কমছে ডায়রিয়ার প্রকোপ
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২ মে ২০১৯, ০৪:২৩ পিএম
চলতি বছরের এপ্রিলের শুরু থেকেই রাজধানী ও এর আশপাশ এলাকায় ডায়ারিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। আন্তর্জাতিক উদারময় রোগ গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি)-এর তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে প্রতিদিন গড়ে সেখানে নয়শ রোগী ভর্তি ছিল। মে মাসে রোগীর সংখ্যা কিছুটা কমে আসে। এখন সেখানে দৈনিক গড়ে ভর্তি হচ্ছে সাড়ে সাতশ রোগী।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের তথ্য মতে, এপ্রিল মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেয় মোট ২৩ হাজার ৮৬৫ জন রোগী। পহেলা এপ্রিল থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত রোগী ছিল ৮ হাজার ৩৯১। রোগী বেশি ভর্তি ছিল ১৬ এপ্রিল। ওই দিন রোগী ছিল ৯২৩ জন। পহেলা মে থেকে ১১ মে (সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত) পর্যন্ত ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ৬ হাজার ৮৮৭ জন। এই ১১ দিনে সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি ছিল ২ মে। ওই দিন রোগী ছিল ৭০১ জন।
প্রতিষ্ঠানের তথ্য ব্যবস্থাপনার কাজে নিয়োজিত প্রদীপ জজ রোজারিও ভোরের কাগজকে জানান, রোগীদের মধ্যে শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক সব শ্রেণির মানুষই রয়েছে। গুরুতর রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে। আর যাদের অবস্থা ভালো তাদের চিকিৎসা ও পরামর্শ দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে।
আইসিডিডিআরবি হাসপাতালের প্রধান অধ্যাপক ডা. আজহারুল ইসলাম খান ভোরের কাগজকে বলেন, দেশে প্রতি বছরই মার্চ-এপ্রিল এবং আগস্ট-সেপ্টেম্বরে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ে। একে আমরা বলি ডায়রিয়ার পিক সিজন। এপ্রিলে যে সংখ্যক রোগী হাসপাতালে ভর্তি ছিল তা এখন অনেকটাই কমে এসেছে। বৃষ্টি হলে এবং গরম কমলে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও কমে আসবে। ডায়রিয়ায় পর্যাপ্ত পরিমাণে স্যালাইন খাওয়া এবং অবস্থার অবনতি হলে দ্রুত হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেন ডা. আজহারুল ইসলাম। এ ছাড়া বাইরের খাবার না খাওয়ারও পরামর্শ দেন তিনি।
এদিকে, আমাদের মহাদেবপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি জানান, মহাদেবপুরে প্রচণ্ড গরম ও দাবদাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গত কয়েক দিনের লাগাতার দাবদাহে উপজেলার ১০ ইউনিয়নে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত নানা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এ সময় কদর বেড়েছে ডাব ও খাবার স্যালাইন এবং গ্লুকোজসহ ঠাণ্ডা কোমল জাতীয় পানির। সুযোগ বুঝে ওই সব খাবার স্যালাইন, গ্লুকোজ এবং ডাবের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে ওই সব রোগে আক্রান্ত রোগীরা চিকিৎসা নিতে ভিড় জমাচ্ছেন। ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত শত শত রোগীর চিকিৎসা দিতে গিয়ে হাসপাতালগুলোতে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা হিমশিম খাচ্ছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন ১৫-২০ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছেন বলে হাসপাতালের একটি সূত্র নিশ্চিত করছে। এ ছাড়া উপজেলার ১০ ইউনিয়নে ৫টি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং ৩৬টি
কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রতিদিন শত শত নারী-পুরুষ, শিশু ও বৃদ্ধ মানুষ ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা নিচ্ছেন।
তবে এ দাবদাহে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন দিনমজুর শ্রেণির মানুষ। পরিবার-পরিজনদের মুখে দুবেলা দুমুঠো আহার তুলে দেয়ার জন্য শ্রম বিক্রি করতে আসা মানুষের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা থেকে আসা ধান কাটা ও মাড়াই শ্রমিক জহুরুল ইসলাম (জহু) ও মোতাকাব্বের শেখ এবং তাদের সহকর্মীদের সঙ্গে কথা হয় গতকাল ১১ শনিবার দুপুরে। প্রতিবছরের মতো এবারো ওই সব শ্রমিক উপজেলার হেলেঞ্চা মাঠে বোরো ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজে শ্রম বিক্রি করতে আসেন। তারা জানান, ফণীর প্রভাব কেটে যাওয়ার পর শুরু হয়েছে প্রচণ্ড দাবদাহ। দাবদাহের ফলে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ধান কাটা অবস্থায় জহুরুল ও মোতাকাব্বের শেখ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাদের দ্রুত মহাদেবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়। ভ্যাপসা গরম ও প্রচÐ দাবদাহে ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার সত্যতা স্বীকার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. আকতারুজ্জামান আলাল বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন গড়ে ১০ জন
ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছেন। ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের মধ্যে শিশু এবং বৃদ্ধের সংখ্যা বেশি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।
তবে ডায়রিয়া ও অন্য রোগে আক্রান্ত রোগীদের প্রয়োজনীয় চিকিসৎসা এবং ওষুধ প্রদান করা হচ্ছে। এসব সংক্রান্ত রোগী সংখ্যা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো পরিস্থিতি এখনো সৃষ্টি হয়নি বলে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা দাবি করেন।