×

খেলা

ইতিহাস গড়ল টাইগাররা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ মে ২০১৯, ১০:৪৩ এএম

ইতিহাস গড়ল টাইগাররা

সংক্ষিপ্ত স্কোর উইন্ডিজ : ১৫২/১ (২৪ ওভার) বাংলাদেশ : ২১৩/৫ (২২.৫) ফলাফল : বাংলাদেশ ৫ উইকেটে জয়ী ম্যান অব দ্য ম্যাচ : মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত

টাইগারদের ব্যাটিংয়ের শুরুটা ছিল আশা জাগানিয়া। তামিম ১৩ বলে ১৮ রান করে সাজঘরে ফিরলে বড় হোঁচট খায় বাংলাদেশ দল। কিন্তু ৪১ বলে ৬৬ রান তুলে শক্ত ভিত গড়ে দেন মারকুটে ওপেনার সৌম্য সরকার। এরপর রানের গতি প্রত্যাশিত থাকলেও উইকেট পড়তে থাকে নিয়মিত বিরতিতে। আর ম্যাচের ভাগ্যও দুলতে থাকে পেন্ডুলামের মতো। একবার এদিকে হেলে তো আরেক বার ওদিকে। তবে শেষ ভালো যার সব ভালো তার- এ আপ্তবাক্যকে আরেকবার সত্য প্রমান করে টাইগারদের মাথায় চ্যাম্পিয়নের মুকুট তুলে দেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। নিজের নামের পাশেও লিখিয়ে নেন ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ স্বীকৃতি। তবে বৃষ্টির বদান্যতায় নয়; দাপুটে জয়ে উইন্ডিজকে উড়িয়ে ক্রিদেশীয় আসরে প্রথমবারের মতো শিরোপা জেতে মাশরাফিবাহিনী। সৃষ্টি হয় বিজয়ের নতুন ইতিহাস। এমন একটা ট্র্রফির জন্য কত অপেক্ষা টাইগারদের। এই অপেক্ষা দীর্ঘ দিনের। ১৯৮৬ সালের ৩১ মার্চ এশিয়া কাপ টুর্নামেন্টের মধ্য দিয়ে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার স্বাদ পায় টাইগাররা। এরপর কেটে গেছে ৩৩টি বছর। এই দীর্ঘ সময়ে বাংলাদেশ খেলেছে ৫টি বিশ^কাপসহ আরো অনেক টুর্নামেন্ট। ত্রিদেশীয় সিরিজও নেহায়েত কম খেলেনি। তবে ত্রিদেশীয় কিংবা অন্য কোনো টুনামেন্টের শিরোপাটা অধরাই থেকে যায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের কাছে। অবশেষে ধরা দিল সেই সোনার হরিণ। আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে গতকাল শুক্রবার ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে উইন্ডিজের মুখোমুখি হয়েছিল মাশরাফি বিন মুর্তজার দল। ম্যাচে ক্যারিবীয়দের ৫ উইকেটে হারিয়ে শিরোপা জেতে বাংলাদেশ। ২৪ ওভারে উইন্ডিজ সংগ্রহ করে ১৫২ রান। বৃষ্টির কারণে খেলা বন্ধ হওয়ায় বাড়তি ৫৮ রান যোগ হয় জেসন হোল্ডারদের ভাগ্যে। শিরোপা জিততে টাইগারদের সামনে ২১০ রানের বিশাল টার্গেট। কিন্তু কঠিন লক্ষ্যকে মামুলি বানিয়ে ফেলেন সৌম্য সরকার ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। মাত্র ২২ বলে ৫ ছক্কা ও ২ চারে হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করেন মোসাদ্দেক। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে তৃতীয় দ্রুততম ফিফটি। সপ্তমবারের চেষ্টায় টাইগারদের শিরোপা জয়ে ভূমিকা রাখায় ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতেন এ মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। টাইগারদের শিরোপা জয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক সভাপতি ও ইন্টারপার্লামেন্টারি ইউনিয়নের সম্মানীয় সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী এমপি, বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন এমপি, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এমপি। ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফি জিতেছিল বাংলাদেশ, তবে সেটা আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট ছিল না। গত কয়েক বছরে ক্রিকেটে বহু সফলতা পেয়েছে টাইগাররা, জিতেছে অনেকগুলো দ্বিপাক্ষিক সিরিজের শিরোপা। তবে আক্ষেপ ছিল একটা জায়গায়। