×

মুক্তচিন্তা

এখনই নিয়ন্ত্রণ না হলে বিপর্যয়ের শঙ্কা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০১৯, ০৮:৪৭ পিএম

শব্দ দানবের তাণ্ডব চলছে দেশজুড়ে। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকার দিকে তাকালে শব্দদূষণের ভয়াবহতা লক্ষ করা যায়। সহনীয় মাত্রার চেয়ে দ্বিগুণ-তিনগুণ তীব্রতার শব্দে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রাজধানী ঢাকার অর্ধকোটির বেশি মানুষ। শব্দদূষণের বর্তমান যে চিত্র, তা বিপজ্জনক মাত্রাকেও ছাড়িয়ে গেছে। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে নানামুখী আইন আর উচ্চ আদালতের দুদফায় নির্দেশনা জারির পরও প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না নীরব এই ঘাতককে।

চিকিৎসকরা বলছেন, শব্দদূষণের কারণে মেজাজ খিটখিটে, উৎকণ্ঠা, মানসিক অস্থিরতা, উচ্চ রক্তচাপ, ঘুম না হওয়াও এক ধরনের শব্দভীতি তৈরি হয়। দীর্ঘদিনের শব্দদূষণের ফলে কেউ কেউ পুরোপুরি বধিরও হয়ে যেতে পারেন। এমনকি উচ্চ মাত্রার শব্দের কারণে হৃদরোগীর রক্তচাপ ও হৃদকম্পন বেড়ে গিয়ে মৃত্যুঝুঁকিও হতে পারে। সুতরাং এখনই এর রাশ টেনে ধরা দরকার।

আমরা চাইব, শব্দদূষণের ভয়াবহতা অনুধাবনপূর্বক তা রোধে সংশ্লিষ্টরা কার্যকর উদ্যোগ নেবে। গতকাল বুধবার পালিত হয়েছে আন্তর্জাতিক শব্দ সচেতনতা দিবস। এবারের শব্দ সচেতনতা দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল : ‘শ্রবণযন্ত্রের সুরক্ষা, স্বাস্থ্যের সুরক্ষা’। বছরে একদিন এই ধরনের উদ্যোগ কতটা জনসচেতনতায় ভূমিকা রাখতে পারছে? বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ৬০ ডেসিবল শব্দে সাময়িকভাবে শ্রবণশক্তি নষ্ট হতে পারে।

আর ১০০ ডেসিবলে চিরতরে তা হারাতে হতে পারে। অথচ রাজধানী ঢাকার অনেক জায়গাতেই শব্দ ১০৭ ডেসিবল পর্যন্ত ওঠে। শব্দদূষণের গুরুত্ব বিবেচনায় রেখে ১৯৯৭ সালের পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে শহরকে ৫ ভাগে ভাগ করা হয়েছে- নীরব এলাকা, আবাসিক এলাকা, মিশ্র এলাকা, শিল্প এলাকা, বাণিজ্যিক এলাকা। এসব এলাকায় দিন ও রাত ভেদে শব্দের মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

আইন অনুযায়ী হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকার নির্ধারিত কিছু প্রতিষ্ঠান থেকে ১০০ মিটার পর্যন্ত এলাকাকে নীরব এলাকা চিহ্নিত করা হয়। এসব জায়গায় মোটরগাড়ির হর্ন বাজানো বা মাইকিং করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু রাজধানীতে কোথায় শব্দের মাত্রা স্বাভাবিক নেই। গেল বছরে প্রকাশিত পরিবেশ অধিদপ্তরের সর্বশেষ জরিপ প্রতিবেদনে ঢাকাসহ দেশের আট বিভাগের শব্দদূষণের ভয়াবহ চিত্রে গাড়ির হর্নকে শ্রবণশক্তির ভয়াবহ ঘাতক হিসেবে দেখানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে রাজধানীর শ্যামলী এলাকায় হর্ন বাজানোর চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। তবে এ চিত্র শুধু শ্যামলীতেই নয়, গোটা রাজধানীর। ভয়াবহ শব্দদূষণ সৃষ্টিকারী এসব হাইড্রোলিক হর্ন বন্ধে নির্দেশনা চেয়ে ২০১৭ সালে রিট করা হলে হাইকোর্ট রাজধানীতে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তা বন্ধের নির্দেশনা দেন। আদেশে হাইড্রোলিক হর্ন আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়।

এসব নির্দেশনা কি বাস্তবায়ন করতে পেরেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। শব্দদূষণের ব্যাপকতা রোধে প্রয়োজনীয় জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। দ্রুত সময়ে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ করা না হলে ভবিষ্যতে আরো ব্যাপক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হবে নগরবাসীকে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App