×

জাতীয়

ফণীর কারণে দেশে বন্যার আশঙ্কা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ মে ২০১৯, ০৬:৫৫ পিএম

ফণীর কারণে দেশে বন্যার আশঙ্কা

ছবি: সংগৃহীত

ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

ঘূর্ণিঝড়ের গতিপ্রকৃতি বিবেচনা করে শুক্রবার এক বিশেষ বার্তায় বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, উত্তরাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন ভারতীয় অঞ্চলসমূহের কতিপয় স্থানে আগামী ৭২ ঘণ্টায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত পরিলক্ষিত হতে পারে।

এতে আরো বলা হয়, ফণীর প্রভাবে ওই অঞ্চলগুলোর প্রধান নদীগুলো, বিশেষ করে ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, সুরমা, কুশিয়ারা, কংস, যাদুকাটা, তিস্তা নদীর পানির পৃষ্ঠ আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। কোথাও কোথাও বিপদসীমা অতিক্রম করে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।

প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র প্রভাবে উপকূলীয় নয় জেলায় ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অফিস।

আজ শুক্রবার বিকেলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক শামছুদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের সামনে এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।

তিনি জানান, উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

এছাড়া চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৬ নম্বর সংকেতের আওতায় থাকবে।

পাশাপাশি কক্সবাজার সমূদ্র বন্দরকে ৪ স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

ভারতে ১০ প্রাণ কেড়ে দ্রুত বাংলাদেশে প্রবেশ করছে ঘূর্ণিঝড় ফণী। ঘূর্ণিঝড়টি এখন মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৪৪৫ কিলোমিটার দূরে রয়েছে।

‘ফণী’র অগ্রভাগ বাংলাদেশে এরইমধ্যে প্রবেশ করেছে। মূলকেন্দ্র আসতে কিছুটা দেরি হবে। খুলনা অঞ্চলের আকাশ মেঘলা হওয়া শুরু হয়েছে। ফণীর মেঘ ঢাকা পর্যন্ত এসেছে। ঢাকায় ‘ফণী’র মেঘ থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে। বাংলাদেশের পুরো আকাশ ছেঁয়ে ফেলবে মধ্য রাত থেকে পরের দিন সকাল পর্যন্ত।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, এরইমধ্যে ‘ফণী’র অগ্রভাগ বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। মূলকেন্দ্র আসতে কিছুটা দেরি হবে। খুলনা অঞ্চলের আকাশ মেঘলা হওয়া শুরু হয়েছে। এর মেঘ ঢাকা পর্যন্ত এসে গেছে। ঢাকায় ‘ফণী’র মেঘ থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে’।

তিনি বলেন, আমাদের ধারণা ছিল সন্ধ্যা নাগাদ এটি বাংলাদেশে আসবে। এটি একটি বিশাল বডি। এটি সন্ধ্যা থেকে শুরু করে রাতব্যাপী অতিক্রম করতে থাকবে। পুরো ব্যাস বাংলাদেশের পুরো আকাশ ছেয়ে ফেলবে মধ্য রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি শুক্রবার সকাল ১০টায় ভারতের উড়িষ্যা উপকূল অতিক্রম করেছে। অতিক্রমের সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৮০ কিলোমিটার। এটি এখন শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হিসেবে পশ্চিমবঙ্গে অবস্থান করছে। বিপদ সংকেত থাকা উপকূলীয় এলাকার জনসাধারণকে আমরা অতিদ্রুত আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার অনুরোধ করছি। আবহাওয়া অধিদফতর ও সরকারের পক্ষ থেকে যতক্ষণ না পর্যন্ত আশ্রয় কেন্দ্র ত্যাগ করতে বলা হবে এর আগে কেউ যেন আশ্রয় কেন্দ্র ত্যাগ না করেন।

তিনি আরো বলেন, এটি এখনো দুর্বল হয়নি। আমাদের ধারণা ছিল এটি আঘাত করে দুর্বল হয়ে যাবে। কিন্তু আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী এটি দুর্বল হয়নি।

পরিচালক আরো বলেন, ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের জন্য বাতাসের গতি ৮০ থেকে প্রায় ১৪০ হয়ে থাকে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে আগে আমরা সবাইকে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করিয়েছি। ঘূর্ণিঝড় এবং অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং এর কাছাকাছি দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুটের বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে বলে জানান আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক।

এর আগে ভারতের উত্তর প্রদেশে ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে সৃষ্ট বজ্রপাতে ও গাছ উপড়ে অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে উত্তর প্রদেশে আট জন ও উড়িষ্যায় দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। বেশকিছু স্থানে গাছ ও বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বাতিল করা হয়েছে অনেক ফ্লাইট ও ট্রেন সূচি।

বৃহস্পতিবার রাতে উত্তর প্রদেশের চান্দাওলিতে জেলায় বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছে চার ব্যক্তির। একই ঘটনায় গুরুতর আহত হন আরো পাঁচ জন। একই জেলায় গাছ উপড়ে প্রাণহানি ঘটেছে এক বৃদ্ধার।

একই রাতে সোনেভারদা জেলার পান্নুগঞ্জে বজ্রপাতে মারা যান এক তরুণ। একই ঘটনায় গুরুতর আহত হয় দুই ভাই। তাদের পরবর্তীতে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে শুক্রবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তাদের।

বলা হচ্ছে, ১৯৯৯ সালের ঘূর্ণিঝড়ের পর এটাই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে শক্তিশালী। এই ঝড়ে প্রায় ১০ হাজার গ্রাম ও ৫০টি শহর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টা থেকে শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কলকাতা বিমানবন্দরে সব ফ্লাইট বন্ধ রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে প্রায় ১১ লাখ মানুষকে।

ফণীর তাণ্ডবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে পুরি। পুরিতে ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে ছিলো ভারী বৃষ্টি। বাতাসে উপড়ে গেছে বেশ কয়েকটি গাছ। ধ্বংস হয়ে গেছে একাধিক স্থাপনা। পুরীর জগন্নাথ মন্দির সম্পূর্ণ বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে।

উড়িষ্যার বিশেষ ত্রাণ কমিশনার বিষ্ণুপাডা সেঠি বলেন, এখন পর্যন্ত আমি দুই জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করতে পারবো। এর মধ্যে একজন, আশ্রয়কেন্দ্রে ‘হার্ট অ্যাটাকে’ মারা গেছেন। অপর একজন আমাদের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ঝড়ের মধ্যে বাইরে যান। সেসময় তার ওপর একটি গাছ উপড়ে পড়লে তিনি মারা যান।

এদিকে শুক্রবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে ওড়িশা স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে আটটার দিকে ১৪২ কিলোমিটার গতিবেগ নিয়ে পুরি শহরে আঘাত হানে শক্তিশালী এই ঘূর্ণিঝড়।

উল্লেখ্য, ফণীর প্রভাবে উত্তর প্রদেশে বৈরি আবহাওয়ার সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর আগামী দুই দিনের জন্য প্রদেশটিতে আবহাওয়া সতর্কতা জারি করেছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App