×

জাতীয়

যে কোনো দিন শপথ নেবেন বিএনপির ৫ এমপি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০১৯, ১১:২৩ এএম

যে কোনো দিন শপথ নেবেন বিএনপির ৫ এমপি
যে কোনো দিন শপথ নিতে পারেন একাদশ জাতীয় সংসদে বিএনপির নির্বাচিত সাংসদরা (এমপি)। তবে এ ক্ষেত্রে দলীয়প্রধান খালেদা জিয়াকে জামিনে হলেও মুক্তি দিতে হবে। এ নিয়ে পর্দার অন্তরালে সরকারের সঙ্গে চলছে সমঝোতার চেষ্টা। সমঝোতা না হলেও দলীয় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়া নির্বাচিত অপর পাঁচ এমপি শপথ নিতে পারেন। এ নিয়ে তারা নিজেদের লাভ-ক্ষতির হিসাব কষছেন। নিজেদের মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক করছেন। করছেন ফোনালাপ। আরো দু-চার দিন অপেক্ষা করে শেষ পর্যন্ত শপথের অনুমতি না মিললে আগামী ৩০ এপ্রিলের আগে যে কোনো দিন শপথ নেবেন তারা। সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচিত এমপিরা শপথ না নেয়ার কথা জানান। পরবর্তী সময় গণফোরামের দুজন শপথ নিয়েছেন। এরপরই বিএনপি থেকে নির্বাচিত দলীয় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (বগুড়া-১), মো. জাহিদুর রহমান (ঠাকুরগাঁও-৫), মোশাররফ হোসেন (বগুড়া-৪), উকিল আবদুস সাত্তার (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২), হারুনুর রশিদ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২) এবং মো. আমিনুল ইসলাম (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩) শপথ নিতে পারেন বলে গুঞ্জন শুরু হয়। কিন্তু দলটির হাইকমান্ড থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়া হয়, তারা শপথ নেবেন না। এদিকে চলতি মাসের ২৯ তারিখের মধ্যে শপথ না নিলে তাদের সাংসদ পদ বাতিল হবে। এ পরিস্থিতিতে বিএনপির এমপিদের শপথ নেয়ার বিষয়টি ফের আলোচনায় আসে। নির্বাচিত এমপিরাও দলীয় মহাসচিবের সঙ্গে এ নিয়ে বৈঠক করেছেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা হয়। নির্বাচিত এমপিদের শপথ না নিতে স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন তারেক রহমান। এরপর থেকেই নির্বাচিত এমপিরা দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন। একদিকে এলাকার জনগণের চাপ, অন্যদিকে সরকারের পক্ষে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহলের চাপে রয়েছেন বিএনপির এমপিরা। এ পরিস্থিতিতে তারা সমঝোতার প্রস্তাব দিয়েছেন। দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে জামিনে মুক্তি দিলে শপথ নিতে পারেন বিএনপির এমপিরা। এ তথ্যটি তারা সরকারকে জানিয়েও দিয়েছেন। সরকারও তাদের প্রস্তাব নিয়ে ভাবছে। বিএনপির নির্বাচিত এমপিরা জানান, দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ শপথ ইস্যুতে তারা বৈঠক করেছেন। দলের পক্ষ থেকে তাদের সাফ জানিয়ে দেয়া হয়েছে শপথ নিলে বহিষ্কার করা হবে। দলের বাইরে গিয়ে শপথ নেয়ার ইচ্ছা না থাকলেও তারা আলাদা মিটিং করে লাভ-ক্ষতির হিসাব কষছেন। এলাকার জনগণ এবং বিশেষ মহলের চাপে শেষ পর্যন্ত শপথের বিষয়ে তারা একমত হতে পারেন। এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও-৫ আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচিত মো. জাহিদুর রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, এখানো দলীয় সিদ্ধান্ত পাইনি। তবে সংসদে যেতে এলাকার জনগণের চাপ রয়েছে। আমরা মহাসচিবের সঙ্গে এ বিষয়ে বসেছিলাম। মহাসচিবকে বলেছি, আমরা সংসদে গেলে যদি খালেদা জিয়ার মুক্তি হয়, তাহলে শপথ নিতে পারি। তিনি আরো বলেন, আমরা ৫ জন আলাদাভাবে বসে শপথ নেয়-না নেয়ার লাভ-ক্ষতি নিয়ে আলাপ করেছি। তবে এখনো সিদ্ধান্ত নেইনি। তিনি বলেন, দলের নীতিনির্ধাণী পর্যায়ের নেতারা প্রেসক্লাবে সভা-সমাবেশে যেসব কর্মসূচি দেন তাতে দলের অগ্রগতি কিংবা ম্যাডামের মুক্তি হবে না। এর চেয়ে সংসদের দাঁড়িয়ে নিজেদের দাবির বিষয়ে আওয়াজ তুললে সেটা বেশি কার্যকর হবে বলেই মনে হয়। বগুড়া-৪ আসন থেকে নির্বাচিত মোশাররফ হোসেন বলেন, ম্যাডামকে মুক্তি দিলে শপথের ব্যাপারে বিষয়টি নিয়ে ভেবে দেখব। জামিন দিয়েও সরকার মামলা চালাতে পারে। এটা করলে আমরা ভেবে দেখব। আমরা এখনো দলীয় সিদ্ধান্তের দিকেই তাকিয়ে আছি। আমরা মনে করি, দলীয় সিদ্ধান্তই আমাদের জন্য মঙ্গলজনক। