×

জাতীয়

এখনো ক্ষত শুকায়নি রানা প্লাজার আহত শ্রমিকদের

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০১৯, ১২:৩৮ পিএম

এখনো ক্ষত শুকায়নি রানা প্লাজার আহত শ্রমিকদের
আজ ২৪ এপ্রিল সাভারের আলোচিত রানা প্লাজা দুর্ঘটনার ষষ্ঠ বর্ষপূর্তি। দিনটি পালন উপলক্ষে রানা প্লাজার সামনে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বিভিন্ন শ্রমিক ও সামাজিক সংগঠন। ভবন ধসের এত বছর পরও এখনো ক্ষত শুকায়নি আহত শ্রমিকদের। এখনো অনেকেই মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। তাদের ক্ষোভ প্রথম প্রথম কিছু সাহায্য-সহযোগিতা পেলেও এখন আর কেউ তাদের খোঁজ নেয় না। শিলা বেগম (৩১) কাজ করতেন রানা প্লাজার ৬ তলার ইথার টেক্স কারখানায় অপারেটর পদে। প্রায় দুই বছর ধরে তিনি কারখানাটিতে কাজ করছিলেন। ভালোই চলছিল তার সংসার। কিন্তু আচমকা রানা প্লাজা ধসে তার সব শেষ হয়ে যায়। ভবনের বিমের নিচে চাপা পড়েন তিনি। প্রায় ১৮ ঘণ্টা পর উদ্ধারকর্মীরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। প্রথম দিকে কিছু টাকা পেলেও সেই টাকায় তার চিকিৎসাও ঠিকমতো হয়নি। টাকার অভাবে সন্তানের লেখাপড়াও বন্ধের পথে। কোনো রকম দুমুঠো খেয়ে বেঁচে আছেন তিনি। তবে টাকার অভাবে এখন তার চিকিসা বন্ধ রয়েছে। মৃত্যুপথযাত্রী শ্রমিক রওশন আরা (৩৫)। কাজ করতেন ৬ তলার ইথার টেক্স কারখানায়। ভবন ধসে চাপা পড়ে শরীরে বেঁধেছে মরণঘাতী রোগ ক্যানসার। অসুস্থ রিকশাচালক স্বামীর টাকায় চলছে কোনো রকম চিকিৎসা। রানা প্লাজা ধসের পর কিছু সহযোগিতা পেলেও তা দিয়ে চিকিৎসাও ঠিকমতো হয়নি। টাকার অভাবে দুই সন্তানকে এতিমখানায় ভর্তি করেছেন তিনি। এখন কেমোথেরাপির ওপর বেঁচে আছেন তিনি। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, রানা প্লাজা ধসের বর্ষপূর্তি এলে কিছু সাংবাদিক আসে। কিন্তু যাদের জন্য আজ আমাদের এ অবস্থা তারা কেউ আমাদের খোঁজ খবর নেয় না। এনজিও কারিতাস একটা গরু দিতে চেয়েছিল কিন্তু আজও পর্যন্ত পাইনি। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, যে কদিন বাঁচব কেমোথেরাপি দিয়ে বাঁচতে হবে। সালমা বেগম (২৮) কাজ করতেন অষ্টম তলায় নিউ স্টাইল লিমিটেড কারখানায়। এক মাস ছিল তার চাকরির বয়স। এ ঘটনায় তার মেরুদন্ডের হাড় ভেঙে গেছে। ঘটনার দিন সন্ধ্যা ৬টার দিকে তাকে উদ্ধার করে উদ্ধারকর্মীরা। যখন তার জ্ঞান ফিরে তখন তিনি হাসপাতালের বেডে। তিনি বলেন, কিছু টাকা পেলেও তা দিয়ে চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি। আবার বেশি অসুস্থ হয়ে পরলে তার স্বামী বাক্কার তাকে ফেলে চলে যায়। এতে সে আরো ভেঙে পড়ে। এখন অর্থাভাবে চিকিৎসাও বন্ধের পথে। শুধু সিআরপিতে ফ্রি থেরাপি দিয়ে বেঁচে রয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, আমার এখন যে অবস্থা ডাক্তার বলছে, আমি আর কোনো দিন কাজ করতে পারব না। নিলুফা ইয়াছমিন (৩০)। ৬ তলার ইথার টেক্স কারখানায়। সবেমাত্র চাকরিতে যোগদান করেছিলেন তিনি। ভবনের নিচে চাপা পড়ে মেরুদন্ডে ও মাথায় আঘাত পান। উদ্ধারকর্মীরা তাকে ২৪ ঘণ্টা পরে উদ্ধার করে। তিনি বলেন, যে সামান্য টাকা পেয়েছি তা দিয়ে কয়েক দিনের চিকিৎসা খরচ হয়েছিল। এখন অর্থাভাবে চিকিৎসা করতে পারছি না। রানা প্লাজার অষ্টম তলায় নিউ ওয়েভ স্টাইল লিমিটেড কারখানায় কোয়ালিটি ইন্সপেকশন পদে কাজ করতেন মাহমুদুল হাসান হৃদয় (৩২)। পরিবার নিয়ে সুখে-শান্তিতে থাকতে পারবে, সেই আশায় রানা প্লাজায় চাকরি নিয়েছিলেন তিনি। চাকরির মাত্র ১৪ দিনের মাথায় ভবনটি ধসে পড়ে। ভবনের নিচে চাপা পড়ে সুখ-শান্তি। ধংসস্ত‚পের নিচ থেকে উদ্ধার কর্মীরা ২০ ঘণ্টা পর তাকে উদ্ধার করে। কিন্তু পায়ে ও মেরুদণ্ডে আঘাত পেয়ে আজ পঙ্গু হওয়ার পথে। অল্প কিছু যা সহযোগিতা তাৎক্ষণিকভাবে পেয়েছিলেন তা দিয়ে ঠিকমতো চিকিৎসাও করাতে পারেননি তিনি। বর্তমানে অর্থ কষ্টে দিনযাপন করছেন তিনি। পৌর এলাকার ছায়াবিথি এলাকায় ছোট্ট একটি ফার্মেসি দিয়ে বসে থাকেন কোনো রকম। হৃদয় বলেন, ফার্মেসিতে যা ওষুধ আছে তা নিজের খেতে হয়, বিক্রি করব কখন। শুধু বসে বসে সময় কাটাই। প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকালে শ্রমিকরা কর্মস্থলে যোগ দেয়ার পরপরই সাভার বাসস্ট্যান্ডের পাশে রানা প্লাজা নামের বহুতল ভবনটি ধসে পড়ে। এ দুর্ঘটনায় ১১৩৮ জন শ্রমিক নিহত এবং দুই হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়, যা বিশ্বের ইতিহাসে তৃতীয় বৃহত্তম শিল্প দুর্ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। এ দুর্ঘটনায় সাধারণ জনগণ, সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধারকাজ চালায়। ভবনটিতে পোশাক কারখানা, একটি ব্যাংক এবং একাধিক অন্যান্য দোকান ছিল। ভবনটিতে ফাটল থাকার কারণে ভবন না ব্যবহারের সতর্কবার্তা থাকলেও তা উপেক্ষা করা হয়েছিল। এই দুর্ঘটনাটি ছিল বাংলাদেশে ঘটা সবচেয়ে বড় শিল্প দুর্ঘটনা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App