×

জাতীয়

ব্লগার নীলাদ্রি ও সামাদ খুনের তদন্ত শেষ হয়নি চার বছরেও

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ মে ২০১৯, ১২:০৪ পিএম

ব্লগার নীলাদ্রি ও সামাদ খুনের তদন্ত শেষ হয়নি চার বছরেও
২০১৫ সালের ৭ আগস্ট দিনদুপুরে রাজধানীর খিলগাঁওয়ে ভাড়া বাসায় ঢুকে কুপিয়ে হত্যা করা হয় গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী ব্লগার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় ওরফে নিলয়কে। এর পরের বছর ২০১৬ সালের ৬ এপ্রিল রাতে একইভাবে রাজধানীর সূত্রাপুরের একরামপুর মোড়ে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয় আরেক ব্লগার নাজিমুদ্দিন সামাদকে। তিনিও গণজাগরণ মঞ্চের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। এ দুটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশ জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা পায়। মামলা দুটি প্রথমে থানা পুলিশ তদন্ত করলেও পরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশে আসে। কিন্তু দীর্ঘদিনেও চাঞ্চল্যকর এ দুটি হত্যা মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। সম্প্রতি ব্লগার নীলাদ্রি ও ব্লগার নাজিমুদ্দিন সামাদ হত্যা মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় কাউন্টার টেররিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটকে (সিটিটিসি)। নীলাদ্রি ও নাজিমুদ্দিন হত্যা মামলার তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে সিটিটিসির উপকমিশনার মহিবুল ইসলাম খান ভোরের কাগজকে বলেন, এ দুটি মামলা আগে ডিবি তদন্ত করেছে। সম্প্রতি আমাদের কাছে (সিটিটিসি) হস্তান্তর করা হয়। মামলা তদন্তের অনেক অগ্রগতি হয়েছে। সব ব্লগার হত্যায় একই জঙ্গি গ্রুপ জড়িত। এসব মামলায় জড়িতদের অনেকে গ্রেপ্তার আছে। আমরা মামলাগুলো একটা পর একটা তদন্ত শেষ করে চার্জশিট দেব। শিগগিরই নীলাদ্রি ও নাজিমুদ্দিন সামাদ হত্যা মামলার চার্জশিট চ‚ড়ান্ত করে আদালতে দেয়া হবে। ২০১৫ সালের ৭ আগস্ট দুপুরে গোড়ানের ভাড়া বাসার শোবার ঘরে ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করছিলেন নীলাদ্রি। কড়া নাড়ার শব্দে দরজা খুলে দেন তার স্ত্রী আশা মণি। ভাড়া নেয়ার কথা বলে এক ব্যক্তি ঘরে ঢোকেন। ভেতর থেকে নীলাদ্রি বেরিয়ে এসে লোকটিকে বাড়িওয়ালার সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দিতেই আরো ৩ দুর্বৃত্ত ঘরে ঢুকে পড়ে। এরপর স্ত্রী ও ছোট বোন তন্বীকে আটকে রেখে ছুরি ও চাপাতি দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে নীলাদ্রির মৃত্যু নিশ্চিত করে। হত্যাকাণ্ডেরর কয়েক ঘণ্টা পরই দায় স্বীকার করে আনসার আল ইসলাম নামের একটি জঙ্গি সংগঠন বিভিন্ন গণমাধ্যমে ই-মেইল বার্তা পাঠায়। পরে এ ঘটনায় খিলগাঁও থানায় আশা মণি একটি মামলা করেন। তদন্ত সংশিষ্ট সূত্র জানায়, নীলাদ্রি হত্যায় ডিবি পুলিশ ১২ জন জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের মধ্যে গ্রেপ্তার জঙ্গি খাইরুল ইসলাম ওরফে জামিল ওরফে রিফাত ওরফে ফাহিম ওরফে জিসান, আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাব, শেখ মোহাম্মদ আবদুলাহ ওরফে জায়েদ ওরফে জাবেদ ওরফে আবু ওমায়ের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাদের জবানবন্দিতে উঠে এসেছে- আনসার আল ইসলামের সামরিক শাখার প্রধান সেনাবাহিনীর চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হকের নির্দেশ ও পরিকল্পনা এবং সেলিম ওরফে আল হাদীর সমন্বয়ে ব্লগার নীলাদ্রিকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এতে অংশ নেন জঙ্গি মাসুদ রানা, আরাফাত রহমান সিয়াম, মোজাম্মেল হোসেন সায়মন। জঙ্গি নেতা জিয়াউল হক ও সেলিম ছাড়া বাকি পাঁচজন এখন কারাগারে আছেন। এ ছাড়া নীলাদ্রি হত্যায় গ্রেপ্তার সন্দেহভাজন জঙ্গি সাদ আল নাহিন, তারেকুল আলম, মাওলানা মুফতি আবদুল গাফ্ফার, মর্তুজা ফয়সাল সাব্বির, কামাল হোসেন সরদার ও কাউসার হোসেন খান কারাগারে আছেন। তারা ব্লগার হত্যাসহ অন্য মামলায় গ্রেপ্তার হন এবং আনসার আল ইসলামের বিভিন্ন দায়িত্বে আছেন। অন্যদিকে ২০১৬ সালের ৬ এপ্রিল রাত সাড়ে ৮টার দিকে রাজধানীর সূত্রাপুরের একরামপুর মোড়ে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয় ব্লগার নাজিমুদ্দিন সামাদকে। নাজিমুদ্দিন সামাদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সান্ধ্যকালীন কোর্সের এলএলএমের বি সেকশনের শিক্ষার্থী ছিলেন। এ ছাড়া গণজাগরণ মঞ্চেরও সক্রিয় কর্মী ছিলেন তিনি। ঘটনার পর স্বজনরা মামলা করতে অনীহা প্রকাশ করলে সূত্রাপুর থানার এসআই নুরুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। প্রথমে থানা পুলিশ ও পরে মামলাটি তদন্ত করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। সম্প্রতি এ মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় সিটিটিসিকে। তদন্তে গোয়েন্দারা জানতে পারেন, ব্লগার নাজিমুদ্দিন সামাদ হত্যার ঘটনায়ও জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম জড়িত। এই খুনের ঘটনায়ও বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।  

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App