×

বিনোদন

সত্য ঘটনা অবলম্বনে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০১৯, ০৮:৪৪ পিএম

সত্য ঘটনা অবলম্বনে
স্কুলের বাথরুমে গিয়েছিল ছেলেটি। রোজ যেভাবে যায়। সেখানে লুকিয়ে ছিল মৃত্যু। ছেলেটি জানত না। গরমের ছুটি উপলক্ষে প্রায় এক মাসের জন্য স্কুল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল সে দিন। দপ্তরি বাথরুমের তালা লাগিয়ে চলে গিয়েছিল। সেখানে আটকে পড়ে ছেলেটি বাঁচার জন্য অনেক চেষ্টা করেছিল। এক সময় শীতল মৃত্যু ছেলেটিকে টেনে নিয়েছিল। নীল আকাশে চিরতরে হারিয়ে গিয়েছিল সে। আশির দশকে নারায়ণগঞ্জের এক স্কুলের এই মর্মান্তিক ঘটনা আলোড়িত করেছিল চিত্রপরিচালক আজিজুর রহমানকে ও সুরকার-প্রযোজক সত্য সাহাকে। একেবারেই স্বল্প বাজেটে তারা নির্মাণ করেছিলেন ‘ছুটির ঘণ্টা’। রাজ্জাক-শাবানা অভিনীত এ ছবি অল্প কিছুদিনের মধ্যে চলচ্চিত্রের ইতিহাসে অন্যতম ক্ল্যাসিক ছবি হিসেবে জায়গা করে নেয়। কয়েক দশক ধরে ‘ছুটির ঘণ্টা’ দর্শকদের চোখের জলের কারণ। এখনো দর্শকরা এ ছবির কথা উঠলে নস্টালজিক হয়ে ওঠেন, হয়ে ওঠেন আবেগতাড়িত। সত্য ঘটনার আশ্রয়ে নির্মিত ছবির প্রতি দর্শকদের দুর্বলতা সবসময়ই বেশি। কিন্তু ঢাকাই সিনেমায় কাল্পনিক গল্প-কাহিনীরই জয়জয়কার। এখানে সত্য ঘটনা থেকে ছবি নির্মাণের দায় খুব কম নির্মাতাই অনুভব করেন। আর যারা সত্য ঘটনায় প্রেরণা খুঁজে নেন নতুন চিত্রনাট্যের, তাদের অনেকেই আর দর্শকদের কাছে পৌঁছাতে পারেন না। সাম্প্রতিক কয়েক বছরে যে নির্মাতারা সত্য ঘটনাকে ছবির উপজীব্য করতে চেয়েছেন, তারাই শেষ পর্যন্ত হার মেনেছেন। ২০১৪ সালে রাজধানীর শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনিতে পরিত্যক্ত পানির পাইপের মধ্যে পড়ে মর্মান্তিক মৃত্যু হয় মো. জিহাদের। এ ঘটনাকে অবলম্বন করে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়া ছবি নির্মাণের ঘোষণা দেয়। এর কাহিনী ও সংলাপ লেখার কথা ছিল নাজিমউদ্দিনের। তখন ছবির নাম ঠিক হয়নি। কে পরিচালনা করবেন তাও ছিল অনিশ্চিত। এখন পর্যন্ত ঘোষণায়ই সীমাবদ্ধ আছে ছবিটি। অনেকে জিহাদের ঘটনার সঙ্গে মিল পেয়েছিলেন তেলেগু ছবি ‘আরামে’র কাহিনীর। ধারণা করা হয়েছিল ছবিটি ‘আরামে’র রিমেক হবে। চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস দীর্ঘদিন অন্তরালে থেকে ২০১৭ সালের ১০ এপ্রিল হঠাৎ করে পুত্রসন্তান আব্রাম খান জয়কে নিয়ে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের লাইভ অনুষ্ঠানে হাজির হন। এতে শাকিব খানের সঙ্গে তার বিয়ে, সংসার ও পুত্র সন্তানের কথা প্রকাশ করেন অপু। দেশব্যাপী বিষয়টি তোলপাড় সৃষ্টি করে। তৎক্ষণাৎ চিত্রপ্রযোজক খোরশেদ আলম খসরু শাকিব-অপুর ঘটনা নিয়ে ছবি নির্মাণের ঘোষণা দেন। শাহীন সুমন ছবিটি পরিচালনা করবেন বলে জানানো হয়। দুই বছর পেরিয়ে গেলেও ‘অপুর সংসার’ ছবিটি সম্পর্কে আর টুঁ-শব্দটি শোনা যায়নি। মাদকাসক্ত কিশোরী ঐশী। মাদকের জন্য খুন করেছিল নিজের বাবা-মাকে। ২০১৩ সালে দেশজুড়ে ঘৃণা ছড়িয়ে পড়েছিল এ ঘটনায়। ঐশীর করুণ পরিণতি নিয়ে ২০১৬ সালে ‘তোর জন্য’ নামে একটি ছবি নির্মাণের ঘোষণা দেন বদিউল আলম খোকন। এতে ঐশীর ভ‚মিকায় অভিনয় করার কথা চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির। তাকে যমজ দুই বোনের চরিত্রে দেখা যাবে বলে জানানো হয়। কমল সরকার গল্প লিখছিলেন। মোহাম্মদ রফিকুজ্জামানে তৈরি করছিলেন চিত্রনাট্য। প্রি-প্রডাকশনেই খতম হয়ে গেছে ছবিটি। পরে আর কোনো খবর মেলেনি। সাম্প্রতিক ও জাতীয় ইস্যুকে ভিত্তি করে ছবি ছবি নির্মাণের ঘোষণা এভাবেই আসে এবং মাঠে মারা যায়। এ কারণে সাম্প্রতিক দুটি ঘটনায় ছবি নির্মাণের ঘোষণার পর সমালোচনা হয়েছে। আলোচনায় আসার জন্য হুটহাট ঘোষণা দিয়ে পিছু হটে যাওয়া নির্মাতারা দুর্নামের ভাগিদার হয়েছেন। নির্দোষ তরুণ জাহালম প্রায় ৩ বছর কারাভোগ করেন। তিন বছর পূর্ণ হওয়ার দু’দিন আগে হাইকোর্টের নির্দেশে মুক্তি পান জাহালম। চলতি বছর এ ঘটনা নিয়ে দেশব্যাপী হুলস্থুল পড়ে যায়। জাহালমকে নিয়ে ছবি নির্মাণের ঘোষণা দিয়ে রাতারাতি আলোচনায় উঠে আসেন মারিয়া তুষার। কিন্তু বাদসাধে আদালত। অঙ্কুরেই ছবিটি নষ্ট হয়ে যায়। সন্দেহ জেগেছে নুসরাত জাহান রাফিকে নিয়ে ঘোষিত ছবিটিও আদৌর আলোর মুখ দেখবে কিনা। গত ৬ এপ্রিল ফেনীর সোনাগাজীতে দুষ্কৃতকারীরা আগুন ধরিয়ে দেয় মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির গায়ে। ১০ এপ্রিল মৃত্যুর কাছে হেরে যান নুসরাত। এ ঘটনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রবীণ নির্মাতা দেলোয়ার জাহান ঝন্টু ‘নুসরাত’ নামে একটি ছবি নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন। চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট অনেকে মনে করেন, আলোচনায় থাকার কৌশল হিসেবেই ঘোষণা আসে ইস্যুভিত্তিক ছবি নির্মাণের। কোনো ধরনের ভাবনা-চিন্তা-পরিকল্পনা ছাড়াই ঘোষণা দিয়ে দেয়া হয়। তারপর বছর পেরিয়ে যায়। ইস্যুও পুরনো হয়ে যায়। নির্মাতারাও ঠাণ্ডা হয়ে যান। চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের আবার ভিন্ন মত। তাদের মতে, জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ঘটনানির্ভর ছবি বানালে সেন্সর বোর্ড হয়ে ওঠে নির্মাতার সবচেয়ে বড় শত্রু । আলোচিত রানা প্লাজার হৃদয়বিদারক ঘটনা নিয়ে নির্মিত ‘রানা প্লাজা’ নানা মহলের আপত্তির মুখে পড়েছিল। আদালতের চৌকাঠ পেরুলেও সরকারি গেজেটে নিষিদ্ধ হয়ে আছে সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত ‘রানা প্লাজা’। অনেকের মতে, আবেগতাড়িত হয়ে ছবির ঘোষণা দিলেও পরে বাস্তবতা বিবেচনা করে পিছু হটেন নির্মাতারা। যদিও সত্য ঘটনা অবলম্বনে ছবি নির্মাণ এখন প্রতিবেশী দেশের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির ট্রেন্ড। কিন্তু এই ট্রেন্ডে এখনো অভ্যস্ত হয়ে ওঠেননি ঢাকাই সিনেমার নির্মাতারা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App