×

অর্থনীতি

বাজারে রোজার উত্তাপ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ মে ২০১৯, ১১:৫৫ এএম

বাজারে রোজার উত্তাপ
শুরু হচ্ছে পবিত্র রমজান মাস। প্রায় একমাস আগে থেকেই বাণিজ্যমন্ত্রী, এমনকি ব্যবসায়ীরাও বলছেন রমজানে ভোগ্য পণ্যের দাম বাড়বে না। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কমবেশি বেড়েছে সব পণ্যের দাম। রোজার সবচেয়ে প্রয়োজনীয় পণ্য ছোলা ও চিনির সঙ্গে বেড়েছে পেঁয়াজ, রসুন, আদা ও চিনির দাম। বাড়তির দিকে রয়েছে তেলের দামও। সম্প্রতি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনও বলেছেন, রমজানে দ্রব্যমূল্য এক টাকাও বাড়বে না। অথচ প্রতিনিয়ত বাড়ছে জিনিসপত্রের দাম। এদিকে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের তদারকি আরো বাড়ানোর তাগিদ দিলেন বিশেষজ্ঞরা। সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছেন, রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে ও চাঁদাবাজি বন্ধে সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে। কোনো অজুহাতেই রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়তে দেয়া হবে না। বাজার মনিটরিং চলছে। এ ছাড়া সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে চিঠি দেয়া হবে। বাজারে চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি পণ্য মজুদ রয়েছে। বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তির বিষয়ে কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, সরকারকে আরো বেশি মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। মানুষ যেন পবিত্র রমজান মানে স্বস্তিতে কেনাকাটা করতে পারে সে বিষয়ে সরকারকেই দায়িত্ব নিতে হবে। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, প্রতিবছরের মতো এবারও বাজারে পুরোদমে পড়েছে রোজার প্রভাব। সপ্তাহের ব্যবধানে পণ্যগুলোর দাম পাঁচ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। প্রতিকেজি চিনি, পেঁয়াজে পাঁচ টাকা, আদা, রসুনে ২০ টাকা দাম বেড়েছে। একইসঙ্গে বেড়েছে সবধরনের মাছের দাম। প্রতি কেজিতে ৩০ থেকে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা বেড়েছে। অন্যদিকে সবজির বাজারের মধ্যে বাড়ছেই বেগুনের দাম। বেগুনের কেজি এখন ৮০ টাকার ঘর ছুঁইছুঁই করছে। রোজা সামনে রেখে রাজধানীর সব বাজারেই ক্রেতাদের বাড়তি চাপ রয়েছে। রোজার আগেই মাসের বাজার সেরে নিতে তৎপর ক্রেতারা। আর এ জন্যই সব ধরনের পণ্যে মজুদ থাকার পরেও দাম বাড়ছে বলে জানালেন ব্যবসায়ীরা। এদিকে খিলগাঁও বাজারে আসা ফাতেমা বেগম বলেন, গত কয়েকদিন ধরেই সব পণ্যের দাম বাড়ছে। রোজার বাজার, তাই দাম বেশি থাকলেও তো কিনতে হবে। রাজধানীর কয়েকটি কাঁচাবাজার ঘুরে জানা গেছে, বাজারে মানভেদে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা কেজি। যা গত সপ্তাহে ছিল ২৮ থেকে ৩০ টাকা। সে হিসেবে প্রতিকেজি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে গড়ে পাঁচ টাকা। আর বাজার ও মানভেদে আমদানি করা চায়না রসুন ও আদা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১২০ টাকা। যা গত সপ্তাহে ছিল ১০০ টাকা। দেশি রসুন ও আদা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ১১০ টাকায়। সে হিসেবে প্রতিকেজি আদা রসুনের দাম বেড়েছে ২০ টাকা। তবে চিনির দাম খুচরা বাজারে বাড়লেও মিলগেটে কমেছে দাম। বর্তমানে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি করা হচ্ছে ৫৫ থেকে ৫৬ টাকা। