×

জাতীয়

কাজে আসছে না অভিযান : ভেজাল ইফতারি পণ্যে বাজার সয়লাব

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ মে ২০১৯, ১২:২২ পিএম

কাজে আসছে না অভিযান : ভেজাল ইফতারি পণ্যে বাজার সয়লাব
চলছে পবিত্র রমজান মাস। সারাদিন রোজা রাখার পর আমরা ইফতারে খাচ্ছি নানা পণ্য। অনেকেরই ইফতার ঘরে তৈরি করে খাওয়ার সুযোগ থাকলেও কর্মজীবী দম্পতি ও খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষের বেশির ভাগই বাইরের তৈরি রকমারি ইফতার কিনে খাচ্ছেন। এ ছাড়াও রমজান মাসে ইফতারের জন্য দোকানের খাবার কিনে খাওয়ার প্রবণতাও একটি অন্যতম কারণ। তবে ইফতারে আমরা কী খাচ্ছি, তা নিয়ে এ বছরেও নানা প্রশ্ন ও শঙ্কা জনমনে। ভেজালবিরোধী অভিযানগুলো এ শঙ্কা আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ অভিযানগুলো সংকেত দিচ্ছে ভেজাল ইফতারি পণ্যে সয়লাব বাজার। এমনকি প্রধানমন্ত্রীকে মাদক নির্মূলের মতো ভেজাল খাদ্যপণ্যের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ বা প্রয়োজনে জরুরি অবস্থা ঘোষণার অনুরোধ করেছেন হাইকোর্ট। এর ফলে সরকারও খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধে প্রয়োজনে নিরাপদ খাদ্য আইন সংশোধন করে শাস্তির মাত্রা বাড়িয়ে যাবজ্জীবন বা মৃত্যুদণ্ডের বিধান করার কথা ভাবছে। রাজধানীতে সড়কের পাশে ফুটপাতে নোংরা স্থান বা ড্রেনের পাশে চুলা বসিয়ে প্রতিদিনই ইফতারি পণ্য ভাজা হচ্ছে। আর এটি উদ্বেগের একটি অন্যতম উপসর্গ। কেননা রাজধানীর নর্দমায় কার্বাপেনেম, কলিস্টিন রেজিস্ট্যান্ট ই. কোলাই (সুপারবাগ) পাওয়া যাচ্ছে। মেডিকেল জার্নাল ওয়েবসাইট পাবমেড এ তথ্য প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, আমাদের এখানে নর্দমার ড্রেনের পানিতেও সুপারবাগ চলে এসেছে। হয়তো হাসপাতালগুলোর বর্জ্য থেকেই এর উৎপত্তি। সুপারবাগ নিয়ে ভয় পাওয়ার কারণ হলো এর সংক্রমণে ইনফেকশন হলে চিকিৎসা করা খুব কঠিন। প্রচলিত কোনো অ্যান্টিবায়োটিকে আর কাজ হয় না। মধ্যযুগে ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন হলে যেভাবে চিকিৎসা ছাড়াই মরতে হতো, সেভাবেই মরতে হবে আক্রান্ত রোগীদের। আর খাদ্যের মাধ্যমে এ সুপারবাগ আমাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম মাধ্যম হতে পারে সড়কের নর্দমার ড্রেনের পাশেই বা উপরে গজিয়ে ওঠা খাবার দোকানগুলো। বছরজুড়ে থাকলেও রোজার মাসে আরো কয়েক গুণ বেড়ে যায় এসব দোকানের বেচাকেনা। এ বছর রমজানের কয়েক দিন আগে থেকে ভেজালবিরোধী অভিযান চলছে। তারপরও কমছে না ভেজাল দেয়ার প্রবণতা। মুড়িতে ব্যবহার করা হচ্ছে ইউরিয়া সার। রাসায়নিক ব্যবহার করা হচ্ছে জুস-শরবতে। পেঁয়াজু, বেগুনি, সবজিবড়া, বিভিন্ন কাবাব, আলুর চপে ব্যবহার করা হচ্ছে পোড়া তেল। আকর্ষণীয় করতে ব্যবহার করা হচ্ছে তিকারক সিনথেটিক রং। সাধারণত খাবারে নির্দিষ্ট মাত্রায় রং মেশানোর নিয়ম থাকলেও দাম বেশি হওয়ায় ব্যবসায়ীরা এ কাজে ব্যবহার করছেন কম দামি কাপড়ে ব্যবহৃত রং। অনেক সময় ভাজার তেলে মেশানো হচ্ছে মবিলও। ফলে খাবার মচমচে হচ্ছে। স্বনামধন্য ও ভরসার আশ্রয়স্থল হিসেবে পরিচিত খাদ্যর জায়গাগুলোও অভিযানে নানা অনিয়মের অভিযোগে মোটা টাকার জরিমানা