টেক্সটাইল খাতে বিপর্যয়
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল ২০১৯, ০৪:১৩ পিএম
বন্ড সুবিধায় আমদানিকৃত সুতা খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে। ফলে দেশীয় সুতা উৎপাদানকারীরা বিপাকে পড়েছেন। তারা বলছেন, বন্ডেড সুতা বিক্রি বন্ধ না করা হলে এ খাতে বিপর্যয় নামতে পারে।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শতভাগ রপ্তানির উদ্দেশ্যে বন্ড সুবিধায় শুল্কমুক্ত সুতা আমদানি করা হয়। যার কারণে এই সুতার দাম অনেক কম থাকে। অন্যদিকে দেশীয় মিলে উৎপাদিত সুতার দাম অপেক্ষাকৃত বেশি। ফলশ্রুতিতে দেশীয় সুতা ক্রেতা ধরতে পারছে না। উৎপাদিত বিপুল পরিমাণ সুতা অবিক্রীত অবস্থায় গুদামে পড়ে রয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশীয় টেক্সটাইল শিল্পে বিপর্যয় নামতে পারে। বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস এসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মো. আলী খোকন বলেন, দেশের প্রধান টেক্সটাইল সেক্টরে স্পিনিং, বয়ন ও প্রক্রিয়াকরণ মিলগুলো বন্ডেড সুবিধার অপব্যবহারের কারণে দীর্ঘদিন ধরে সংকটের মুখোমুখি রয়েছে। যার ফলে স্থানীয় পণ্যগুলোর চাহিদা হ্রাস পাচ্ছে। তিনি বলেন, বন্ডেড সুবিধার অপব্যবহারের ও চোরাচালানের পাশাপাশি ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদের হার এবং গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে এ খাত প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবে না। তিনি বলেন, বন্ডযুক্ত গুদামের সুবিধার অধীনে আমদানিকৃত সুতা, জামা-কাপড় এবং বিভিন্ন পোশাকের উপকরণ খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে, বিশেষ করে রাজধানীর ইসলামপুর, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার, গোপালদি ও বাবুরহাট এবং সিরাজগঞ্জে। করমুক্ত সুবিধায় আমদানি করা সুতা ও পোশাকের অবৈধ আমদানি এবং তাদের নিরবচ্ছিন্ন বিক্রির ফলে দেশটির ১ লাখ তাঁতের মধ্যে ৫০-৬০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ধরনের বিপুলসংখ্যক তাঁত বন্ধ হওয়ার কারণে দেশের ডাইং মিলগুলো ৪০ শতাংশ উৎপাদন কমিয়েছে এবং সুতা উৎপাদনের পরিমাণও ক্রমাগতভাবে কমছে, যা মূলত প্রাথমিক টেক্সটাইল খাতে গুরুতরভাবে আঘাত করেছে। যদিও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড অবৈধভাবে আমদানি করা শাড়ি এবং অন্যান্য কাপড় জব্দ করার জন্য অভিযান পরিচালনা করছে। তবে জনশক্তি ও অন্যান্য সহায়তার অভাবের জন্য এটি নিয়মিতভাবে করতে পারছে না। বিটিএমএর নেতারা বন্ডেড সুবিধা অপব্যবহার প্রতিরোধে স্বয়ংক্রিয় ট্র্যাকিং সফটওয়্যারসহ একটি সক্রিয় পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করেছেন। এ ছাড়া এ খাত ব্যাংক ঋণের অতিরিক্ত সুদের কারণে সম্প্রসারণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে দাবি করে বিটিএমএ সরকারকে ব্যাংক ঋণ সুদের হার ৭ শতাংশ নির্ধারণ এবং স্থানীয় ঋণ পরিশোধের সময় ১২ বছরেরও বেশি করার আহবান জানিয়েছে। যদিও সরকার সুদের হার হ্রাস করে এক অঙ্কে আনার চেষ্টা করছে, তবে এটি ১২-১৩ শতাংশ অব্যাহত রয়েছে, যার জন্য ব্যবসায়ের ব্যয় বেশি হচ্ছে এবং অন্যান্য বাজারের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে। সরকার সম্প্রতি গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম যথাক্রমে ৯৬ শতাংশ এবং ২০৮ শতাংশ বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে, যা বাস্তবায়িত হলে পোশাক ও সুতা উৎপাদন খরচ দ্বিগুণ হবে।
পরিস্থিতি খারাপ করার জন্য বিটিএমএ সভাপতি আরো বলেন, বর্তমানে ভ্যাটের অধীনে বয়ন ও প্রক্রিয়াকরণের ইউনিটগুলোতে মূল্য সংযোজন কর আরোপ করার কথা ভাবছে সরকার। এই সেক্টর সম্পর্কে গভীর সমীক্ষা পরিচালনা করার আগে ভ্যাট নেটের বাইরে রাখার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান তিনি। প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে গত এক বছরে এ খাতের প্রায় ৩০০টি কারখানা তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে।