×

জাতীয়

ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০১৯, ১০:৩৪ এএম

ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে
রাজধানীর কুড়িল থেকে ১১ মাস বয়সী ছেলে তাজিফকে কোলে নিয়ে সকাল বেলা মহাখালীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) তে এসেছিলেন তৌহিদা বেগম। সোমবার সকাল থেকে তাজিফের বমি আর পাতলা পায়খানা শুরু হয়। ছেলের মুখে চুমু খেয়ে তৌহিদা বলেন, একদিনেই আমার ছেলেটা কেমন নিস্তেজ হয়ে পড়েছে। বাবুর শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে মনে হয়। কেমন হা করে শ্বাস নিচ্ছে। কোনো রকমে রাতটা পার করে সকালেই চলে আসছি হাসপাতালে। বমি ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গতকাল মঙ্গলবার মিরপুর থেকে রায়ান (৫), লক্ষ্মীবাজার থেকে আবীর দে (সাড়ে ৪ বছর), মানিকনগর থেকে সাউদা মনি (সাড়ে ৫ বছর), মিরপুর ১২ থেকে রেহান (৩ মাস ২১ দিন) ভর্তি হয়েছে আইসিডিডিআর,বিতে। শুধু শিশুরাই নয়, একই অসুখে আক্রান্ত হয়ে সেখানে ভর্তি হচ্ছেন প্রাপ্ত বয়স্করাও। সোমবার রাত দেড়টায় টঙ্গী থেকে এসে ভর্তি হয়েছেন জহির মিয়া (৪৯)। আইসিডিডিআর,বির তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল মাসের শুরু থেকেই হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ৮ থেকে ৯শ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। এদের মধ্যে ৩৫ শতাংশ শিশু। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের তথ্য মতে, পহেলা এপ্রিল হাসপাতালে রোগী ভর্তি হন ৬২৭ জন। ক্রমান্বয়ে রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হয় ১৬ এপ্রিল। সেদিন ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ছিল ৯২৩ জন। গত বছরের চেয়ে এবার ডায়রিয়া আক্রান্তের মধ্যে ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ আবার তীব্র ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। রোগীর চাপ বাড়ায় আইসিডিডিআর,বি হাসপাতালে মূল ভবনের বাইরে তাঁবু খাটিয়ে বাড়তি শয্যা দিয়ে চলছে চিকিৎসা। প্রতিষ্ঠানে গবেষণা সহকারী হিসেবে কর্মরত রেজিনা সুলতান ভোরের কাগজকে বলেন, প্রতিদিনই রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। শিশু ও প্রাপ্ত বয়স্ক সবাই বমি ও ডায়রিয়ার সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে আসছেন। গুরুতর রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে। আর যাদের অবস্থা ভালো তাদের চিকিৎসা ও পরামর্শ দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত বিশুদ্ধ পানির সংকটের কারণেই মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। এ ছাড়া অতিরিক্ত গরমের কারণে খাবারে দ্রুত পচন ধরছে। সেই খাবার খেয়েও অনেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। এ ছাড়া রাস্তাঘাট ও ফুটপাতে অস্বাস্থ্যকর শরবত পান করেও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। আইসিডিডিআর,বি হাসপাতালের প্রধান অধ্যাপক ডা. আজহারুল ইসলাম খান ভোরের কাগজকে বলেন, দেশে প্রতি বছরই মার্চ-এপ্রিল এবং আগস্ট- সেপ্টেম্বরে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ে। একে আমরা বলি ডায়রিয়ার পিক সিজন। এপ্রিল মাস শুরু থেকেই হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে পয়লা বৈশাখের পর থেকে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বেড়েছে। বাইরের রোদে ঘোরাঘুরি ও খাওয়ার কারণে ডায়ারিয়া আক্রান্ত বেড়েছে। এ ছাড়া গরমের ঘাম শরীরের মধ্যে বসে গিয়ে শিশুরা শ্বাসকষ্টসহ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। নিরাপদ পানির অভাবেই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গরম কমলে রোগীর সংখ্যাও কমবে বলে জানান তিনি। ডায়রিয়ায় পর্যাপ্ত পরিমাণে স্যালাইন খাওয়া এবং অবস্থার অবনতি হলে দ্রুত হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেন ডা. আজহারুল ইসলাম। এ ছাড়া বাইরের খাবার না খাওয়ারও পরামর্শ দেন তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App