×

সাময়িকী

হুমায়ুন আজাদ একটি নক্ষত্রের নাম

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০১৯, ০৮:৪৭ পিএম

হুমায়ুন আজাদ একটি নক্ষত্রের নাম
আমি সম্ভবত খুব ছোট্ট কিছুর জন্যে মারা যাবো খুব ছোট একটি স্বপ্নের জন্যে খুব ছোট দুঃখের জন্যে আমি হয়তো মারা যাবো কারো ঘুমের ভেতরে একটি ছোট দীর্ঘশ্বাসের জন্যে একফোঁটা সৌন্দর্যের জন্যে। (আমি সম্ভবত খুব ছোট্ট কিছুর জন্য মারা যাবো) টিএসসি’র সেসব গরমের ঝিম ধরা দুপুরে যখন বাড়ি ফেরার অনেক তাড়া থাকা সত্ত্বেও বাড়ি ফেরা হতো না, দুপুরের ক্লান্তিকে বিদীর্ণ করে দিয়ে নানা আবৃত্তিতে ঝমঝম করে উঠতো একদল তরুণের সুললিত কণ্ঠস্বর, তখন থেকে কবিতার সাথে আমার প্রেমের শুরু। আপাতদৃষ্টিতে প্রাণহীন শব্দগুলো আসলে কতটা শক্তিশালী তার অনুধাবনের আরম্ভও সেখান থেকে। সেই টানে আমিও ভেসে যাই, আবৃত্তি ক্লাস শেষ করার পর সবচেয়ে বেশিবার আবৃত্তি করা কবিতা সম্ভবত আমার এটি। সাধারণ মানুষের মনের আবেগকে অল্প কয়টা শব্দ কি করে এমন চির অমর করে তুললো ভাবলে আজো আমার চোখ ভিজে আসে। হুমায়ুন আজাদ বলেছিলেন, ‘মানুষ ও কবিতা অবিচ্ছেদ্য। মানুষ থাকলে বুঝতে হবে কবিতা আছে; কবিতা থাকলে বুঝতে হবে মানুষ আছে।’ সৈয়দ শামসুল হকের সাথে হুমায়ুন আজাদের প্রবচন বিষয়ক বিতর্ক এতটাই প্রবল হয়ে উঠেছিল যে, শামসুর রাহমানকে, মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় নামতে হয়। তাঁর সমস্ত লেখা এবং সাক্ষাৎকার বিতর্কিত হয়ে উঠতে থাকে এবং ক্রমশ তিনি ভূষিত হন, প্রথাবিরোধী লেখকের অভিধায়। এই বিরোধিতা কখনো কখনো অশালীন, অশ্রাব্য হয়ে উঠেছিল, হয়ে উঠেছিল সে সময়ে এক ধরনের লেখক ফ্যাশন। তিনি আঁস্তাকুড়ে ছুড়ে ফেলেছিলেন সমস্ত প্রথাকে, হয়ে উঠেছিলেন প্রথাবিরোধী, তার সমস্ত বই, প্রবন্ধ, কবিতা সৃষ্টি হয়েছে প্রথাকে অস্বীকার করে, তাঁর প্রবচনগুচ্ছ এ দেশের পাঠক সমাজকে করে তুলেছে সচেতন, আবার ভ-দের করে তুলেছে ক্রুদ্ধ। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে চেয়েছিলেন কিন্তু মার চোখের জল, তা বাস্তবে রূপ পায়নি, কিন্তু তার হয়ে কাজ করেছে তার ‘ব্লাড ব্যাংক’ কবিতাটি এটি পোস্টার হিসেবেও ছাপানো হয়। প্রকাশিত হয় কলকাতার দেশ এবং অমৃতবাজার পত্রিকায়। স্বাধীনতা-উত্তরকালে যখন বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটভূমি আমূল বদলে যায়, মুক্তিযুদ্ধের একজন নিবিষ্ট সমর্থকের পক্ষে