×

জাতীয়

টার্গেট খালেদার মুক্তি, ‘সমঝোতা’র গুঞ্জন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ মে ২০১৯, ১২:৩১ পিএম

জামিন অথবা প্যারোল দুটির যে কোনো একটি পন্থায় মুক্তি পাচ্ছেন কারাবন্দি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এ বিষয়ে পর্দার অন্তরালে সমঝোতাও হয়েছে। আর ‘গোপন সমঝোতার’ অংশ হিসেবেই শপথ নিয়েছেন বিএনপির এমপিরা। তবে এ নিয়ে দলের অভ্যন্তরে সন্দেহ ও ক্ষোভ বাড়ছে। বিভক্ত হয়ে পড়েছে দলের হাইকমান্ড। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সিদ্ধান্তের কারণে তারা মুখ খুলছেন না। এ পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়ার মুক্তিকে এক নম্বর এজেন্ডা ধরে চলছে বিএনপির সব কার্যক্রম। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে। সূত্র জানায়, ভোট কারচুপির অভিযোগে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করে এমপি হিসেবে শপথ না নেয়ারও সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। অন্যদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে আইনি প্রক্রিয়া কিংবা রাজপথেও জোরালো আন্দোলনে ব্যর্থ হয় দলটি। এ পরিস্থিতিতে পর্দার অন্তরালে চলে সমঝোতার চেষ্টা। খালেদা জিয়ার মুক্তির লক্ষ্যে বেশ কৌশলে নিজেদের মধ্যে শলা-পরামর্শ করে দল পরিচালনা করছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তাদের কৌশলের অংশ হিসেবেই শপথ নিয়েছেন বিএনপির এমপিরা। দলটির তৃণমূল মনে করছে যৌক্তিক কারণ ছাড়া এমন সিদ্ধান্ত নেননি তিনি। কারো বিশ্বাস রাজনীতিক হিসেবে নয়, সন্তান হিসেবে মায়ের মুক্তি নিশ্চিত করতেই সংসদে যাওয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন তিনি। নেতাকর্মীরা বিশ্বাস করতে চান, খালেদা জিয়ার মুক্তির লক্ষ্যে সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছে দল। তারা এখন খালেদা জিয়ার মুক্তির দিনক্ষণ গুনছেন। তবে আগামী ১০ তারিখের আগেই যে কোনো দিন খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। সূত্র জানায়, দীর্ঘ ১৫ মাস বন্দি থাকার পরেও আইনি প্রক্রিয়া অথবা রাজপথের আন্দোলন কোনোভাবেই খালেদা জিয়ার মুক্তির কোনো সম্ভাবনা খুঁজে পাচ্ছিল না বিএনপি। এর মধ্যেই খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থারও অবনতি হচ্ছে দিনকে দিন। এই ১৫ মাসে কারাগার এবং হাসপাতালে একাধিকবার দেখা করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা কাছ থেকে দেখেছেন তিনি। ফিরে এসে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে প্রকৃত অবস্থা বর্ণনা করেছেন তিনি। তিনি তারেককে বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন, যে প্রক্রিয়ায়ই হোক না কেন, এই মুহূর্তে দলীয়প্রধানের মুক্তি সবচেয়ে জরুরি। তার মুক্তির পথ যদি দলের নির্বাচিত এমপিদের শপথ নেয়ার মাধ্যমে তৈরি হয় সেক্ষেত্রে শপথের সিদ্ধান্ত নেয়াই হবে সঠিক সিদ্ধান্ত। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্যের মন্তব্য মির্জা ফখরুলের শপথ না নেয়াটা প্রমাণ করে সমঝোতায় সমস্যা হয়েছে। একই সঙ্গে স্পিকার দ্রুতগতিতে আসন শূন্য ঘোষণা করার মধ্য দিয়ে সরকারের হার্ডলাইনের বিষয়টিও প্রমাণিত হয়। তিনি বলেন, শুনেছিলাম এমপিরা একদিকে শপথ নেবেন অন্যদিকে খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন। বাস্তবে তা হয়নি। আমাদের অন্ধকারে রেখে যা করা হলো তা পরিষ্কার হতে আরো সময় লাগতে পারে। আসন শূন্য ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মির্জা ফখরুল বিবিসিকে জানিয়েছিলেন, দলীয় কৌশলের অংশ হিসেবে তিনি শপথ নেননি। তিনি বলেন, দল গোছাতে, এগিয়ে নিতে এখন অনেক কাজ করতে হবে। আমাকে অনেক সময় দিতে হবে। সে কারণে সংসদের বাইরে থেকে আমি দলের জন্য কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এটি