×

জাতীয়

স্নায়ুযুদ্ধে রওশন ও কাদেরপন্থিরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ মে ২০১৯, ০১:৫৯ পিএম

স্নায়ুযুদ্ধে রওশন ও কাদেরপন্থিরা
স্নায়ুযুদ্ধে রওশন ও কাদেরপন্থিরা
সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) নবম কাউন্সিল হবে চলতি বছরের যে কোনো সময়ে। সেই কাউন্সিলেই নতুন করে নির্বাচিত হবেন পার্টির চেয়ারম্যান। যিনি আগামী চার বছরের জন্য পার্টির ভাগ্যবিধাতা হবেন। শীর্ষ থেকে তৃণমূল পর্যায়ে পার্টি ও নেতাকর্মীদের সুসংগঠিত করতে ভ‚মিকা রাখবেন। তবে প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে নব্বই বছর বয়সী হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আবারো পার্টির হাল ধরবেন, না যোগ্য কোনো উত্তরসূরির হাতে দায়িত্ব ছেড়ে দেবেন তা নিয়ে এখন নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে সম্প্রতি জি এম কাদেরকে পার্টির উত্তরসূরি ঘোষণার পর রংপুরের নেতারা ভীষণ খুশি হলেও নীরব হয়ে গেছেন রওশনপন্থিরা। তাদের কোনো প্রতিক্রিয়াই দেখা যায়নি। জাপা সূত্রগুলো বলছে, জি এম কাদেরকে পার্টির সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী করার পরিকল্পনায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন রওশনপন্থিরা। তবে তারা সে ক্ষোভ প্রকাশ থেকে বিরত থাকছেন। তা ছাড়া ঘটনার পরপরই পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ তাদের আগাম সতর্ক করে সাফ বলে দিয়েছেন, জি এম কাদের তার সন্তানের মতো। কাদেরকে যেন সবাই মেনে নিয়ে সহযোগিতা করেন। আর এমন বক্তব্যের পরই নীরব হয়ে গেছেন রওশনপন্থিরা। মধ্যম সারির দুয়েকজন নেতা বলেন, জাপাদুর্গ রংপুরের নেতাদের দফায় দফায় চাপ ও আল্টিমেটামে এইচ এম এরশাদ তার সিদ্ধান্ত পাল্টে জি এম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান পদে পুনর্বহাল করেছেন। এর কিছুদিন পর ছোট ভাইকে একেবারে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানেরই দায়িত্ব দিয়ে দেন। আর এ সময়ের মধ্যে এরশাদকে কঠোর পাহারা ও নজরদারির মধ্যে রাখেন রংপুরের নেতাসহ কাদেরপন্থিরা। যেন কোনোভাবেই ‘রওশনপন্থিরা’ তার কাছে ভিড়তে না পারেন। তবে তারা যে কোনো মুহূর্তে এরশাদের কাছাকাছি গিয়ে খোলামেলা কথা বলার অপেক্ষায় আছেন। আর সেটা করতে চান পার্টির কাউন্সিলের আগেই। তবে রওশনপন্থিদের সে সুযোগ না দিতে দ্রুত কাউন্সিল করার চেষ্টায় আছেন জি এম কাদের। গত ৫ মে জাপা চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ কথা প্রকাশও করেছেন। তিনি বলেছেন, এখন আমাদের বড় কাজ দ্রুত কাউন্সিল করা। আবার গত ৬ মে রাজধানীর শ্যামপুর-কদমতলী থানা জাতীয় পার্টির বর্ধিত সভায় প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা-৪ আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা জানিয়েছেন, চলতি বছরের যে কোনো সময় জাতীয় পার্টির কাউন্সিল হবে। তিনি এমন ইঙ্গিত পেয়েছেন সদ্য দায়িত্ব পাওয়া ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছ থেকে। সৈয়দ বাবলার প্রত্যাশা কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে জিএম কাদের তৃণমূল পর্যায়ে পার্টিকে আরো সুসংগঠিত করতে পারবেন। সূত্র মতে, জি এম কাদেরের নতুন দায়িত্ব পাওয়া নিয়ে রওশনপন্থি হিসেবে পরিচিত আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, মুজিবুল হক চুন্নু, ফখরুল ইমামসহ অন্য নেতারা রয়েছেন একেবারেই নীরব। একমাত্র মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙাকে সরব দেখা গেছে। রাঙ্গা রওশনপন্থি হিসেবে চিহ্নিত হলেও জি এম কাদেরকে পুনর্বহালসহ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়ার পেছনে তার অবদান রয়েছে বলে জানিয়েছেন অনেক নেতা। জানতে চাইলে শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা বলেন, রওশনপন্থি আর কাদেরপন্থিদের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ চলছে সত্য তবে তা সমাধান করার ক্ষেত্রে দুপক্ষের সমঝোতা প্রয়োজন। তা ছাড়া এ সংকট নিরসনের দায়িত্ব এখন জি এম কাদেরের ওপর বর্তেছে। তিনি উদ্যোগ নিলেই সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তবে এ জন্য তার সাংগঠনিক দক্ষতা মুখ্য ভূমিকা পালন করবে। তবে তিনি দায়িত্ব নেয়ার পরেই যেভাবে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তা নেতিবাচক বার্তাই গেছে রওশনপন্থিদের কাছে। জানতে চাইলে জাপার যুগ্ম মহাসচিব হাসিবুল ইসলাম জয় বলেন, রওশন এরশাদ তো বলেই দিয়েছেন, জি এম কাদেরকে তিনি সন্তানের মতো দেখেন। তাকে মেনে নেয়া ও সহযোগিতা করার নির্দেশও দিয়েছেন। এরপরও যদি কেউ জি এম কাদেরকে সহযোগিতা না করেন তারা চেয়ারম্যানের কাছে চিহ্নিত হবেন। জাপা চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের ব্যক্তিগত উপদেষ্টা মেজর (অব.) খালেদ আকতার বলেন, সবকিছুই নির্ভর করছে জি এম কাদেরের ওপর। যাদের ‘রওশনপন্থি’ বলা হচ্ছে তারা পার্টি থেকে দূরে সরে গিয়ে থাকলে কাছে টানতে হবে। কোনোভাবেই দলে বিভেদ টানা যাবে না। তাহলেই পার্টিতে বিশেষপন্থি বলে কোনো কিছু থাকবে না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App