×

জাতীয়

ইফতারের প্রাণ সেই বিউটি-নুরানি লাচ্ছি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ মে ২০১৯, ১২:১৪ পিএম

ইফতারের প্রাণ সেই বিউটি-নুরানি লাচ্ছি
ভিন্ন স্বাদের ঐতিহ্যবাহী খাবারের জন্য পুরান ঢাকার সুনাম বেশ পুরনো। এসব ঐতিহ্যবাহী খাবারের মধ্যে বিভিন্ন পানীয় ও শরবত অন্যতম; যার বেশিরভাগই মুঘল ঘরানার খাবার বলে ধারণা করা হয়। ইতিহাসবিদদের মতে, মুঘল ঐতিহ্যই হলো পুরান ঢাকার খাবারের মূল বৈশিষ্ট্য। এই তালিকায় বিভিন্ন ধরনের শরবতও রয়েছে। এসব শরবত সে সময়কার মুসলিম সমাজ বা মুসলিম পরিবারের ঘরে ঘরে প্রচলিত ছিল। আতিথেয়তায় বেশ জনপ্রিয়ও হয়ে উঠেছিল সে সব শরবত। এরপর বিশ শতকে চকবাজার, ইসলামপুর ও জনসন রোডে অন্যান্য খাবারের দোকানের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের শরবতের দোকান গড়ে ওঠে। বর্তমানে ঘরে তৈরি বিভিন্ন শরবত বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে চলে গেলেও বিংশ শতাব্দীর কয়েকটি দোকান সেই পুরনো স্বাদ ও ঐতিহ্যের কথা মনে করিয়ে দেয় আজও। তার মধ্যে অন্যতম বিউটি লাচ্ছি ও ফালুদার দোকান এবং নুরানি কোল্ড ড্রিংক। প্রায় শত বছরের কাছাকাছি বয়সী এই দোকান দুটি এখনো টানে ভোজন রসিকদের। এজন্যই সারা দেশের হাজার দোকানের ভিড়েও এ ঐতিহ্যবাহী দোকান দুটির কদর আকাশচুম্বী। প্রতিবছর রমজান মাসে ইফতারে প্রাণ জুড়াতে অনেকেই ছুটে যান দোকান দুটিতে। জনসন রোডে আদালত পাড়া খ্যাত সিএমএম কোর্ট সংলগ্ন বিউটি লাচ্ছি এন্ড ফালুদা নামের দোকানে গিয়ে গতকাল রবিবার দেখা যায়, আলাদা স্বাদের ঐতিহ্যবাহী এই লাচ্ছি কেনার জন্য ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। স্পেশাল লাচ্ছি এবং লাচ্ছি স্পেশাল চিনিগুঁড়া নামে দুই ধরনের লাচ্ছি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা দরে। অনেকে ইচ্ছামতো বোতল বা পলি ব্যাগে পার্সেলও নিয়ে যাচ্ছেন। দোকানের ম্যানেজার শাকিল হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, ১৯২২ সালে মরহুম আবদুল আজিজের হাত ধরে যাত্রা শুরু বিউটি লাচ্ছির। আজিজপুত্র আবদুল গাফফার মিয়া তার বাবার মৃত্যুর পর হোটেলের দায়িত্ব নেন। আর ২০০১ সালে তার মৃত্যুর পর থেকে দোকানের দায়িত্ব নেন তার ছেলে মো. জাবেদ হোসেন। বর্তমানে তার হাতেই পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য ধারণ করে এগিয়ে যাচ্ছে পুরান ঢাকার বিউটি লাচ্ছি। সমাদৃত হচ্ছে সারা দেশের মানুষের কাছে। ইতোমধ্যে ঢাকায় তাদের কয়েকটি ব্রাঞ্চ করা হয়েছে বলে জানান তিনি। বিউটি লাচ্ছির কারিগর মো. আলাউদ্দিন ভোরের কাগজকে বলেন, প্রায় ৩৫ বছর ধরে তিনি এই দোকানে কাজ করেন। দোকানটির শুরু থেকেই গুণগত মান আর নির্ভেজাল লাচ্ছি তৈরি হওয়ায় অল্প সময়ের মধ্যেই পুরান ঢাকাবাসীর কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে তাদের ‘বিউটি লাচ্ছি’। আলাদা স্বাদ কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, আমাদের দইয়ের বিশেষ গুণের কারণে লাচ্ছির স্বাদ ভিন্ন হয়। চকবাজারের ঐতিহ্যবাহী নুরানি কোল্ড ড্রিংক দোকানে গিয়ে দেখা যায়, রমজান মাস উপলক্ষে বিকেল ৪টা থেকে লাচ্ছি বিক্রি শুরু হয় প্রায় ৭০ বছরের পুরনো এই দোকানে। ভিন্ন স্বাদের নির্ভেজাল লাচ্ছি খেতে ভিড় জমে যায় দোকানের সামনে। সাধারণ লাচ্ছি ৩০ টাকা ও স্পেশাল লাচ্ছি ৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়। তবে, ইফতারের আগে পার্সেল ছাড়া বিক্রি করা হয় না। দোকানটির ম্যানেজার মো. নাসিরউদ্দিন ভোরের কাগজকে বলেন, নুরানি লাচ্ছির প্রতিষ্ঠাতা আবদুল বারেক। প্রায় ৭০ বছর আগে তিনি বারেকের লাচ্ছি নামে চকবাজার এলাকায় লাচ্ছির ব্যবসা শুরু করেন। তিনি মারা গেলে হাল ধরেন তার সন্তান নুরুদ্দিন। নুরুদ্দিনের নুর থেকেই দিনে দিনে লাচ্ছির দোকানের নাম হয়ে যায় নুরানি। বর্তমানে নুরানি লাচ্ছির পরিচালক নুরদ্দিনের ছেলে মকবুল হোসেন। বর্তমানে দোকানটির সবচেয়ে পুরনো স্টাফ লাচ্ছির কারিগর আমিরুল ইসলাম। প্রায় ৬০ বছর ধরে লাচ্ছি তৈরি করা এই কারিগর ভোরের কাগজকে বলেন, পুরান ঢাকার মধ্যে যে কয়টি দোকান ঐতিহ্য ধরে রেখেছে তাদের মধ্যে এই দোকান অন্যতম। ৭০ বছর ধরে একই কায়দায় নির্ভেজাল লাচ্ছি তৈরি করে চলেছেন তারা। এই দোকানে ৭০ বছর ধরে কাজ করা কারিগড় তাজুল ইসলাম অসুস্থতা ও বয়সের ভারে সম্প্রতি অবসরে গেছেন। প্রায় ৬০ বছরের দীর্ঘ সহকর্মী অসুস্থ থাকায় তার জন্য দোয়া চান আমিরুল ইসলাম।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App