে কাজ করা ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠবে বলেই সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। মেলা প্রতিবেদক

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App