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি মিলে গতকালের আগে বাংলাদেশ ৬টি ফাইনাল খেলে। এরমধ্যে একবারও শিরোপা জিততে পারেনি। এই ৬টি ফাইনালের মধ্যে পাঁচবারই টাইগারদের নেতৃত্বে ছিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। অবশেষে ক্যাপ্টেন ফ্যান্টাস্টিকের নেতৃত্বেই নতুন ইতিহাস লিখল বাংলাদেশ দল। টাইগাররা যতটা দাপটের সঙ্গে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে উঠেছিল, এতে সবার বিশ্বাস ছিল শিরোপা নিধার্রণী ম্যাচের ব্যর্থতা এবার কাটাতে পারবেন মাশরাফি-তামিমরা। সেই প্রত্যাশাই পূর্ণ হলো। আয়ারল্যান্ডের রাজধানী ডাবলিনের আকাশ গতকাল সকাল থেকেই ছিল মেঘে ঢাকা। সে সঙ্গে ছিল কনকনে ঠান্ডা বাতাস। তাই ছিল বৃষ্টির শঙ্কাও। এরমধ্যেই টস করতে নামেন টাইগার দলপতি মাশরাফি বিন মুর্তজা ও উইন্ডিজ অধিনায়ক জেসন হোল্ডার। ত্রিদেশীয় সিরিজে প্রথমবারের মতো টস জিতে আগে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন ক্যাপ্টেন ম্যাশ। কারণ হিসেবে তিনি জানান, মেঘলা আকাশ ও আবহাওয়ার পূর্বাভাসের কথা ভেবেই আগে বোলিং বেছে নেয়া হয়েছে। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে লিগ পর্বের শেষ ম্যাচে পিঠের পেশিতে চোট পেয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। তার জন্য শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত অপেক্ষায় ছিল টাইগার টিম ম্যানেজমেন্ট। তবে শেষ পর্যন্ত দেশসেরা অলরাউন্ডারকে ছাড়াই উইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচটিতে খেলতে নামতে হয় মাশরাফি বিন মুর্তজার দলকে। আগের ম্যাচের একাদশে চার পরিবর্তন নিয়েই এদিন মাঠে নামে টাইগাররা। একাদশে ফেরেন সৌম্য সরকার, মেহেদী হাসান মিরাজ, মোহাম্মদ মিঠুন ও মোস্তাফিজুর রহমান। ডাবলিনের দ্য ভিলেজ স্টেডিয়ামে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে টাইগার বোলারদের তুলোধুনো করতে শুরু করেন দুই উইন্ডিজ ওপেনার শাই হোপ ও সুনীল আমব্রিস। মাত্র ১০ ওভারের মধ্যেই দলের স্কোরে ৫০ রান যোগ করেন তারা। আর অষ্টাদশ ওভার শেষে উইন্ডিজের স্কোর দাঁড়ায় ১০৫ রান। ২১তম ওভারে বল করতে আসেন টাইগার স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ। প্রথম বলেই লং অন দিয়ে ছক্কা হাঁকান শাই হোপ। এরপর বৃষ্টি শুরু হলে খেলা স্থগিত ঘোষণা করেন দুই আম্পায়ার। উইন্ডিজের সংগ্রহ তখন বিনা উইকেটে ১৩১ রান। শাই হোপ ৬৮ ও সুনীল আমব্রিস ৫৯ রানে ব্যাট করছিলেন। পরবর্তীতে ম্যাচ আবার মাঠে গড়ায়। তবে ম্যাচের ব্যপ্তি কমিয়ে ২৪ ওভারে নামিয়ে আনা হয়। আবার ব্যাট করতে নেমে নিজেদের ইনিংসের শেষ ২৩ বলে ২১ রান করে ক্যারিবীয়রা। সব মিলিয়ে ২৪ ওভারে ১ উইকেটে ১৫২ রান সংগ্রহ করে উইন্ডিজ। আর ডার্কওয়ার্থ লুইস পদ্বতিতে ২১০ রানের জয়ের লক্ষ্য ছুড়ে দেয়া হয় বাংলাদেশের সামনে। জবাব দিতে নেমে মাত্র ৫ ওভারেই দলের স্কোরে ৫০ রান যোগ করেন দুই টাইগার ওপেনার তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার। ১৩ বলে ২ চারে ১৮ রান করে আউট হন তামিম। একই ওভারে বিদায় নেন সাব্বির রহমানও। বাংলাদেশের সংগ্রহ তখন ৬০ রান। এরপর মুশফিকের সঙ্গে ৪৬ রানের জুটি গড়েন সৌম্য। মারকুটে এই ওপেনার আউট হন ৪১ বলে ৯ চার ও ৩ ছক্কায় ৬৬ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলে। সৌম্যর বিদায়ের পর দলের স্কোরে আরো ২৫ রান যোগ হতে মুশফিকও ফেরেন সাজঘরে। ২২ বলে ২ চার ও ২ ছক্কায় ৩৬ রান করেন তিনি। এক ওভার পরই মোহাম্মদ মিঠুনও সাজঘরের পথ ধরলে চাপে পড়ে টাইগাররা। স্কোর তখন ৫ উইকেটে ১৪৫ রান। এদিন যেন নায়ক হওয়ার জন্যই মাঠে নেমেছিলেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। দলের বিপর্যয়ে ব্যাট হাতে জ¦লে উঠে তিনি প্রমাণ করেন কেন তাকে বিশ^কাপের একাদশে রাখা হয়েছে। মোসাদ্দেক এদিন খেলেন ২৪ বলে ২ চার ও ৫ ছক্কায় ৫২ রনের নায়কোচিত এক ইনিংস। ১৯ রানের দায়িত্বশীল এক ইনিংস খেলে তাকে যোগ্য সঙ্গ দেন ‘সাইলেন্ট কিলার’ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ৭ বল ও ৫ উইকেট হাতে রেখেই জয় নিশ্চিত করে টাইগাররা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App