রাষ্ট্রের এই অনাচার আর ভ্রষ্টাচার মেনে নেয়া খুবই শক্ত হয়ে পড়ে। ‘পাক সার জমিন সাদ বাদ’- তারই উদ্গীরণ। বারবার টানা হয় সাহিত্য মানের বিচার কিন্তু লেখার এ কায়দা নতুন নয়। পশ্চিমা বিশ্বে তো বটেই, এশিয়া, লাতিন আমেরিকার ঔপন্যাসিকদের মাঝেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে লেখার এ ধরন। শুধু সাহিত্যে নয়, সংগীতের ভুবনেও এর প্রভাব লক্ষণীয়। যেমন ‘র‌্যাপ’ বা ‘হিপ-হপ’ সংগীতের ধারা। ভাষা, শব্দ ও ছন্দে সম্পূর্ণ ভিন্ন। তরুণ আফ্রো-আমেরিকানদের রাজপথের ভাষা ও শব্দে রচিত এ সংগীতের সুর ও প্রকাশের ভঙ্গিতে তাদের দৈনন্দিন জীবনের আচার-আচরণের ছাপ স্পষ্ট। অনেকের কাছে আদিমতা মনে হতে পারে, তবে ধারণাটি মৌলিক ও অকৃত্রিম। দিনের শেষে একজন লেখক একজন মানুষ। তার রাগ ক্রোধ ঘৃণা বের হয়, সেটা হয় লেখনীর মাধ্যমে। সবই কালজয়ী সাহিত্য হবে কি হবে না, এ নিয়ে দ্বিমত কিংবা আলোচনা থাকতে পারে। একজন লেখকের আবেগের প্রকাশকে অন্যজন লেখকের আবেগের প্রকাশের সাথে তুলনা করা কতটুকু যৌক্তিক। আমি বলবো, অসুন্দরের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নাম এটি। শুধু রাজনীতি, সমাজ পরিবর্তন, ধর্ম, দর্শনে আটকে ছিলেন না তিনি। বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী তিনি প্রেম, প্রকৃতি, নদী, নারী কোথায় না ছিলেন অনায়াস? সহজ বোধ্য কিন্তু হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া? আমার জন্য কষ্ট পেয়ো না; আমি চমৎকার আছি। থাকো উৎসবে, তোমাকে তারাই পাক কাছাকাছি যারা তোমার আপন; আমি কেউ নই, তোমার গোপন একান্ত স্বপ্ন; স্বপ্নের ভেতরে কেউ থাকে কতোক্ষণ? বেশ আছি, সুখে আছি; যদিও বিন্দু বিন্দু বিষ জমে বুকে, শুনি ধ্বনি, বলেছিলে, ‘ইশ্ লিবে ডিশ’। (কষ্ট পেয়ো না, পেরোনোর কিছু নেই) ওপরের কবিতায় একজন প্রেমিকের শাশ্বত অভিমানের কালজয়ী রূপটি আঁকা আছে নিতান্ত যত্নে। প্রেম নিয়ে স্ববিরোধিতাও আছে তার মধ্যে। যে তিনি তার প্রবচনে একবার বলেছেন, ‘পুরস্কার অনেকটা প্রেমের মতো; দু-একবার পাওয়া খুবই দরকার, এর বেশি পাওয়া লাম্পট্য।’ সেই তিনি আবার অন্য প্রবচনে বলেছেন, ‘দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম প্রেম বলে কিছু নেই। মানুষ যখন প্রেমে পরে তখন প্রতিটি প্রেমই প্রথম প্রেম।’ কিংবা কালজয়ী এই কবিতাটিই যদি ধরি, আমাদের মাকে আমরা বলতাম তুমি, বাবাকে আপনি। আমাদের মা গরিব প্রজার মতো দাঁড়াতো বাবার সামনে, কথা বলতে গিয়ে কখনোই কথা শেষ ক’রে উঠতে পারতো না। আমাদের মাকে বাবার সামনে এমন তুচ্ছ দেখাতো যে মাকে আপনি বলার কথা আমাদের কোনোদিন মনেই হয়নি। আমাদের মা আমাদের থেকে বড় ছিল, কিন্তু ছিল আমাদের সমান। আমাদের মা ছিল আমাদের শ্রেণির, আমাদের বর্ণের, আমাদের গোত্রের। (আমাদের মা) মধ্যবিত্ত বাঙালি সংসারে মুখ লুকিয়ে থাকা মায়ের চিরচেনা রূপটি কি নিরাভরণ ভাষায় আঁকা। তাই তো আজো কবিতাপ্রেমীদের মুখে মুখে এটি ফেরে। নিজের লেখা সম্পর্কে তাঁর নিজের উক্তি ‘আমার লেখার যে অংশ পাঠককে তৃপ্তি দেয় সেটুকু বর্তমানের জন্যে; আর যে অংশ তাদের ক্ষুব্ধ করে সেটুকু ভবিষ্যতের জন্যে।’ কিংবা ‘আর পঞ্চাশ বছর পর আমাকেও ওরা দেবতা বানাবে; আর আমার বিরুদ্ধে কোনো নতুন প্রতিভা কথা বললে ওরা তাকে ফাঁসিতে ঝুলাবে’ বাঙালির মানসিকতা সম্পর্কে এরচেয়ে রূঢ় বাস্তব সত্য বোধহয় খুব কম লেখকই অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। এই পার্থিব জগত নিয়ে তিনি কতটা নির্মোহ হতে পেরেছিলেন নীচের অংশটুকু পড়লেই সেটা অনুধাবন করা যায়। ‘আমি জানি, ভালো করেই জানি, কিছু অপেক্ষা করে নেই আমার জন্যে; কোনো বিস্মৃতির বিষন্ন জলধারা, কোনো প্রেতলোক, কোনো পুনরুত্থান, কোনো বিচারক, কোনো স্বর্গ, কোনো নরক; আমি আছি, একদিন থাকবো না, মিশে যাবো, অপরিচিত হয়ে যাবো, জানবো না আমি ছিলাম। নিরর্থক সব পুণ্যশ্লোক, তাৎপর্যহীন প্রার্থনা, হাস্যকর উদ্ধত সমাধি; মৃত্যুর পর যেকোনো জায়গাই আমি পড়ে থাকতে পারি,- জঙ্গলে, জলাভূমিতে, পথের পাশে, পাহাড়ের চূড়োয়, নদীতে। কিছুই অপবিত্র নয়, যেমন কিছুই পবিত্র নয়; কিন্তু সবকিছুই সুন্দর, সবচেয়ে সুন্দর এই নিরর্থক তাৎপর্যহীন জীবন। অমরতা চাই না আমি, বেঁচে থাকতে চাই না একশো বছর; আমি প্রস্তুত, তবে আজ নয়। চলে যাওয়ার পর কিছু চাই না আমি; দেহ বা দ্রাক্ষা, ওষ্ঠ বা অমৃত; তবে এখনি যেতে চাই না; তাৎপর্যহীন জীবনকে আমার ইন্দ্রিয়গুলো দিয়ে আমি আরো কিছুকাল তাৎপর্যপূর্ণ করে যেতে চাই। আরো কিছুকাল আমি নক্ষত্র দেখতে চাই, নারী দেখতে চাই, শিশির ছুঁতে চাই, ঘাসের গন্ধ পেতে চাই, পানীয়র স্বাদ পেতে চাই, বর্ণমালা আর ধ্বনিপুঞ্জের সাথে জড়িয়ে থাকতে চাই। আরো কিছুদিন আমি হেসে যেতে চাই। একদিন নামবে অন্ধকার- মহাজগতের থেকে বিপুল, মহাকালের থেকে অনন্ত; কিন্তু ঘুমিয়ে পড়ার আগে আমি আরো কিছুদূর যেতে চাই।’ আমার অবিশ্বাস অসংখ্য ব্যাপার নিয়ে বিনা দ্বিধায় নির্মোহ মতামত দ্ব্যর্থহীন ভাষায় তিনি লিখেছেন। সেরকম একটি উপন্যাস ‘শুভব্রত, তার সম্পর্কিত সুসমাচার’। বিক্রমপল্লীর যুবরাজ শুভব্রত রূপবান, প্রতিভাবান ও কিছুটা অস্বাভাবিক। তার পিতা ন¤্রব্রত আশা করেছিল সে একদিন হবে সমগ্র মহারাজ্যের মহারাজ। পিতা তাকে কিশোর বয়সে রাজা ও রাজত্বের সাথে পরিচিত করানোর জন্য নিয়ে যায় মহারাজ্যের রাজধানী রাজগৃহে এবং সেখানেই বদলে যায় তার নিয়তি। একদল নগ্ন উন্মাদ কিশোর শুভব্রতের মধ্যে আবিষ্কার করে তাদের ত্রাতাকে, যে বহুদেবতার ধর্ম বাতিল করে প্রতিষ্ঠিত করবে একবিধাতার ধর্ম, বদলে দেবে বিশ্বকে। তারপর থেকে বদলে যেতে থাকে শুভব্রত, অস্বাভাবিক হয়ে উঠতে থাকে, যুবরাজের জীবন ছেড়ে বেছে নেয় ত্রাতার কঠিন জীবন। বহুদেবতাবাদ ছেড়ে প্রচার করতে থাকে একদেবতার ধর্ম। যেমন তৈরি হয় অনুসারী তেমনই শত্রু, বিতাড়িত হয় পিতার রাজ্য থেকে; কিন্তু তার ভেতরে কাজ করে এক অদ্ভুত অলৌকিক শক্তি। সে জয় করে নতুন রাজ্য, পুনরাধিকার করে পিতার রাজ্য, আর প্রতিষ্ঠা করতে চায় বিধাতার মহারাজ্য। বিধাতার কঠোর অনুশাসনে সে বন্দি করে ফেলে সবাইকে, এমনকি নিজেকেও। একদিন তার ভুল ভাঙে, বুঝতে পারে যে বিধাতার ধর্ম সে প্রচার করছে, সে বিধাতা আসলে তারই সৃষ্টি। তার সেনাপতিরা তা স্বীকার করতে রাজি হয় না, তারা পেয়ে গেছে শক্তির স্বাদ। তাদের অসুবিধা হতে পারে ভেবে তারা খুন করে শুভব্রতকে, বিধাতার নামে বেরিয়ে পড়ে রাজ্যের পর রাজ্য জয় করতে। হুমায়ুন আজাদ এই অসাধারণ উপন্যাসে দেখিয়েছেন কীভাবে উদ্ভব ঘটে ধর্ম ও ধর্মপ্রবর্তকদের। বিভিন্ন বিধাতার বন্দনায় মুখর অনন্য এই উপন্যাস বাঙলা ভাষায় তো বটেই অন্যান্য ভাষাতেও দুর্লভ। আরজ আলী মাতুব্বরের পরে কেউ এ রকম সহজ ভাষায় এই প্রসঙ্গে লিখলেন। তাঁর আরেকটি অনবদ্য রচনা ‘রাজনীতিবিদগণ’, এত রসে রঙে টইটম্বুর বই আর পড়েছিল বলে মনে পড়ে না! প্রতিটা বাক্যে তার সূক্ষ্ম রসবোধের পরিচয় মেলে। একসাথে সাধু, চলিত, আঞ্চলিক, ইংলিশ, স্ল্যাং সবকিছুর মিশ্রণে যে একটা অন্যরকম স্বাদ তৈরি হতে পারে তা এই বই না পড়লে বোঝা যাবে না। লেখক দাবি করেন রাজনীতিবিদদের মুখের ভাষা হিসেবে। উপন্যাসে কথা বলেছে জনগণ, লেখক নন। একজন লেখক কতটা সাহসী আর স্পষ্টবাদী হতে পারে ভাবাই যায় না, নিজেকে অতিক্রম করে লিখেছেন তিনি এই লেখা। লেখক খুবই নাটকীয় ভঙ্গিতে ব্যঙ্গ পরিহাসের মাধ্যমে রূপক অর্থে