×

জাতীয়

প্রধান আকর্ষণ ‘বড় বাপের পোলায় খায়’

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ মে ২০১৯, ০৩:৫৪ পিএম

প্রধান আকর্ষণ ‘বড় বাপের পোলায় খায়’
চারশত বছর বয়সী ঢাকার ইফতারির ইতিহাসটাও চার শতাব্দীর। সেই মোগল আমলে তখনকার ঢাকার প্রাণকেন্দ্র চকবাজারকে ঘিরে গড়ে ওঠে ঐতিহ্যবাহী ইফতার বাজার। কাল পরিক্রমায় বাড়তে থাকে রাজধানীর আয়তন, চকবাজারকে ছাপিয়ে অলি-গলিতে ছড়িয়ে পড়ে বাহারি সব সুস্বাদু খাবারের লোভনীয় সুবাস। কিন্তু বৈচিত্র্য আর ভিন্ন স্বাদের জন্য চকবাজারের সেই ঐতিহ্য রয়েই গেছে। ফলে প্রতি বছর রোজা শুরু হলেই ইফতারির ঐতিহ্যে সাজে চকবাজার। নতুন কোনো খাবার নয় বরং যুগ যুগ ধরে একই খাবারের পসরা নিয়ে ব্যবসা করেন ব্যবসায়ীরা। ফলে ঐতিহ্যের টানে ঢাকার বিভিন্ন প্রান্ত ও ঢাকার বাইরে থেকেও প্রতিদিনই বিপুলসংখ্যক ক্রেতা ইফতারি কিনতে ছুটে আসেন চকবাজারে। গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিন চকবাজারে গিয়ে দেখা যায়, প্রথম রোজার দিনে দুপুর থেকেই ইফতার বাজারে ভিড় শুরু হয়েছে। রাজধানীসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ ঐতিহ্যবাহী ইফতার কিনতে ছুটে এসেছেন। বরাবরের মতো এবারো ঐতিহ্যবাহী ‘বড় বাপের পোলায় খায়’ খাবারের প্রতিই বেশি আকর্ষণ লক্ষ করা গেছে। ব্যবসায়ীরা সেই পুরনো হাক-ডাক ‘বড় বাপের পোলায় খায়, ঠোঙ্গা ভইরা লইয়া যায়’ স্লোগানে হরদমে বিক্রি করছেন এই সংমিশ্রনি খাবার। এদিকে ঐতিহ্যবাহী খাবার হলেও এর মান নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বেশির ভাগ ক্রেতা বলছেন, ঐতিহ্যের জেরে দেদারসে কিনলেও আগের মতো স্বাদ নেই এতে। চকবাজারে প্রায় ২৫ বছর ধরে ইফতার সামগ্রীর ব্যবসা করছেন হাজি মো. আবদুল ওহাব মিয়া। গতকাল তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, তার বাবা মৃত মো. শফিউল্লাহ প্রায় ৩০ বছর এই ব্যবসা করেছেন। তার মৃত্যুর পর তিনি ব্যবসার হাল ধরেছেন। এই দীর্ঘ সময়ে তারা একই ইফতার সামগ্রী (বিভিন্ন রোস্ট ও ফ্রাই) বিক্রি করছেন। যতদিন বেঁচে আছেন এই ব্যবসা চালিয়ে যাবেন বলে জানান তিনি। এক প্রশ্নের উত্তরে ওহাব মিয়া আরো বলেন, মোগল আমল থেকে এই খাবারগুলোর একটি ঐতিহ্য রয়েছে। যার কারণে প্রতি বছর রমজান মাসজুড়েই চকবাজারে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় থাকে। মো. হোসেন নামে ‘বড় বাপের পোলায় খায়’ এর এক বিক্রেতা ভোরের কাগজকে বলেন, প্রায় শত বছর ধরে তার বাপ-দাদারা এই খাবারটি বিক্রি করে আসছে। কালক্রমে বর্তমানে তিনি ব্যবসার হাল ধরেছেন। প্রায় ২৪ পদ দিয়ে এ বছর ‘বড় বাপের পোলায় খায়’ তৈরি করছেন। দুপুর থেকেই তার দোকানে উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। মো. রাজু নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, নানা কামিল মহাজনের হাত ধরে তারা ‘বড় বাপের পোলায় খায়’ বিক্রি শুরু করেন। তার দাবি, এক সময়ের ‘শেখ চুরাই ভর্তা’ কালক্রমে ‘বড় বাপের পোলায় খায়’ নাম ধারণ করেছে। তবে এখনো ঐতিহ্য বজায় রেখে তারা এটি বিক্রি করে চলেছেন। রাজুর দোকানের পাশেই দেখা যায়, একটি আচারের দোকানে উপচে পড়া ভিড়। দোকানটির মালিক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, রোজা উপলক্ষে প্রতি বছর তিনি আমের মুরাব্বা তৈরি করেন। এই মোরাব্বা কেনার জন্য ক্রেতাদের ভিড় লেগেই থাকে। রিয়াজ নামে এক সুতি কাবাব ব্যবসায়ী জানান, ব্রিটিশ আমল থেকেই বংশ পরম্পরায় তারা এই ব্যবসা করে আসছেন। আকবর নামে এক দই বড়া দোকানি জানান, রমজান মাস এলেই টেবিলে করে বসে যান এই ঐতিহজ্যবাহী বড়া বিক্রি করার জন্য। পুরান ঢাকা ও এর বাইরের মানুষের কাছেও এই বড়া বিশেষ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এদিকে ঐতিহ্য বজায় রাখার দাবি করলেও চকবাজারের খাবারের মান নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। হাজি মো. ওবায়দুর রহমান নামে চকবাজারের এক বাসিন্দা ভোরের কাগজকে বলেন, বড় বাপের পোলায় খায় খাবারটিতে আগের মতো আর স্বাদ পাওয়া যায় না। তবুও বাচ্চারা শখ করে খেতে চায় বলে কিনতে আসতে হয়। মো. সাজু নামে সোয়ারী ঘাটের এক বাসিন্দা বলেন, মুড়ির সঙ্গে মাখিয়ে খেতে ‘বড় বাপের পোলায় খায়’ কিনতে আসেন। আগে এটি মুড়ির স্বাদ বাড়িয়ে দিলেও গত কয়েক বছর ধরে মানটা কিছুটা খারাপ হয়ে গেছে। তবে মান কিছুটা খারাপ হলেও এর জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি। এর পাশাপাশি মুরগির কাবাব, মোরগ মসল্লাম, সুতি কাবাব, কবুতরের রোস্ট, শাহি জিলাপি, নিমকপারা, আলাউদ্দিনের হালুয়া, দইবড়া, কাশ্মিরি সরবতও সমানভাবে জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে। চকবাজার ঘুরে দেখা যায়, হরেক রকম দামে বিক্রি হচ্ছে হরেক রকম ইফতার সামগ্রী। এর মধ্যে বড় বাপের পোলায় খায় বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকা কেজি দরে। গরুর সুতি কাবাব কেজিপ্রতি ৬০০-৬৫০ টাকা, খাসির সুতি কাবাব ৮০০-৮৫০, সামি কাবাব ৪০-৫০, মুরগির রোস্ট প্রতি পিস ১২০-২৫০, আস্ত মুরগি মসল্লামের পিস ৩৫০-৪০০ টাকা। দুধ ও পেস্তা বাদামের শরবত লিটারপ্রতি ২০০-২৫০ টাকা, লাবাং ২৫০-২৮০, ফালুদা বড় বক্স ১৫০-২০০ টাকা। জিলাপির কেজি ১৫০-২০০ এবং ঘিয়ে ভাজা জিলাপি ৪০০-৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। টানা পরোটা ৩০-৪০ টাকা, গরুর মাংসের কিমা পরোটা ৪০-৫০ এবং ৫-১০ টাকা পিস বিক্রি হচ্ছে বেগুনে, পেঁয়াজু, আলুর চপ ও সমুচা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App