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ থেকে নির্বাচিত এমপি উকিল আব্দুল সাত্তার বলেন, সংসদে যাওয়ার ইচ্ছা আছে। তবে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নয়। অন্যদিকে শপথ নেবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ সদর আসনের নির্বাচিত বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব হারুনুর রশিদ। তবে তিনি দলের সিদ্ধান্তের জন্য আরো কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে চান। গত সোমবার তার নিজ বাসভবনে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমার ওপর জনগণের চাপ আছে। দলীয় ফোরামেও সংসদে যাওয়ার বিষয়ে ইতিবাচকই কথা বলেছি, তবে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এখনো সময় আছে, দেখা যাক কী হয়। দলের ৬ এমপির শপথের বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, একাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি থেকে নির্বাচিত ছয় সংসদ সদস্যের শপথ নেয়ার প্রশ্নই আসে না। খালেদা জিয়ার মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত সংসদে যাওয়া নিয়ে কোনো আলোচনা নয়। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সম্মতিক্রমে আমরা স্থায়ী কমিটির সদস্যরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সুতরাং এ সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসা যাবে না। সূত্র জানায়, ছয়জন সাংসদের সংসদে যোগ দেয়ার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ভারতসহ প্রভাবশালী রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে দিয়েও বিএনপিকে চাপ দেয়া হচ্ছে। আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে শপথ না নিলে বিএনপির ৬ জন নির্বাচিত সাংসদের সদস্য পদ খারিজ হবে। তারা যদি সংসদে না যায় তাহলে খালেদা জিয়াকেও পিজি হাসপাতাল থেকে সরাসরি কেরানীগঞ্জ জেলখানায় যেতে হবে। এদিকে কারাগারে থাকলেও সাংসদদের শপথ বা তার প্যারোল কিংবা সরকারের সঙ্গে পর্দার অন্তরালে কোনো ইস্যুতে সমঝোতার চেষ্টা হলে সে ব্যাপারে মূল সংকেত খালেদা জিয়ার কাছ থেকেই আসতে হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, সংসদ অনেক বড় একটি বিষয়। সেখানে দলের পক্ষ থেকে কথা বলার লোক থাকা দরকার। বিগত সংসদ নির্বাচন ও উপজেলা নির্বাচনে নানা অনিয়ম হয়েছে, তবে সেখানে গিয়েই কথা বলতে হবে। তিনি বলেন, দল যদি কোনো দিকে যেতে চায় তাহলে এর মধ্যেই যেতে হবে। তবে সবারই নীতির মধ্যে থাকা উচিত। সব কিছু মিলিয়ে খালেদা জিয়াকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বিএনপির রাজনীতি ও দলের স্বার্থে কোনো সিদ্ধান্তের আসা প্রয়োজন বলে মনে করছেন দলের নেতাদের কেউ কেউ। খালেদা জিয়াকে এখন রাজনীতি, দল, সংগঠনের স্বার্থে কোনো একটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বিএনপির নেতাদের অনেকেই মনে করছেন, সরকার খালেদা জিয়াকে জামিনে মুক্তি দেবে না। তাই শপথ নেয়ার শর্তে সরকার যদি তাকে মুক্তি দেয় তবে এই মুহূর্তে সেটাই করা উচিত।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App