×

মুক্তচিন্তা

দায়ীদের কোনোভাবেই ছাড় নয়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ মে ২০১৯, ০৮:০৪ পিএম

শিশুদের জন্ম থেকে বিকাশ, প্রাপ্তবয়স্কদের স্বাস্থ্যরক্ষা ও রোগব্যাধি থেকে সুরক্ষার জন্য দুধ অপরিহার্য। একটি সবল ও শক্তিমান জাতি গঠনের জন্য দুধের বিকল্প নেই। সেই তরল দুধে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর উপাদান পাওয়া গেছে। বিষয়টি অনেক বেশি উদ্বেগের, কারণ শিশু থেকে শুরু করে বয়োবৃদ্ধ- বেশিরভাগ মানুষ এখন এ তরল দুধের ওপর নির্ভরশীল।

জানা গেছে, ঢাকাসহ সারাদেশের বাজারগুলো থেকে দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য-সংক্রান্ত ১৯০টি নমুনা পরীক্ষা করে ক্ষতিকর উপাদান পেয়েছে নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলো। বিশেষ করে কাঁচা তরল দুধের ৯৬টি নমুনার মধ্যে ৯৩টিতেই ক্ষতিকর উপাদান পাওয়া গেছে। এগুলো ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ।

বুধবার সংস্থাটি হাইকোর্টে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন দাখিল করে। আদালত দায়ীদের চিহ্নিত করে তালিকা প্রকাশ ও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। একই সঙ্গে আগামী ১৫ মের মধ্যে জড়িতদের নামের তালিকাসহ পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন আকারে আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে। ভয়াবহ বিষয় হচ্ছে, ছানার পানির সঙ্গে মিল্ক পাউডার, দুধের ননী, সয়াবিন, হাইড্রোজ, লবণ, চিনি, ফরমালিন ও কালার ফ্লেভার ইত্যাদি মিশিয়ে তৈরি হচ্ছে নকল দুধ। এ ছাড়া তাজা রাখার জন্য ছানায় দেয়া হচ্ছে ফরমালিন।

এ ছাড়া অসাধু ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফার লোভে খাঁটি ঘিয়ের সঙ্গে নানা উপকরণ মিশিয়ে নকল ঘি তৈরি করছে। এই ঘি খাঁটি গাওয়া ঘি হিসেবে বাজারজাত করা হচ্ছে। ভেজাল ঘি বাহ্যিকভাবে দেখে চেনার কোনো উপায় নেই। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের অভিমত হচ্ছে, দীর্ঘদিন ধরে কেমিক্যাল মিশ্রিত এই দুধ পান ও ঘি খেলে মানবদেহে ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। ফরমালিন মেশানোর ফলে লিভার ও কিডনির রোগ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ক্ষতিকর মিল্ক পাউডার ব্যবহারের ফলে মানবদেহে হাড়ের মধ্যকার দূরত্ব সৃষ্টি হতে পারে।

এতে ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, হার্ট অ্যাটাক, চোখের অসুখ বৃদ্ধি পেতে পারে। এ ধরনের পরিস্থিতি জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। বাজারে কেনা তরল দুধ শিশুখাদ্য হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। ভেজাল দুধ শিশুস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। কাজেই দুধে ভেজাল মেশানো ও নকল দুধ তৈরি ও বিক্রির এ অপকর্মে যারা জড়িত তাদের নীতিকথা শুনিয়ে নিবৃত্ত করা যাবে বলে মনে হয় না।

এর জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা জোরদার করতে হবে। অপরাধীদের শনাক্ত করে কঠোর শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে। ভেজালকারীরা এতটা কুশলতার সঙ্গে ভেজাল মেশাচ্ছে বা নকল দুধ তৈরি করছে যে, ল্যাকটোমিটার দিয়ে পরীক্ষায়ও ভেজাল ধরা পড়ে না।

ভেজালকারীরা যতটা কুশলী, তাদের ধরতে তদারককারীদেরও তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কুশলী হতে হবে। উদ্বেগের বিষয়, এসব ঘটনায় দায়ী কাউকে শাস্তির আওতায় আনা যায়নি। সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল থেকে শুরু করে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ ও প্রশাসনকে এ বিষয়ে সতর্ক পদক্ষেপ নিতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App