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ৫০ থেকে ৫১ টাকায়। সে হিসেবে দাম গড়ে পাঁচ টাকা বেড়েছে। কাওরানবাজারের খান এন্ড সন্স বাণিজ্যালয়ের কর্ণধার গৌতম বাবু বলেন, রসুন ও আদার দাম কেজিতে প্রায় ২৫-৩০ টাকা বেড়েছে। তিনি বলেন, পণ্যের কোনো ঘাটতি নেই। তবে যা আমদানি হচ্ছে, প্রায় সেই পরিমাণই বাজার থেকে চলে যাচ্ছে। অর্থাৎ গত কয়েক দিনে বাজার থেকে প্রচুর পণ্য ক্রয় করা হচ্ছে। বেশিরভাগ ক্রেতা পণ্য বেশি পরিমাণে কিনে মজুদ করছেন। এ জন্যই সাময়িকভাবে বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। তিনি বলেন, তবে পাঁচ রমজানের পরেই জিনিসপত্রের দাম স্বাভাবিক হয়ে আসবে। মৌলভীবাজারের পাইকারি চিনি ব্যবসায়ী আর বি ট্রেডার্সের মালিক জাবেদ হোসাইন বলেন, মিলগেটের সঙ্গে দাম বাড়ার সম্পর্ক রয়েছে। মিলগেটে দাম কমেছে দুই টাকা অথচ খুচরা পর্যায়ে দাম এক টাকাও কমেনি। আমরা পাইকারিতে ৫০ থেকে ৫১ টাকা কেজি দরে চিনি বিক্রি করছি। অথচ খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৫৬ টাকায়। তবে ভিন্ন কথা বলেন কাওরান বাজারের আরেক পাইকারি বিক্রেতা মনির হোসেন। দাম বাড়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, আমদানিকারকরা বেশি দামে আমদানি করছে। পাশাপাশি মজুদও করছে বেশি দাম পাওয়ার জন্য। এ ছাড়া সামনে রমজান মাস আসছে, তাই বাজার একটু বাড়তি। সবজির বাজার স্থির থাকলেও বাড়তির দিকে রয়েছে বেগুনের দাম। এক সপ্তাহ আগে বেগুন ৫০ টাকায় বিক্রি হলেও রবিবার বিভিন্ন বাজারে তা ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। কারওয়ান বাজারে পেঁপে ৬০ টাকা, শসা ৪০ টাকা, টমেটো ৩৫ টাকা, বেগুন ৮০ টাকা, করলা ৬০ টাকা ও আম ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা যায়। মাংসের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্রয়লার মুরগির দাম ১৫০ টাকা কেজি। আগের সপ্তাহে ছিল ১৬০ টাকা। লাল লেয়ার মুরগি প্রতি কেজি ২০০ টাকা। আগে ছিল ২২০ টাকা। আর পাকিস্তানি কক প্রতি পিস ১৭০ থেকে ২৫০ টাকা। যা আগে ছিল ২০০ থেকে ২৮০ টাকা পিস। বাজার ভেদে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫২০ থেকে ৫৫০ টাকা কেজি। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ৫৫০ থেকে ৫৮০ টাকায়। আর প্রতিকেজি খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭২০ থেকে ৮০০ টাকা। গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকায়। মাংসের দাম কমলেও সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৩০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে মাছের দাম। এখনও চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ। বাজারে ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের প্রতিটি ইলিশের দাম দুই হাজার টাকা। অপরিবর্তিত রয়েছে চাল ও অন্যান্য মুদি পণ্যের দাম। এ ছাড়া খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে ২৬ টাকা, প্যাকেট ৩২ টাকা, ডাল ৪০ থেকে ৯০, লবণ ৩০ থেকে ৩৫, পোলাউর চাল ৯০ থেকে ৯৫। প্রতিকেজি খোলা আটা ২৭ টাকা, প্যাকেট ৩২ টাকা, খোলা ময়দা ২৮ টাকা, প্যাকেট ৩২ টাকা। বাজারভেদে মুরগির ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায়। হাঁসের ডিমের ডজন ১১০ থেকে ১২০ টাকা। দেশি মুরগির ডিম ১৫০ টাকা ডজন বিক্রি হতে দেখা গেছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App