×

মুক্তচিন্তা

ভেজাল খাদ্য ও আমাদের সচেতনতা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ মে ২০১৯, ০৯:১৪ পিএম

খাদ্যে ভেজাল, খাদ্যে বিষক্রিয়ার বিষয়টি নতুন কিছু নয়। সম্প্রতি এর ব্যাপ্তি যে হারে বাড়ছে তাতে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষ। দেশি-আন্তর্জাতিক সব গবেষণায় দেশে খাবারের বিষক্রিয়ার বিষয়টি বারবার উঠে আসছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে অভিজাত হোটেল রেস্টুরেন্ট বা নামিদামি ব্র্যান্ডের পণ্যও এখন ভেজালমুক্ত নয়। রমজানকে কেন্দ্র করে ভেজালের ব্যাপকতা আরো বেড়ে যায়।

জনসচেতনতা ও প্রশাসনিকভাবে সক্রিয় ভূমিকা পালন ব্যতীত ভেজালের দৌরাত্ম্য বন্ধ করা অসম্ভব। রমজানে ভোক্তাদের ভেজালমুক্ত খাদ্য এবং পণ্যসামগ্রী সরবরাহ নিশ্চিত করতে রাজধানীসহ সারাদেশে নিয়মিত ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনা করছে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)। পাশাপাশি ঢাকা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগেও মহানগরীতে প্রতিদিন অতিরিক্ত মোবাইল কোর্ট পরিচালনার কর্মসূচি চলছে।

এ ছাড়া সারাদেশে বিএসটিআইর আঞ্চলিক অফিসের মাধ্যমে এ ধরনের ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। ভেজালবিরোধী এই অভিযান কতটুকু ভূমিকা রাখতে পারবে সেটা দেখার বিষয়। ভেজালবিরোধী অভিযান আমরা প্রায় দেখি। কোনোভাবে যেন এই চক্রকে দমন করা যাচ্ছে না। খাদ্যপণ্যে নকল ভেজাল আমাদের দেশের খাদ্য ব্যবসায়ীদের প্রবণতায় পরিণত হয়েছে। রোজা উপলক্ষে এ অভ্যাস আরো বৃদ্ধি পায়।

ইফতারি পণ্যে ক্ষতিকর রং এবং অস্বাস্থ্যকর উপকরণের ব্যবহার অহরহ ঘটে। ইফতারের অপরিহার্য পাঁচটি সামগ্রী ছোলা, পিঁয়াজু, বেগুনি, মুড়ি ও জিলাপির প্রতিটিতেই নানাভাবে মেশানো হয় ভেজাল। মুড়ি আকারে বড় ও সাদা করতে ব্যবহৃত হচ্ছে ট্যানারির বিষাক্ত রাসায়নিক সোডিয়াম হাইড্রোসালফাইড। বেগুনি, পিঁয়াজু, চপ কিংবা জিলাপিতে ব্যবহৃত হচ্ছে টেক্সটাইল কালার।

কম খরচে বেশি লাভের আশায় একশ্রেণির বিক্রেতা এসব বিষাক্ত রং ব্যবহার করছেন ইফতার সামগ্রীতে। এসব খাবার খেয়ে সাধারণ মানুষ নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। মহাখালী পাবলিক হেলথ ইনস্টিটিউটের খাদ্য পরীক্ষাগারের তথ্যানুযায়ী, দেশের ৫৪ ভাগ খাদ্যপণ্য ভেজাল ও দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বলে চিহ্নিত হয়। সারাদেশ থেকে স্যানিটারি ইন্সপেক্টরদের পাঠানো খাদ্যদ্রব্যাদি পরীক্ষাকালে এ তথ্য বেরিয়ে আসে।

এক গবেষণায় বলছে, শুধু ভেজাল খাদ্য গ্রহণের ফলে দেশে প্রতি বছর প্রায় ৩ লাখ লোক ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। ডায়াবেটিস আক্রান্তের সংখ্যা দেড় লাখ, কিডনি রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ। এ ছাড়া গর্ভবতী মায়ের শারীরিক জটিলতাসহ গর্ভজাত বিকলাঙ্গ শিশুর সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ। এই পরিসংখ্যানটি আমাদের ভাবিয়ে না তুলে পারে না।

১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে খাদ্যে ভেজাল দেয়া এবং ভেজাল খাদ্য বিক্রির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ১৪ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত তা প্রয়োগ করার কোনো নজির নেই। আমরা আশা করব, রোজার মাসজুড়ে ভেজালবিরোধী অভিযান কঠোর হবে। আইনের যথাযথ প্রয়োগও নিশ্চিত করতে হবে।

ভেজাল পণ্য ও অসাধু ব্যবসায়ীদের ঠেকাতে এ ধরনের অভিযান নিয়মিত থাকলে ভেজালকারীদের দৌরাত্ম্য অনেকাংশে কমে আসবে বলে আশা করা যায়। তবে ভেজাল ঠেকাতে সচেতনতার বিকল্প নেই। আইন দিয়ে ভেজাল ঠেকানো সম্ভব নয়। এ জন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App