গুনছে। পুষ্টিবিদ তামান্না শারমিন ভোরের কাগজকে বলেন, নষ্ট বা ভেজাল যে কোনো খাদ্যই স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর। এসব ভেজাল পণ্য দীর্ঘদিন খেলে আমাদের খাদ্যনালিতে এক ধরনের প্রলেপ সৃষ্টি করে। এর ফলে হজম সমস্যা থেকে নানা ধরনের পেটের সমস্যা হতে পারে। এমনকি ক্যান্সার পর্যন্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। গতকালও মালিবাগ-মৌচাকের কয়েকটি দোকানে দীর্ঘক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে দেখা যায়, একই তেলে ইফতারি পণ্য ভাজার কারণে তেল কালো হয়ে গেছে। এ ছাড়াও পণ্য একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রা অনুসরণ করে ভাজার নিয়ম থাকলেও তা করা হচ্ছে না। এমনটা জিজ্ঞেস করতেই বিক্রেতারা জানান, ভালো তেল দিয়েই তারা ইফতারি পণ্য ভাজছেন। বিক্রেতাদের দাবি তারা এসব তেল নিয়ে আসছেন রাজধানীর বিভিন্ন বাজার থেকে। আর যদি ভেজাল থেকে থাকে তবে সেটি তারা জানেন না। ক্রেতাদের অনেকেই স্বীকার করলেন যে তারা বুঝতে পারছেন এসব পণ্য স্বাস্থ্যসম্মত নয়, তবে এ ছাড়া কোনো উপায় না থাকার কারণে তারা বাধ্য হয়েই এসব পণ্য কিনছেন। কথা হলো কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে যারা এসব দোকান থেকে ইফতারি কেনার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। একজন ক্রেতা বললেন, আমরা স্বামী-স্ত্রী দুজনই কর্মজীবী। কাজ থেকে ফিরে ইফতারি তৈরি করে খাওয়া অনেকটাই দুরূহ, তাই কিনে খাওয়ার বিকল্প নেই। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে এসব হতো না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের মহাপরিচালক অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মাহফুজুল হক ভোরের কাগজকে বলেন, আসলে ভেজাল রোধে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আর এসব নিয়ন্ত্রণে কঠোর আইনও রয়েছে। বিশেষ ক্ষেত্রে এর শাস্তি মৃতুদণ্ডও হতে পারে। তবে এসব ক্ষেত্রে সচেতন হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। এদিকে গতকাল এক অনুষ্ঠানে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, খাদ্যে ভেজাল যারা মেশায় তাদের বিরুদ্ধে বর্তমান সরকার জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। শুধু রমজান মাসেই নয়, আমরা চাই ১২ মাসই জনগণ নিরাপদ খাদ্য খাবে। যারা খাবারে ভেজাল দেয় তারা সমাজের শক্র, মানবতার শক্র। রমজান মাসে ভেজালবিরোধী অভিযানে নিয়মিতভাবে মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হচ্ছে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, প্রয়োজনে মোবাইল কোর্টের সংখ্যা বাড়ানো হবে। আইন সংশোধন করে শাস্তি বাড়ানোর বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, প্রচলিত আইনে শাস্তির যে বিধান রয়েছে দরকার হলে আইন সংশোধন করে শাস্তির মাত্রা বাড়ানো হবে। শাস্তির মাত্রা বাড়িয়ে যাবজ্জীবন বা মৃত্যুদণ্ড করা হবে। এ সময় খাদ্যে ভেজালকারীদের বিরুদ্ধে সবাই মিলে একযোগে, এক হয়ে কাজ করাসহ সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান মন্ত্রী।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App