দলেরই একটি কৌশল। যারা শপথ নিয়েছেন তারা সংসদের ভেতরে কাজ করবেন, আমি বাইরে থেকে কাজ করব। তবে দলের অন্যান্য সিনিয়র নেতাদের মন রক্ষার্থে বা অন্য কৌশল, যে কারণেই হোক মির্জা ফখরুল শপথ না নিলেও তার ওপর ক্ষুব্ধ সিনিয়র নেতারা। তারা কেউই মহাসচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন না। অংশ নিচ্ছেন না দলের কোনো কর্মসূচিতেও। গত সোমবার রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলনের আগে সিনিয়র নেতাদের ডেকে সাড়া পাননি। বিএনপির সিনিয়র নেতাদের ভাষ্য তিনবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ৫ এমপিকে সংসদের পাঠানোর পেছনের রহস্য তাদের জানা নেই। তবে যাই হোক, এতে যদি খালেদা জিয়ার জামিনে মুক্তির বিষয়টি তরান্বিত হয় তবে যারা পেছনে কাজ করেছেন তারা হিরো হবেন আর ব্যর্থ হলে তারা জিরো হবেন। সূত্র জানায়, আগামীতে বিএনপির যে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে দলের স্থায়ী কমিটির সামনে দুই ধরনের পরিস্থিতি আসতে পারে। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যদি স্থায়ী কমিটির নেতাদের কাছে কোনো বিষয়ে মতামত চান, তাহলে সবাই ভালো-মন্দ যা-ই হোক খোলাখুলি মত দেবেন। আর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কোনো বিষয়ে মত চাইলে সেক্ষেত্রে ‘হালকা মতামত’ দিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার ভার তার ওপরই ছাড়া হবে। দলের যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, তারেক রহমান শুধু বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানই নন, তিনি খালেদা জিয়ারও সন্তান। মাকে নিয়ে সন্তানের উদ্বেগ থাকাটাই স্বাভাবিক। চার এমপির শপথ নিয়ে দলের হাইকমান্ড যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা ভালো কি মন্দ কয়েকদিনের মধ্যেই স্পষ্ট হবে। তারপরও যদি কৌশলগত কারণে বিএনপির হাইকমান্ড সংসদে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন সেখানে আমার বলার কিছুই নেই। জানা গেছে, বিএনপির এমপিদের শপথ নিয়ে ক্ষুদ্ধ দলটির দুই জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোট। নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, যদি সমঝোতা হয় তা খোলাখুলি বলেন। বিএনপি সমঝোতা করলে অনেক আগেই সমঝোতা করতে পারত। খালেদা জিয়া যদি সমঝোতা করতেন তাহলে উনি প্রধানমন্ত্রী থাকতেন, অন্য কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন না এই কথাগুলো আপনাদের মনে রাখতে হবে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন পাওয়ার আশা শেষ হয়ে যায়নি বলে মনে করছেন তার আইনজীবীরা। তাদের মতে, সাজা হওয়া দুটি মামলায় জামিন পেলেই কারাগার থেকে মুক্তি পাবেন তিনি। তবে ওই দুটি মামলায় জামিন পেতে কত দিন লাগবে তা সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি তারা। তারা বলেন, একটি মামলায় সপ্তাহখানেকের মধ্যেই হাইকোর্টে জামিন আবেদনের ওপর শুনানি করা সম্ভব। আরেক আইনজীবীর মতে, ধর্মীয় অনুভ‚তিতে আঘাত দেয়া এবং বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কট‚ক্তি করার দুই মামলায়ও খালেদা জিয়ার জামিন নেয়ার প্রয়োজন হতে পারে। কারণ ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে বিচারাধীন মামলা দুটিতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি আছে। ওই দুই মামলায় খালেদাকে এখনো গ্রেপ্তার দেখানো না হলেও সরকার চাইলে শেষ মুহূর্তে দেখানো হতে পারে। তবে কাক্সিক্ষত সময়ের মধ্যে জামিন না পেলে খালেদা জিয়াকে প্যারোল (শর্তসাপেক্ষে মুক্তি) চেয়ে আবেদন করতে হবে সরকারের কাছে। তবে তিনি সে আবেদন করবেন এ বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি হচ্ছেন না খালেদা জিয়ার কোনো স্বজন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App