×

জাতীয়

স্বাদে অনন্য শাহী জিলাপি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ মে ২০১৯, ০৪:১৩ পিএম

স্বাদে অনন্য শাহী জিলাপি
কবি ও আমলা আলকামা সিদ্দিকী জিলাপির প্রশংসা করতে গিয়ে লিখেছেন- ‘রসনার রস বয় নাম গেলে কানে/তোমার রসের গুণ রসিকেরা জানে/তোমাকে বানায় যিনি মহা কর্মকার/তাবৎ খাদ্যে তুমি মহা আবিষ্কার/দেশে-দেশে নানা নামে তোমার ভোজন/জিলাপি জিলাবি আদি কত বিবরণ।’ ভোজন রসিকের কাছে রসে ভরা জিলাপির এমনই কদর। যদিও ‘জিলাপির প্যাঁচ’ কথাটি ব্যবহৃত হয় নিন্দনীয় অর্থে। কথার মারপ্যাঁচে অর্থ যাই হোক না কেন- স্বাদ ও প্যাঁচের কারণে জিলাপি বরাবরই জনপ্রিয়। মুখরোচক এই খাবারটির আকার ও স্বাদে রয়েছে ভিন্নতা। চিকন চিকন মচমচে ছোট জিলাপির পাশাপাশি কোনো কোনো জিলাপির প্রতিটির ওজন হয় আধা কেজি থেকে ৫ কেজি পর্যন্ত। খেতে তুলতুলে এই জিলাপি দেখলেই মনে হয় যেন রাজা-বাদশাদের খাবারের আয়োজন। আর তাইতো এর নাম হয়েছে ‘শাহী জিলাপি’। মূলত পুরান ঢাকার চকবাজার থেকে বিশাল আকৃতির এই বাদশাহী স্বাদের জিলাপি তৈরি শুরু হয়। চকবাজারের শাহী জিলাপি বিক্রেতারা বলেন, অনেক আগে রং দিয়ে ছোট আকৃতির জিলাপি (তখন ‘জিলাবি’ বলা হতো) তৈরি করা হতো। কালক্রমে মানুষের চাহিদাকে প্রাধান্য দিয়ে কয়েক কেজি ওজনের শাহী জিলাপি তৈরি শুরু হয়। ক্রমেই জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকায় বর্তমানে এই জিলাপি ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। তবে, স্বাদ ও ঐতিহ্যের বিচারে চকবাজারের জিলাপিই সেরা। এ জন্য ইফতারে মন জুড়াতে সবাই এই জিলাপি কিনতে ভিড় করেন চকবাজারের দোকানগুলোতে। গতকাল শনিবার চকবাজারে গিয়ে দেখা যায়, বিশাল আকৃতির এই শাহী জিলাপি কিনতে উপচে পড়া ভিড়। মূলত ভিন্ন স্বাদের কারণেই মাষকলাইয়ের ডাল, বেসন, ঘি, ডালডা, আর ময়দা দিয়ে তৈরি এ জিলাপি এখনো রয়ে গেছে জনপ্রিয়তার শীর্ষে। আকার যত বড়, দামও তত বেশি। তবে দাম যাই হোক, শাহী জিলাপি না হলে যেন অনেকের ইফতার অপূর্ণই থেকে যায়। চকবাজারের ‘নেয়াজ জেলাবী’ দোকানের মালিক মো. আলীম ভোরের কাগজকে বলেন, তার বাপ-দাদারা এক সময় জিলাপির কারিগর ছিলেন। সেখান থেকেই বংশ পরম্পরায় তিনি জিলাপি বানানো শিখেছেন। প্রায় ৪২ বছর ধরে তিনি জিলাপি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। অতীতের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, এক সময় রং দিয়ে তৈরি করা হতো জেলাবী। কালক্রমে সেটিই জিলাপিতে রূপ নেয়। এরপর মানুষের চাহিদা দেখে তিনিই জিলাপিকে বড় আকার দেন। জিলাপির আকার বড় করার ফলে বিক্রিও বেড়ে যায়। প্রায় ২০ বছর আগে এই বড় আকারের জিলাপি বানানো শুরু করেন তিনি। যা শাহী জিলাপি নামে পরিচিতি পায়। তার পাশেই আরেক শাহী জিলাপি বিক্রেতা নাজিম উদ্দিন ওরফে পিচ্চি। ৩২ বছর ধরে জিলাপির ব্যবসা তার। আগে সাধারণ জিলাপি বানালেও ১৪ বছর ধরে শাহী জিলাপি বিক্রি করেন তিনি। তবে তার জিলাপির স্বাদ একটু ভিন্ন। আসেদ নামে এক ওস্তাদ তাকে এই বড় জিলাপি বানানো শেখান। এরপর আসেদ সৌদি আরব চলে গেলে তিনি শাহী জিলাপি বিক্রি শুরু করেন। চকবাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক কেজি শাহী জিলাপির দাম পড়ে ১৮০ টাকা। দেড় কেজি হলে ২৫০ টাকা, দুই কেজির হলে কেজি ৪০০ টাকা এবং আড়াই কেজির একটি জিলাপির দাম পড়ে ৪৭০ টাকা। তবে পাঁচ কেজি বা তার ঊর্ধ্বে যে জিলাপিগুলো, সেগুলো সাধারণত বানানো হয় অর্ডার নিয়ে। শুধু শাহী জিলাপি নয়, এর পাশাপাশি বাজারে আরো রয়েছে চিকন জিলাপি, বোম্বে জিলাপি, রেশমি জিলাপি, প্যাঁচ জিলাপি আর মাষকালাইয়ের আমিত্তি। শুধু নামে নয়, এগুলোর স্বাদেও রয়েছে ভিন্নতা। কেজিপ্রতি দাম ১২০ থেকে ২৮০ টাকার মধ্যে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App