×

জাতীয়

পথের কাঁটা সরিয়ে দিতে দীপিকাকে পুড়িয়ে হত্যা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ মে ২০১৯, ০১:৪০ পিএম

পথের কাঁটা সরিয়ে দিতে দীপিকাকে পুড়িয়ে হত্যা
স্বামীকে মাদক সেবনে বাধা দেয়ার পাশাপাশি মূল্যবান পারিবারিক সম্পদ বিক্রিতেও বাদ সেধেছিলেন গৃহবধূ দীপিকা আচার্য্য মনি (২৬)। পথের কাঁটা সরাতে তাই তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে স্বামী ও ভাশুরসহ অন্যরা। গভীর রাতে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এরপর দুর্ঘটনার গল্প সাজিয়ে নেয়া হয় হাসপাতালে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় মারা যান দীপিকা। তবে তার আগেই পুলিশের কাছে ঘটনার বিবরণ দেন তিনি। সেইসূত্রে দায়ের হয় মামলা। গ্রেপ্তার হন ঘাতক স্বামী ও ভাশুরসহ তিনজন। এ যেন ভিন্ন প্রেক্ষাপটে ফেনীর নুসরাত হত্যাকাণ্ডেরই পুনরাবৃত্তি। হতভাগ্য দীপিকার গ্রামের বাড়ি নরসিংদী জেলার মাধবদী পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডে। পারিবারিকভাবে ১০ বছর আগে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের মকিমাবাদ গ্রামের বিপুল আচার্য্যরে সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তাদের তিন বছরের একটি কন্যা সন্তান আছে। হাজীগঞ্জ থানার ওসি মো. আলমগীর হোসেন রনি জানান, দীপিকার শরীরের প্রায় ৯২ শতাংশ ঝলসে গিয়েছিল। মৃত্যুর আগে তিনি পুলিশের কাছে জবানবন্দি দিয়েছেন। এর আগে আগুন দিয়ে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে বৃহস্পতিবার দুপুরে হাজীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন দীপিকার বড় ভাই অরবিন্দ আচার্য্য। এরপর সন্ধ্যায় তার স্বামী, ভাসুর ও শাশুড়িকে আটক করে পুলিশ। শুক্রবার আদালতে সোপর্দ করা হলে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। মামলা সূত্রে জানা গেছে, ৩০ এপ্রিল গভীর রাতে স্বামী বিপুল আচার্য্য ও ভাসুর স্বজন আচার্য্য শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে দীপিকাকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করে। বিষয়টি দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দিতে দীপিকাকে প্রথমে হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরবর্তীতে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখান থেকে পরদিন তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে পাঠান চিকিৎসকরা। মোবাইল ফোনে বোনের দুর্ঘটনার খবর শুনে অরবিন্দ আচার্য্য বার্ন ইউনিটে তার বোনকে দেখতে যান। সেখানে দীপিকা জানান, তাকে মারধর করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়। এরপরই হাজীগঞ্জ থানায় এসে দীপিকার স্বামী বিপুল আচার্য্য, ভাসুর স্বজন আচার্য্য, তার স্ত্রী দীপা এবং শাশুড়ি সন্ধ্যা আচার্য্যরে বিরুদ্ধে মামলা করেন অরবিন্দ আচার্য্য। বিপুল হাজীগঞ্জ বাজারের চয়নিকা স্টুডিও পরিচালনা করেন। স্টুডিওর উপরে তিন তলার বাসায় থাকতেন তারা। গ্রেপ্তারের পর বৃহস্পতিবার রাতে থানা হেফাজতে থাকা বিপুল আচার্য্য ও তার মা সন্ধ্যা আচার্য্য দাবি করেন, ৩০ এপ্রিল রাত দুটার দিকে কেরোসিনের চুলায় বাচ্চার জন্য দুধ গরম করতে যায় দীপিকা। হঠাৎ করে চুলা পড়ে দীপিকার শরীরে আগুন লেগে যায়। এ আগুন নিভাতে গিয়ে বিপুলেরও দুই হাত পুড়ে যায়। দীপিকার সঙ্গে বিপুলও ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন ছিলেন। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। তবে দীপিকার বড় ভাই অরবিন্দ আচার্য্য মোবাইল ফোনে ভোরের কাগজকে বলেন, বিপুল মাদকাসক্ত। তাদের পরিবারে ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকত। সে ঘরে বসেই ইয়াবা সেবন করত। সজল ও বিপুলদের অনেক টাকার মূল্যের একটি সম্পত্তি আছে। কয়েক মাস যাবত ওই সম্পত্তি বিক্রির চেষ্টা করে আসছে সজল ও বিপুল। আমার বোন ওই সম্পত্তি বিক্রিতে বাধা দিয়ে আসছিল। এসব কারণেই দীপিকাকে হত্যার পরিকল্পনা করে তারা। বিপুল আমার বোনের শরীরে আগুন লাগানোর আগে তাকে মারধর করেছে। তার মাথা ও কপাল ফেটে গিয়ে ছিল। ঘটনার পর থেকে ৩ বছরের ভাগনীকে নিয়ে সজলের স্ত্রী দিপা পলাতক রয়েছে বলেও জানান তিনি। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা খলিলুর রহমান জানান, ঢাকা মেডিকেল কলেজে বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দীপিকার বক্তব্য রেকর্ড করা হয়েছে। বক্তব্যে তাকে আগুন দিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে বলে জানান দীপিকা। সে আলোকে থানায় মামলা নেয়া হয়েছে এবং অভিযুক্ত ৪ জনের মধ্যে ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্ত আরেকজনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App