×

জাতীয়

রোহিঙ্গা স্থানান্তর অনিশ্চিত

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ এপ্রিল ২০১৯, ১১:৫৭ এএম

রোহিঙ্গা স্থানান্তর অনিশ্চিত
অনিশ্চয়তায় ভাসানচরে এক লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা স্থানান্তর প্রক্রিয়া! মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন পরিকল্পনার মতোই ভেস্তে যেতে পারে সরকারের এই পরিকল্পনাও। যদিও ইতোমধ্যে দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের সাময়িক বসবাসের জন্য সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করেছে সরকার। চলতি এপ্রিলের মধ্যেই এই স্থানান্তর প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে কিছু এনজিওসহ জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কমিশন (ইউএনএইচসিআর) নিরাপত্তা ঝুঁকির অজুহাত তুলে এর বিরোধিতা করছে। রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় যে কোনো স্থানে যেতে আগ্রহী হতে হবে জাতিসংঘের এমন শর্তই এখন কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার ভাসানচরের নব প্রতিষ্ঠিত পুনর্বাসন কেন্দ্রে স্থানান্তর প্রক্রিয়ার। মূলত ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইনে সামরিক অভিযান শুরুর পর সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ায় আশ্রয় নেয়। যেখানে আগে থেকেই আশ্রয়ে ছিল আরো প্রায় চার লাখ। বর্তমানে উপজেলা দুটির শরণার্থী শিবিরে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে বসবাস করছেন ১১ লাখ রোহিঙ্গা। কক্সবাজারের ওপর চাপ কমাতে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ভাসানচরে ৪৫০ একর জমির ওপর আশ্রয় শিবির নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয় নৌবাহিনীকে। সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়েছে। সামনে ঝড়-বৃষ্টির দিন। ঝড়-বৃষ্টিতে পাহাড় ধসে রোহিঙ্গাদের জীবন বিপন্নের আশঙ্কা রয়েছে। আর তাহলে সারা দুনিয়ায় দেশের দুর্নাম হবে। সেই দায় এড়াতে চায় সরকার। সংশ্লিষ্টদের মতে, সরকারের নীতিনির্ধারকরা মনে করেছিলেন, ভাসানচরে বিকল্প পুনর্বাসন কেন্দ্রে যেতে রাজি হবে রোহিঙ্গারা। ওই কেন্দ্রে তাদের কৃষিকাজ ও মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহের যে সুযোগ সরকার সৃষ্টি করেছে তাতে রোহিঙ্গারা আকৃষ্ট হবে। কিন্তু রোহিঙ্গাদের মধ্যে ভাসানচর কোনো আকর্ষণ তৈরি না করায় ঝুলে গেল স্থানান্তর প্রক্রিয়া। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে সরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী কঠোর অবস্থানে রয়েছেন। গত বুধবার সংসদ ভবনে নিজ কার্যালয়ে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপো গ্রানডি, জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল (মানবাধিকার) মার্ক লোকোক এবং ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব মাইগ্রেশনের মহাপরিচালক আন্তোনিও ভিতোরিমোর সঙ্গে বৈঠকে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে সহায়তা করার জন্য জাতিসংঘকে আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এটা বিরাট বোঝা। কতদিন এটা চলবে? আমাদের স্থানীয় মানুষেরা ভুক্তভোগী। চাষের জমিগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, বন নষ্ট হচ্ছে। পাহাড়ি এলাকা, এখানে যে কোনো সময় ভূমিধস হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়সহ যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে এরা আক্রান্ত হতে পারে, ঝুঁকিটা বেশি। রোহিঙ্গাদের ফিরে যেতে হবে। তারা কীভাবে ফিরে যাবে, সে বিষয়ে তোমরা সাহায্য করতে পার। কিছু রোহিঙ্গা ভাসানচরে সরিয়ে নেয়াই উত্তম হবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। এদিকে আগামী বর্ষায় কক্সবাজারে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা ভূমিধসসহ অন্য কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রাণ হারালে তার জন্য বাংলাদেশ নয় বরং জাতিসংঘসহ পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো দায়ী থাকবে বলে ফিলিপো গ্রানডি, মার্ক লোকোক এবং আন্তোনিও ভিতোরিমোকে সাফ জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। গতকাল বৃহস্পতিবার নিজ কার্যালয়ে জাতিসংঘের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে এক সৌজন্য সাক্ষাতে তিনি তাদের এসব কথা জানান। তবে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের মৌলিক অধিকার কতটুকু নিশ্চিত হবে এবং জাতিসংঘ ও সহযোগী সংস্থার কর্মকর্তাদের সেখানে প্রবেশের সুবিধা কতটা থাকছে সে সম্পর্কে আরো স্পষ্ট ধারণা চায় সংস্থাটি। জাতিসংঘ বলছে, ভাসানচরে স্থানান্তর অবশ্যই রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় হতে হবে। এ ব্যাপারে শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের প্রধান মোহাম্মদ আবুল কালাম এনডিসি ভোরের কাগজকে বলেন, স্থানান্তরের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিষয়টি জড়িত। এ ক্ষেত্রে সরকারই ঠিক করবে কি করা উচিত আর কি করা উচিত নয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App