×

জাতীয়

ঠিকাদারকে ১৮০ কোটি টাকা অবৈধ সুবিধা প্রদান

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ মে ২০১৯, ১২:৪৩ পিএম

ঠিকাদারকে ১৮০ কোটি টাকা অবৈধ সুবিধা প্রদান
দিনাজপুরের পার্বতীপুরে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে বিরোধ চরম আকার ধারণ করেছে। কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে চায়না। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মোবাইলফোন ট্র্যাকিংসহ চলাফেরার ওপর নজরদারি করা হচ্ছে। এ দিকে খনির প্রভাবশালী দুতিন জন কর্মকর্তার ছত্রছায়ায় গত জানুয়ারিতে প্রায় ৬০ লাখ টাকা চাঁদা আদায়ের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই এবার চুক্তির শর্ত লংঘন করার পরও খনির এমপিএমএন্ডপি চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এক্সএমসি-সিএমসি কনসোর্টিয়ামকে কয়েক দফায় প্রায় ১৮০ কোটি টাকার বিল দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দ্রুত এসব বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে খনিটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে সচেতন মহল। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিএমসিএল) প্রোডাকশন, মেইনটেন্যান্স এন্ড প্রভিশনিং সার্ভিসেস (এমপিএমএন্ডপি)-এর চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এক্সএমসি-সিএমসি কনসোর্টিয়াম ২০১৭ সালের ১০ আগস্ট দ্বিতীয় দফা ‘এমপিএমএন্ডপি-২০১১’ চুক্তি মেয়াদ শেষে রিটেনশন বাবদ প্রায় ১৩০ কোটি টাকা এবং যন্ত্রপাতি ক্রয় বাবদ প্রায় ৫০ কোটি টাকা সবমিলে প্রায় ১৮০ কোটি টাকার বিল দাখিল করে। ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী প্রতি মাসের উৎপাদন বিলের ১০ শতাংশ রিটেনশন বাবদ কর্তন করে রাখা হতো। খনি কর্তৃপক্ষ এমপিএমএন্ডপি-২০১১ চুক্তিটি সমাপ্ত করার লক্ষ্যে বিলটি অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য জিএসবির (জিওলজিক্যাল সার্ভে অব বাংলাদেশ) সাবেক মহাপরিচালক ও বিসিএমসিএল বোর্ডের পরিচালক ড. মো. নিহাল উদ্দিনকে দায়িত্ব দেয়। ২০১৮ সালের ১১ জুলাই অনুষ্ঠিত ২৮১নং বোর্ড সভায় এ দায়িত্ব দেয়া হয়। সূত্র জানায়, এক্সএমসি-সিএমসি কনসোর্টিয়াম চুক্তির শর্ত অনুযায়ী দুটি ৮ টন ক্ষমতার স্কিপ পরিবর্তন করে ৯ টন ক্ষমতার স্কিপ না বসিয়ে নতুন দুটি ৮ টন ক্ষমতার স্কিপ বসায়। যার বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ১ মিলিয়ন টন। অথচ এই স্কিপ দিয়ে ১.২২ মিলিয়ন টন কয়লা উৎপাদন দেখানো হয়েছে। চুক্তিবহিভর্‚ত হওয়ায় ডিএআরআর (রোডওয়ে উন্নয়নকালীন) থেকে আহরিত ২২ হাজার ৫০৮ টন কয়লার বিল প্রযোজ্য নয়। এ ছাড়া বিসিএমসিএল-এর পূর্বানুমোদন ছাড়াই চুক্তিমূল্যের অতিরিক্ত বৈদেশিক মুদ্রায় ১৪ লাখ ৮৫ হাজার মার্কিন ডলার এবং দেশীয় মুদ্রায় ২ কোটি ১ লাখ ২৬ হাজার টাকা খরচ করে এক্সএমসি-সিএমসি কনসোর্টিয়াম বিল দাখিল করে। এসব বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে ড. মো. নিহাল উদ্দিন কমিশন গত ৯ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনটি আমলে নিয়ে বিসিএমসিএল পরিচালনা পর্ষদের পরপর ৪টি সভায় এক্সএমসি-সিএমসি কনসোর্টিয়ামের বিল অনুমোদনে আপত্তি জানানো হয়। কিন্তু পরে অদৃশ্য খুঁটির জোরে বিলটি পাস হয়। সূত্র মতে, গত বছর আগস্টে বিসিএমসিএল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদে যোগদান করেই একজন ম্যানেজার ও একজন জেনারেল ম্যানেজারের প্ররোচনায় নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন ফজলুর রহমান। প্রফিট বোনাস আটকে রেখে খনির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে মাথাপিছু ৪০ হাজার টাকা করে প্রায় ৬০ লাখ টাকা আদায় করেন। এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন গত ২২ জানুয়ারি ভোরের কাগজে প্রকাশিত হয়। পরবর্তী সময়ে অন্যান্য গণমাধ্যমেও তা প্রকাশিত হয়। ভোরের কাগজের রিপোর্টটি আমলে নিয়ে গত ৩০ জানুয়ারি পেট্রোবাংলার মহাব্যবস্থাপক (মাইন অপারেশন) জোবায়েদ আলীর নেতৃত্বে এক সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু এমডি ফজলুর রহমান তদন্ত কমিটির প্রধান জোবায়েদ আলীকে সঙ্গে নিয়ে এরই মধ্যে চীন ঘুরে এসেছেন। এতে তদন্ত কমিটির কার্যক্রম প্রশ্নের মুখে পড়েছে। এছাড়া ফজলুর রহমান এখনো বিসিএমসিএল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদে থাকায় তদন্ত কমিটির কাছে ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। সূত্র মতে, ৬০ লাখ টাকা চাঁদা আদায়ের ঘটনা গণমাধ্যমে ফাঁস হলে এমডি ক্ষুব্ধ হন এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিনা কারণে বদলি ও গণহারে শোকজ করেন। এরই মধ্যে অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে শোকজ করা হয়েছে। গণমাধ্যমকে ভবিষ্যতে আর কোনো তথ্য না দিতে তিনি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চিঠিও দেন। এত কিছুর পরও পেট্রোবাংলা ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি। এর কারণ খনির দুই কর্মকর্তা জেনারেল ম্যানেজার (প্রশাসন) সাইফুল ইসলাম দিপু এবং ম্যানেজার (মাইনিং) ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন। এর মধ্যে মোশাররফ হোসেন খনির প্রায় ২০০ কোটি টাকার কয়লা লোপাট মামলার অন্যতম আসামি। সাইফুল ইসলাম দিপু পেট্রোবাংলার এক প্রভাবশালী পরিচালকের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তিনি এ কোম্পানির চারটি গাড়ি ব্যবহার করছেন। আর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে নানা পরামর্শ দিয়ে ম্যানেজার মোশাররফও অবৈধভাবে খনির পাজেরোসহ একাধিক গাড়ি ব্যবহার ও নানা অনৈতিক সুবিধা নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিসিএমসিএল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুর রহমানের মোবাইল ফোনে কয়েক দফা যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় এ বিষয়ে তার মতামত নেয়া সম্ভব হয়নি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App