×

বিনোদন

নৃত্যশিল্পী সুইটি দাসের গল্প

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০১৯, ০৫:৩৯ পিএম

নৃত্যশিল্পী সুইটি দাসের গল্প
নৃত্যছন্দে অনেকেরই হৃদয় ছুঁয়েছেন সুইটি দাস। মণিপুরী নাচে দুই বাংলায় রয়েছে তার খ্যাতি। কলকাতার মেয়ে সুইটি বর্তমানে ঢাকায় বসবাস করছেন। নাচ শিখছেন, শেখাচ্ছেন। নাচের টানেই ছুটে চলেছেন ঢাকা থেকে মৌলভীবাজারের ঘোড়ামারা গ্রামে। সেখানে মণিপুরী থিয়েটার এবং সাধনার যৌথ প্রচেষ্টায় চলছে মণিপুরী নাচের প্রশিক্ষণ প্রকল্প ‘ধ্রæমেল’। এখানে প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন তিনি। গত বৃহস্পতিবার যখন সুইটির সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হয় তখন তিনি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে। সুইটি বলেন, কমলগঞ্জের ঘোড়ামারা গ্রামে বেশ কয়েক বছর ধরে নিয়মিত আসতে হচ্ছে। এখানে সাধনা এবং মণিপুরী থিয়েটার মিলে ধ্রুমেল প্রকল্পের আওতায় মণিপুরী নৃত্যের একটি কর্মশালায় আমি ক্লাস নেয়। এবার আসা পরফরমেন্সের জন্য। ঘোড়ামারা গ্রামে মণিপুরী থিয়েটারের নটমণ্ডপের নতুন ভবন উদ্বোধন হচ্ছে। এটিই বাংলাদেশের কোনো গ্রামে প্রথম স্টুডিও থিয়েটার। উদ্বোধনী আয়োজনে আমি এবং আমরা ছাত্রছাত্রীরা একটি নৃত্য পরিবেশন করব। স্থানীয় শিল্পীদের থেকে নেয়া একটি গান ‘অথৈ তো মৃদঙ্গ বাজে; ভক্তগণ গীতো গায়। অনুষ্ঠানে ভারতীয় হাইকমিশনার উপস্থিত থাকবেন।’ নিজের অন্যান্য ব্যস্ততা প্রসঙ্গে এ গুণী শিল্পী বলেন, আগামী ২৯ তারিখে আমাদের আরেকটি পারফরমেন্স আছে। আমি সানসিল্ক ডিভাস ড্যান্স কোরিওগ্রাফি করছি। সুইটি দাসের পূর্বপুরুষ বাংলাদেশের বরিশালের বাসিন্দা ছিলেন। দেশভাগের সময় দাদা ফণীভ‚ষণ দাস কলকাতায় চলে যান। সুইটির জন্ম ও বেড়ে ওঠা কলকাতায়। কুলটি রিফিউজি গার্লস হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক, ভিক্টোরিয়া হাই স্কুল থেকে ভালো নম্বর নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছেন। কলকাতায় তিনি নৃত্যাঙ্গন নামে নাচের একটি স্কুল পরিচালনা করতেন দশম শ্রেণির ছাত্রী থাকাকালীন। এমএ পাস করা পর্যন্ত স্কুলটিতে শিশুদের নাচ শেখাতেন। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সহপাঠী অমিত চৌধুরীর সঙ্গে। বাংলাদেশের চট্টগ্রামের ছেলে অমিত চৌধুরী এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার এন্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ বিভাগে শিক্ষকতা করছেন। সুইটি দাসের মণিপুরী নৃত্যের গুরুমা ছিলেন গুরু বিপিন সিংহের স্ত্রী, নাচের গুরুমা কলাবতী দেবী। তার কাছে ভালোভাবে মণিপুরী নৃত্য আয়ত্ত করলেন। তখন থেকে এই শাস্ত্রীয় নৃত্য তার জীবনে আছে। পরে তিনি ভর্তি হলেন কলকাতার ‘রবীন্দ্র ভারতী বিশবিদ্যালয়’-এ। জীবনের নানা সংকটের মুহূর্তে কলাবতী দেবী তখন তার প্রিয় ছাত্রীটিকে খুব সাহায্য করেছেন। খুব অল্প সময়ে তার অনুপ্রেরণায় ও নিজের চেষ্টায় সুইটি দাস মণিপুরীতে দক্ষ হলেন। অন্য যে কেউ যেখানে খুব অল্প বয়সে শাস্ত্রীয় নৃত্যে আসেন, তিনি সাবালিকা হয়ে নাচটি রপ্ত করলেন। সে জন্য খুব কষ্ট করতে হয়েছে। কলাবতী দেবী তাকে নিজের মেয়ে মনে করতেন। বসে ‘বোল’ শেখাতেন। তিনি খাতায় তুলতেন। গুরুমা তাকে বিপিন সিংহের স্টাইল ধরিয়ে দিতেন। তার মেয়ে ও বিখ্যাত নৃত্যশিল্পী বিম্বাবতী দেবী এই শাস্ত্রীয় নৃত্যকে কীভাবে আধুনিক, সর্ব শ্রেণির দশর্কের উপযোগী করে পরিবেশন করতে হবে, শেখালেন। মঞ্চ সাজানো, মঞ্চে দাঁড়ানোর স্টাইল থেকে শুরু করে নৃত্যকলা সবই তার কাছে সুইটির শেখা। নৃত্যের ওপর ‘ন্যাশনাল স্কলারশিপ’ নিয়ে ২০১০ সালে সুইটি ভারতের মণিপুর রাজ্যের রাজধানী ইম্ফলে গেলেন। পরে মণিপুরী নাচের বিশেষ ফর্ম ‘থাংটা’ শিখতে গেলেন। এটি মণিপুরী মার্শাল আর্ট নৃত্য। তিনি কোর্সটি করলেন। মণিপুরী নাচের কেন্দ্র, এই প্রাচীন জনগোষ্ঠীর ঐতিহাসিক স্থাপনা দেখলেন, গুরুত্বপূর্ণ মানুষদের সঙ্গে আলাপ করলেন। খাওয়া থেকে শুরু করে পোশাক সব ঐতিহ্য কীভাবে তাদের জীবনে প্রভাব ফেলেছে গভীরভাবে জানলেন। ফলে তিনি মণিপুরী নাচে আরো দক্ষ, প্রাণবন্ত ও কল্পনাপ্রবণ হলেন। এই বৃত্তি নিয়ে তিনি রাশিয়া, রোমানিয়া ও শ্রীলঙ্কাতে সরকারিভাবে নৃত্য পরিবেশন করেছেন। এখন বাংলাদেশের মণিপুরীদের মধ্যে ‘সাধনা’র যে নৃত্য প্রশিক্ষণ, নব উদ্ভাবন হচ্ছে, তাতে তিনি অন্যতম প্রধান নৃত্যবিদ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App