ঋণের সুদে ভর্তুকির প্রস্তাব এফবিসিসিআইয়ের
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৩ মে ২০১৯, ১২:৩১ পিএম
ঋণের উচ্চ সুদহারের কারণে ব্যবসা ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে। একক অঙ্কে সুদহার নামিয়ে আনা চ্যালেঞ্জের মধ্যেই পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামাতে প্রয়োজনে রাজস্ব আয় থেকে সুদহারে ভর্তুকি দেয়ার প্রস্তাব করেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে দেয়া প্রস্তাবনায় ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই বলেছে, ব্যাংক ঋণের সুদহার ১৩ শতাংশ থেকে ১৮ শতাংশে উঠে গেছে। ব্যবসা-বিনিয়োগ বাড়াতে সুদহার অবশ্যই এক অঙ্কে নামিয়ে আনতে হবে। প্রয়োজনে রাজস্ব বাজেট থেকে সুদে ভর্তুকি দিয়ে হলেও এক অঙ্কে নামাতে হবে।
আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে আয়কর, মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও আমদানি শুল্ক সম্পর্কে একগুচ্ছ প্রস্তাব দিয়েছে এফবিসিসিআই। প্রস্তাবনায় বলা হয়ছে, করদাতাদের সামর্থ্য অনুযায়ী কর ও সারচার্জ আরোপের লক্ষ্যে ব্যক্তিগত আয়করের করমুক্ত সীমা, কর ও সারচার্জের হার পুনর্র্নিধারণ। ব্যক্তিগত কর ভার কমলে সম্পদ ও মূলধন পাচারের প্রবণতা কমে আসবে। একই সঙ্গে সঠিক আয় প্রদর্শনে উৎসাহিত হবে। যা দেশে বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও বেশি রাজস্ব আহরণে সহায়ক হবে। করদাতাদের করের বোঝা না বাড়িয়ে নতুন করদাতা শনাক্ত করার কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।
বাজেটে করের আওতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ দিয়ে এফবিসিসিআই তাদের প্রস্তাবনায় উল্লেখ করেছে, পশ্চাৎপদ এলাকা ও অগ্রাধিকার খাতগুলোয় কর রেয়াত অব্যাহত রাখতে হবে। এর পাশাপাশি এসএমই খাতে প্রণোদনা দিতে হবে। পাশাপাশি এর বিকাশের জন্য কর কমানোর কথা বলা হয়েছে।
ব্যক্তিগত করমুক্ত আয়ের সীমা সম্পর্কে প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে, চলতি অর্থবছরে যা ছিল তার থেকে কিছুটা বাড়ানো। অর্থাৎ ২ লাখ ৫০ হাজার থেকে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকায় উন্নীত করা। এখানেও তামাকজাত পণ্যের ওপর অর্জিত আয়ের ওপর ২ দশমিক ৫ শতাংশ সারচার্জ আরোপ করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। মুদ্রাস্ফীতি, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, জনগণের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়া ইত্যাদি বিষয়গুলো বিবেচনায় আয়করের হার পুনর্র্নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। করপোরেট হার প্রসঙ্গে প্রস্তাব করা হয়েছে, বিমা, ব্যাংক, অন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান, মোবাইল ফোন অপারেটর, মার্চেন্ট ব্যাংক ও সিগারেট প্রস্তুতকারক কোম্পানি ছাড়া অন্য সব কোম্পানির জন্য ২২ দশমিক ৫ শতাংশ। তবে তা হবে পাবলিক ট্রেডেট কোম্পানি। আর নন-পাবলিক ট্রেডেট কোম্পানির জন্য ৩০ থেকে ৩২ দশমিক ৫ শতাংশ। রপ্তানি ক্ষেত্রে উৎসে কর সম্পর্কে ২৫ শতাংশ বহাল রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর পাশাপাশি শিল্পের মৌলিক কাঁচামালের আমদানির ক্ষেত্রে অগ্রিম আয়কর কমানোর সম্পর্কিত বেশকিছু প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির আওতা বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। মূল্য সংযোজন করের ক্ষেত্রে এফবিসিসিআই বেশকিছু প্রস্তাব রেখেছে।
এফবিসিসিআই বলছে, নতুন মূসক আইন বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে ব্যবসা-বাণিজ্যে ও শিল্পায়নে কী ধরনের প্রভাব পড়বে সে বিষয়ে কোনো ধরনের মূল্যায়ন করা হয়নি। এর জন্য যথার্থ গাইডলাইন তৈরি জরুরি বলে মনে করে। আমদানি শুল্ক প্রসঙ্গে এফবিসিসিআই সবচেয়ে বেশি প্রস্তাব দিয়েছে। তারা বলেছে, দেশীয় শিল্পের বিকাশে বর্ধিত হারে উৎপাদন, কর্মসংস্থান, ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণ ও উন্নয়নের লক্ষ্যে এসব প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। যেসব পণ্যের ওপর শূন্য শতাংশ শুল্ক রয়েছে ও এক শতাংশ শুল্ক রয়েছে তা যেন অব্যাহত থাকে। এর পাশাপাশি যেসব পণ্যের ওপর সুনির্দিষ্ট শুল্ক নির্ধারিত রয়েছে তাও যেন অব্যাহত থাকে। আন্ডার ইনভয়েসিং ও মিস ডিক্লারেশনের কারণে কখনো কখনো সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে একটি শক্তিশালী কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। দেশীয় গিটার সুরক্ষার জন্য ৫ বছর ট্যাক্স হলিডে প্রদানের সুবিধার বিষয়টি প্রস্তাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ইমিটেশন জুয়েলারির ক্ষেত্রে ইনভয়েস ভ্যালুর ওপর শুল্কায়ন করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।