×

ফিচার

মায়ের ভালোবাসা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ মে ২০১৯, ০৩:০৬ পিএম

মায়ের ভালোবাসা
মায়ের ভালোবাসা
‘মা’ ছোট্ট এই শব্দটার মধ্যে লুকিয়ে আছে অকৃপণ ও নিঃস্বার্থ ভালোবাসার অসীম ও আশ্চর্য রকমের এক ক্ষমতা। সন্তানের জন্য মায়ের আত্মত্যাগের কথা কে না জানে? এ জগতে একমাত্র মা-ই সন্তানের জন্য নিজের জীবন বাজি রাখতে পারেন। কিন্তু বড় হতে হতে অনেক সময় আমরা ভুলে যেতে থাকি মায়ের নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগ। চীনের পৌরাণিক একটা গল্প আছে। গল্পটা এমন ‘এক প্রেমিকা তার প্রেমিককে পরীক্ষা করার জন্য বলল, তোমার ভালোবাসার পরীক্ষা নিতে চাই আমি! প্রেমিক বলল, কী পরীক্ষা নেবে? সব পরীক্ষার জন্য আমি প্রস্তুত। প্রেমিকা বলল, তোমার মায়ের হৃৎপিণ্ডটা নিয়ে আসো...! প্রেমে অন্ধ ছেলেটি ছুটল মায়ের কাছে! মাকে হত্যা করে তার হৃৎপিণ্ড নিয়ে ছুটল প্রেমিকার কাছে, ভালোবাসার পরীক্ষায় পাস করতে...! পথে হঠাৎ আছড়ে পড়ল ছেলেটি। হাত থেকে ফসকে গেল মায়ের তাজা হৃৎপিণ্ডটা! ছেলেটি খুঁজে পেয়ে মায়ের হৃৎপিণ্ড হাতে নিল। তখনো ধক ধক করছে মায়ের হৃৎপিণ্ড। হাতে নিতেই তা বলে উঠল, ব্যথা পেলি খোকা?’ এটি নিছকই গল্প। কিন্তু বাস্তব জীবনেও সন্তানের প্রতি মায়ের তীব্র ভালোবাসার নিদর্শনও আমরা দেখি। ঘটনাটি ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ায়। বাড়িতে আগুন লাগার পর মাকে উদ্ধার করেছিলেন উদ্ধারকর্মীরা। কিন্তু বাড়ির ভেতর তখনো ছোট ছেলেটি। নিরাপত্তাকর্মী, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের বাধা ডিঙ্গিয়ে ছেলেকে বাঁচাতে আগুনে ঝাঁপ দিয়েছেন এক মা। আগুনের ফুলকি ও ধোঁয়ার কারণে তারা বাইরে বের হতে পারেননি। ছেলের সঙ্গেই অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেলেন সেই মা। এই ঘটনাটি ঘটেছে চলতি বছরই। লঞ্চে করে ঢাকা থেকে চাঁদপুরের যাওয়ার পথে চলন্ত লঞ্চ থেকে পড়ে যায় তিন মাসের শিশু সন্তান। তাকে বাঁচাতে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েন মা; এরপর দুজনই নিখোঁজ হন। পরে দুজনেরই মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া পত্রিকার পাতায় প্রায়ই চোখে পড়ে সন্তানকে বাঁচাতে জীবন দিয়েছেন মা। মায়ের ভালোবাসার নিদর্শন শুধু মানুষের জন্যই প্রযোজ্য নয় বরং সমগ্র প্রাণিজগতের জন্য। মানুষের মতো প্রাণিজগতেও রয়েছে অবাক করা মাতৃত্ব। পশুরাও মায়ের কোলকে সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় বলে মনে করে। নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়ে নিজ সন্তানকে বাঁচিয়ে রাখার অপূর্ব নজির মানুষ ছাড়াও অন্য কিছু প্রাণীর মধ্যেও দেখা যায়। আকনোফিলিয়া গোত্রের মাকড়সার বাস মূলত অস্ট্রেলিয়ায়। এ গোত্রের মা মাকড়সা ইউক্যালিপটাস পাতার বাসায় একত্রে ৪০টির মতো ডিম পাড়ে। মধ্য বসন্তে বা গ্রীষ্মের শুরুতে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। গ্রীষ্মকালে মা মাকড়সা বড়সড় আকারের ১০ গুণ পর্যন্ত বড় হতে পারে। এ সময় বাচ্চা মাকড়সা পেট ভরে খাবার খেতে পারে। ঋতুচক্রে শীতকাল ফিরে আসে। সময় এগিয়ে আসে মা মাকড়সার আবার ডিম পাড়ার। এদিকে আগে জন্মানো বাচ্চাগুলো খাদ্য সংকটে পড়ে। শীতে কীটপতঙ্গের সংখ্যা এমনিতেই কমে যায়। এদিকে মা মাকড়সার ডিম পাড়ার সময় ঘনিয়ে আসায় সে বাচ্চাদের আগের মতো পোকামাকড় ধরে দিতে পারে না। মা মাকড়সা গর্ভবতী হয়ে পড়ায় তার রক্তে পুষ্টিকর উপাদান বৃদ্ধি পায়। ক্ষুধায় কাতর বাচ্চা মাকড়সারা এ সময় মা মাকড়সার পায়ের সংযোগস্থল থেকে পুষ্টিকর রক্ত চুষে খেতে থাকে। ধীরে ধীরে মা মাকড়সার শরীর শুকাতে থাকে। কয়েক সপ্তাহ পর মা মাকড়সা এতটাই দুর্বল হয়ে পড়ে যে, সে আর নড়াচড়া করতে পারে না। এ সময় বাচ্চা মাকড়সারা মাকে আক্রমণ করে বিষ প্রয়োগে নিস্তেজ করে এবং হজমরস ব্যবহার করে খেতে থাকে। এ সময় মাকড়সাই হয় বাচ্চাদের একমাত্র খাবারের উৎস। শীতকাল শেষ হওয়ার আগেই এ খাবার শেষ হলে বাচ্চা মাকড়সারা একে-অপরকে খাওয়া শুরু করে। তাই একটি মা মাকড়সা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যেন তার সন্তানরা বেশি সংখ্যায় বেঁচে থাকে। এ কারণে সে গ্রীষ্মকাল থেকেই নিজের শরীরে খাদ্য জমিয়ে রাখে। এভাবে মার মৃত্যুই সন্তানদের বাঁচিয়ে রাখে। মায়ের এমন আত্মত্যাগের কথা আমরা ভুলে যাই বলেই খবর প্রকাশিত হয়, সন্তানের হাতে মা খুন কিংবা বৃদ্ধ মাকে রাস্তায় ফেলে রেখে সন্তানের পলায়ন। যাদের অবস্থা কিছুটা সচ্ছল তারা মাকে রেখে আসেন বৃদ্ধাশ্রমে। পারিবারিক বন্ধনগুলো শিথিল হচ্ছে বলেই বৃদ্ধাশ্রমের কদর বাড়ছে আমাদের দেশেও। আর সন্তানকে মা-বাবার ভরণপোষণে বাধ্য করতে সরকারকে আইন করতে হয়েছে। অথচ মায়ের মাঝেই লুকিয়ে আছে স্বর্গীয় সুখ ও শেষ আশ্রয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App