×

অর্থনীতি

নেতিবাচক ধারায় দেশের আর্থিক সূচক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০১৯, ১২:১৮ পিএম

নেতিবাচক ধারায় দেশের আর্থিক সূচক
রোজা শুরুর আগেই বেড়েছে সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম। সরকারের উন্নয়ন ব্যয়ে চলছে ধীরগতি। এডিপির অর্থ খরচ করতে না পেরে ফেরত পাঠাচ্ছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়। কর্মসংস্থান এবং বেসরকারি বিনিয়োগেও চলছে ভাটা পরিস্থিতি। এদিকে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে মন্দা পরিস্থিতি, ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ, শেয়ারবাজারের নিম্নগতিসহ নানা কারণে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি এক ধরনের চাপের মধ্যে রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে আগামী বাজেটকে সামনে রেখে বাজেট সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটি সভা ডাকা হয়েছে। এ ছাড়া এসব সংকট পর্যালোচনা এবং পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে আজ বুধবার আর্থিক মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হারসংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের বৈঠক ডেকেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বিশেষজ্ঞদের মতে, এখনই বাজার নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ ছাড়া ব্যাংকিং খাতের গলার কাটা-খ্যাত খেলাপি ঋণ যে কোনো উপায়ে কমিয়ে আনা প্রয়োজন। অন্যথায় ব্যাংক খাত গভীর সংকটে পড়বে। যার প্রভাব পড়বে সামগ্রিক অর্থনীতিতে। শ্রমবাজারগুলো নিয়েও সরকারকে ভাবতে হবে। নতুন নতুন শ্রমবাজারের সন্ধান করতে হবে। এ ছাড়া বেসরকারি বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়াতে টেকসই উদ্যোগ গ্রহণ করা এখন খুবই জরুরি। রমজান মাসে কোনো পণ্যের দাম বাড়বে না বাণিজ্যমন্ত্রীর এমন ঘোষণার পরেও দিন দিন বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। চাল, ডাল, মাছ মাংস, সবজিসহ প্রায় সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে গত বছরের তুলনায়। বেড়েছে পরিবহন খরচ এবং বাসা ভাড়াও। ফলে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ছে অস্বাভাবিক হারে। এর প্রভাবে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ দাঁড়ায়। মার্চে তা আরেক দফা বেড়ে দাঁড়ায় ৫ দশমিক ৫৫ শতাংশে। আগামী মাসেই রোজা ও পবিত্র ঈদুল ফিতর পরের মাসেই। ধারণা করা হচ্ছে, মূল্যস্ফীতির এই ঊর্ধ্বমুখী চাপ এই মুহূর্তে কমিয়ে আনা কঠিন। বরং সামনের দিনগুলোতে এই চাপ আরো বাড়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে অর্থনীতির প্রায় প্রতিটি সূচকই রয়েছে নেতিবাচক ধারায়। সামষ্টিক অর্থনীতির এসব সংকটের মাঝেও আগামী বাজেটের রূপরেখা চ‚ড়ান্ত করতে যাচ্ছে সরকার। নতুন অর্থমন্ত্রীর সামনে প্রথম বাজেটটি এক ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়েছে। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ডলার সংকট বাড়ছেই, পাশাপাশি বাড়ছে ডলারের দাম। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে সময়মতো বিদেশি ব্যাংকের অর্থ পরিশোধ করাও কঠিন হয়ে যাচ্ছে। ফলে গুনতে হচ্ছে জরিমানা। এদিকে পরিস্থিতি সামাল দিতে বাজারে ডলার ছাড়ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতেও বাজার স্থিতিশীল হচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রতি ডলার এখন বিক্রি হচ্ছে ৮৪ টাকা ১৫ পয়সায়। গত মাসের শেষদিকেও প্রতি ডলারের দাম ছিল ৮৪ টাকা। তবে কার্ব মার্কেটে ডলারের দাম আরো চড়া। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৮৬ টাকায়ও পর্যন্ত ডলার বিক্রি হচ্ছে। রাজস্ব আয়ের সূচকে প্রায় ৩৪ হাজার কোটি টাকা পিছিয়ে রয়েছে। এদিকে আগামী অর্থবছরের প্রথম দিন থেকেই নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর করা হবে। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে রাজস্ব আদায়ে পিছিয়ে থাকায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫০ হাজার কোটি টাকা কমানোর প্রস্তাব করে এনবিআর। তবে উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থের সরবরাহ ঠিক রাখার কথা মাথায় রেখে এনবিআরের দাবি প্রত্যাখ্যান করে ১৬ হাজার কোটি টাকা কমানো হয়। রাজস্ব আয় যেমন কমছে তেমনি সরকারের উন্নয়ন ব্যয়েও চলছে ধীরগতি। বিশেষ করে ফার্স্ট ট্র্যাকভুক্ত প্রকল্পের কাজের গতি কমেছে সাম্প্রতিক সময়ে। কাজের ধীরগতির কারণে চলতি অর্থবছরের বরাদ্দের অর্থ ফেরত পাঠাচ্ছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো। এ জন্য সামনের দিনগুলোতে এসব প্রকল্পের কাজের গতি বাড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অন্যথায় উচ্চ প্রবৃদ্ধির ধারা ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করে অর্থ বিভাগ। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ ভোরের কাগজকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল রয়েছে। আবার অর্থনৈতিক সূচকগুলোয় নিম্নগতি। এসব ক্ষেত্রে একটা নিয়ন্ত্রণ দরকার। এ জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সামগ্রিক কার্যক্রম আরো জোরদার করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। রপ্তানি আয় কিছুটা বাড়লেও প্রবাসী আয় ধারাবাহিকভাবে কমছে। কমছে বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর হার। ফলে বৈদেশিক শ্রমবাজার চরম সংকটের মধ্যে পড়েছে। এদিকে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ ইতিহাসের যে কোনো সময়ের তুলনায় বেশি। এক বছরে খেলাপি ঋণ প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে। এর আগে এক বছরে কখনো এত বেশি বাড়েনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে দেখা গেছে, গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ১০ দশমিক ৩০ শতাংশ। রাইট অফ (অবলোপন) করা ঋণখেলাপি ঋণের সঙ্গে যোগ করলে যা দেড় লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে দেখা গেছে, মোট খেলাপি ঋণের অর্ধেকই রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ বাণিজ্যিক ব্যাংকের। এদিকে দেশের উভয় শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের চরম আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। যার ফলে হাতাশাগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক প্রতিদিনই কমছে। গত তিন মাসে ডিএসইর বাজার মূলধন প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা কমেছে, যা বিনিয়েগাকীরদের চরম সংকটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App