×

বিনোদন

অফিসিয়ালি একমাত্র আমন্ত্রিত ‘মাটির ময়না’

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ মে ২০১৯, ০৩:৩৮ পিএম

অফিসিয়ালি একমাত্র আমন্ত্রিত ‘মাটির ময়না’
ফ্রান্সের ভূমধ্যসাগরের কোল ঘেঁষা কান শহরে গত মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে বিশ্ব চলচ্চিত্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎসব ‘৭২তম কান চলচ্চিত্র উৎসব’। বিশ্বের খ্যাতিমান চলচ্চিত্র নির্মাতা, শিল্পী-কলাকুশলীরা এরই মধ্যে অবস্থান করছেন কান শহরে। বাংলাদেশেরও একাধিক নির্মাতা, শিল্পী, সাংবাদিক সেখানে রয়েছেন। বিগত কয়েক বছর ধরেই কান উৎসবের মূল আসরে বাংলাদেশের নাম উচ্চারিত না হলেও দেশের গণমাধ্যমে বেশ ফলাও করে সংবাদ প্রকাশ হয় ‘কান উৎসবে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশ’। তবে বিষয়টির সত্যতা নেই বলে জানা গেছে। কান চলচ্চিত্র উৎসবের ইতিহাসে তারেক মাসুদ পরিচালিত ‘মাটির ময়না’ সিনেমাটি ছাড়া আর কোনো চলচ্চিত্র অফিসিয়ালি আয়োজকদের কাছ থেকে আমন্ত্রণ পায়নি। তবে কান উৎসবের মার্শে দু ফিল্মে বাংলাদেশ থেকে একাধিক সিনেমা বিভিন্ন সময় অংশ নিয়েছে। মার্শে দু ফিল্ম কান উৎসবের মূল অফিসিয়াল সিলেকশনের বাইরে একটি পুরোপুরি বাণিজ্যিক বিভাগ। উৎসবের সময়ে আয়োজনের ভেন্যু ‘প্যালে ডে ফেস্টিভ্যাল’র নিচতলার জায়গাটায় নির্দিষ্ট ফি দিয়ে যে কেউ তাদের ছবি দেখাতে পারেন। প্রযোজনা সংস্থাগুলোর সুযোগ থাকে বুথ বা টেবিল ভাড়া নিয়ে নিজেদের ছবি প্রদর্শন করার। সেখানেই নিজেদের টাকা খরচ করে ছবি প্রদর্শন করে দেশের গণমাধ্যমে প্রেস রিলিজ পাঠিয়ে দেশীয় নির্মাতারা জানান, তাদের ছবি এবার কান উৎসবে যাচ্ছে। কান উৎসবে যাচ্ছে কথাটা যেমন সত্য, আবার কান উৎসবের অফিসিয়াল কোনো আমন্ত্রণে যাচ্ছে না এটাও সত্য। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মার্শে দু ফিল্মে বুথ ভাড়া নিয়ে যেখানে ছবি দেখানো হয় উৎসব চলাকালীন সেখানে দর্শক খুব একটা থাকে না। কানের মূল উৎসবেই এত বেশি ছবির প্রদর্শনী হয় যে কেউ ওই সব ছবি রেখে অন্য ছবি দেখার সময় পান না। ফলে মার্শে দু ফিল্মে ছবির প্রদর্শনীতে নিজেরাই ছবির দর্শক হয়ে দেখেন সেসব ছবি। আর দেশে এক ধরনের বাণিজ্যিক প্রচারণা করেন যে কান উৎসবে বাংলাদেশের ছবি দেখানো হচ্ছে। মার্শে দু ফিল্মে এর মধ্যে তৌকীর আহমেদ পরিচালিত ‘অজ্ঞাতনামা’, অমিতাভ রেজা পরিচালিত ‘আয়নাবাজি’ ছবিগুলো প্রদর্শিত হয়েছে। তবে কান উৎসবের মতো বিশাল আয়োজনে যাবার আকাক্সক্ষা তৈরিতে এবং সিনেমার বাণিজ্যিক বিপণনে এরকম উদ্যোগকে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা। ‘মাটির ময়না’ সিনেমার মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রথম অভিনেত্রী হিসেবে কান উৎসবের অফিসিয়াল আমন্ত্রণে অংশ নিয়েছিলেন রোকেয়া প্রাচী। তিনি বলেন, ‘এটা ছিল আমার জীবনের সেরা অভিজ্ঞতা। তারেক মাসুদ, ক্যাথরিন মাসুদ, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়সহ আমরা সেখানে অংশ নিয়েছিলাম। উৎসবের একটি বিভাগ আমাকে দিয়ে উদ্বোধন করানো হয়েছিল। এটা আমার অভিনয় জীবনের গৌরবময় অভিজ্ঞতা।’ সাম্প্রতিক সময়ে কান উৎসবে অংশ নেয়ার নামে বাংলাদেশে যে বিভ্রান্তি রয়েছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রোকেয়া প্রাচী বলেন, আমি যতদূর জানি, মাটির ময়না বাংলাদেশ থেকে একমাত্র ছবি যা কান উৎসবে আমন্ত্রণ পেয়ে অংশ নিয়েছিল। বাংলাদেশের প্রথম কোনো ছবি হিসেবে বাণিজ্যিকভাবে ইউরোপের ৪০টি প্রেক্ষাগৃহে একযোগে বাণিজ্যিকভাবে মুক্তি পেয়েছিল। এখন বাণিজ্যিকভাবে কিছু ছবির প্রদর্শনী সেখানে হচ্ছে। এটাকে আমি ইতিবাচকভাবেই দেখতে চাই। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের নির্মাতা, শিল্পীদের কান উৎসবে যাবার আকাক্সক্ষাটা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের ছবি একদিন সত্যি সত্যিই কান উৎসবের প্রতিযোগিতা বিভাগে জায়গা করে নেবে। তারেক মাসুদের মাটির ময়না যে গৌরব বয়ে এনেছিল, সেই গৌরবকেও নিশ্চয়ই ছাড়িয়ে যাবে অন্য কোনো নির্মাতার ছবি। আমরা অপেক্ষায় থাকলাম। উল্লেখ্য, মাটির ময়না চলচ্চিত্রে তারেক মাসুদ নিজেরই জীবনের গল্প বলেছেন। তার মাদ্রাসার জীবন, পরিবার এবং মুক্তিযুদ্ধকে তুলে ধরেছেন সেলুলয়েডের ফ্রেমে। এ ছবিটির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে আন্তর্জাতিকভাবে তুলে ধরেন তারেক মাসুদ। ২০০২ সালে প্রথম বাংলাদেশি চলচ্চিত্র হিসেবে কান চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃত হয় ছবিটি। ২০০৩ সালে ইউরোপের ৪০টি প্রেক্ষাগ্রহে ছবিটি বাণিজ্যিকভাবে মুক্তি দেয়া হয়। কিন্তু যে বছর ‘মাটির ময়না’ কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয় একই বছর বাংলাদেশ সরকার ছবিটিকে নিষিদ্ধ করে। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসে এটি কলঙ্ক হিসেবেই যুক্ত থাকবে। পরবর্তী সময়ে ছবিটির ওপর রাষ্ট্রীয় নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়। এরপর অনেক আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র হিসেবে অংশ নেয় ‘মাটির ময়না’। এ ছবিটির মধ্য দিয়েই ইউরোপে প্রথম বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের বাণিজ্যিক প্রদর্শনী শুরু হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App