আমাদের দেশের রাজনীতিবিদগণের কীর্তিকলাপ অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে তুলে ধরেছেন। এতটাই স্পষ্ট যে, আমার মনে হয় শত বছর পরেও যদি কেউ এই বইটি পড়ে তবে তার বাংলাদেশের নির্বাচন, গণতন্ত্র, রাজনীতিবিদদের নিয়ে সম্পর্কে জানতে বুঝতে এতটুকু কষ্ট হবে না। হায়রে রাজনীতি! একজন সচেতন নাগরিক কিংবা মানুষ হিসেবে তার লেখায় বারবার সমসাময়িক পটভূমি, মানুষের মানসিকতা, রাজনীতি উঠে এসেছে, প্রতিটি লেখাই একটি সময়ের দলিল। বাস্তবতাকে অস্বীকার করে শুধুই ফুল-লতা-পাতা, প্রেম-বিরহ তার কবিতা বা উপন্যাসের বিষয় হয়ে ওঠেনি। কিংবা বলতে গেলে তার লেখায় কোনো কাল্পনিক চরিত্র বা পটভূমিই নেই। সেই প্রেক্ষাপটে ‘নারী’ সম্ভবত সবচেয়ে আলোচিত বই তার, প্রথম বেরোয় উনিশ বিরানব্বইতে, তারপর বেরোয় তিনটি সংস্করণ ও বহু পুনর্মুদ্রণ; এবং উনিশে নভেম্বর উনিশে পঁচানব্বইতে সরকার নিষিদ্ধ করে ‘নারী’। সাড়ে চার বছর পর উচ্চ বিচারালয় রায় দেয় যে ‘নারীর’ নিষিদ্ধকরণ আদেশ অবৈধ। এ রায়ের ফলে বাঙলাদেশে প্রথম স্বীকৃতি পেল চিন্তা প্রকাশের স্বাধীনতা। নারী বাঙলা ভাষার প্রথম নারীবিষয়ক গ্রন্থ, যাতে নারীবাদী কাঠামোতে বিশ্লেষণ করা হয়েছে পুরুষতান্ত্রিক সভ্যতায় নারীর অবস্থা ও অবস্থান। কেউ নারী হয়ে জন্ম নেয় না, পুরুষতন্ত্র ক্রমশ একটি মানুষকে করে তোলে নারী। হুমায়ুন আজাদ বর্ণনা করেছেন নারী পুরুষের লৈঙ্গিক রাজনীতির রূপ, রুশো রাসকিন, ফ্রয়েড, রবীন্দ্রনাথের নারী বিরোধিতার এবং মিল। রামমোহন, বিদ্যাসাগরের নারীমুক্তির তাত্ত্বিক ও বাস্তব কর্মরাশি। দিয়েছেন ওলস্টোনক্র্যাফট ও রোকেয়ার গভীর ব্যাখ্যা; বর্ণনা করেছেন নারীর লিঙ্গ ও শরীর, বালিকা, কিশোরী, তরুণীর বেড়ে ওঠা, ও নারীর স্বপ্ন সমস্যা প্রেমে কাম সংসার। তিনি পরিচয় দিয়েছেন নারীবাদী সাহিত্যতত্ত্বের, বিশ্লেষণ করেছেন বঙ্গীয় ভদ্রমহিলার উৎপত্তি এবং বাঙলার নারী ঔপন্যাসিকদের ব্যাখ্যা করেছেন নারীবাদী দৃষ্টিতে, যা আগে কখনো হয়নি। হুমায়ুন আজাদ রূপরেখা তৈরি করেছেন নারীপুরুষের সাম্যভিত্তিক এক নতুন সভ্যতার। ১৯৮৬ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার এবং ২০১২ সালে সামগ্রিক সাহিত্যকর্ম এবং ভাষাবিজ্ঞানে বিশেষ অবদানের জন্যে মরণোত্তর একুশে পদক পাওয়া এই কৃতী লেখক দুহাজার চার সালের এগারোই আগস্ট জার্মানীতে নিঃসঙ্গ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App