×

জাতীয়

পাহাড়ে ম্যালেরিয়া আক্রান্তের হার কমলেও কমেনি ঝুঁকি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০১৯, ১২:২৯ পিএম

পাহাড়ে ম্যালেরিয়া আক্রান্তের হার কমলেও কমেনি ঝুঁকি
পাহাড় ও বনাঞ্চলবেষ্টিত এবং সীমান্তবর্তী এলাকায় জনমনে ম্যালেরিয়া এক আতঙ্কের নাম। দেশের পার্বত্য অঞ্চল বিশেষ করে রাঙ্গামাটিতে বাঙালিদের তুলনায় পাহাড়িরা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হন। কিন্তু মৃত্যুর হার বাঙালিদের মধ্যে বেশি। জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচির তথ্য অনুযায়ী, ম্যালেরিয়ার ঝুঁকিতে থাকা রাঙ্গামাটি জেলায় গত তিন বছরে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে কারো মৃত্যু হয়নি। ২০০২ সালে এই জেলায় ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ১৪৩ জন মারা যায়। ২০১২ সালে এই সংখ্যা নেমে আসে একজনে। ২০১৩ সালে দুজন ও ২০১৬ সালে একজনের মৃত্যু হলেও ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল (জানুয়ারি-মার্চ মাস) পর্যন্ত কেউ মারা যায়নি। জেলার ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি সম্পর্কে রাঙ্গামাটির ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচির সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডা. এন্ড্রু বিশ্বাস জানান, জেলার ১০টি উপজেলার মধ্যে চারটিতে ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব বেশি। এগুলো হলো বিলাইছড়ি, বাঘাইছড়ি, জুড়াছড়ি ও বরকল। জেলায় ম্যালেরিয়ায় মোট আক্রান্তের মধ্যে ৩১ শতাংশ ছিল বিলাইছড়ি, ২৭ শতাংশ বাঘাইছড়ি, ১৭ শতাংশ জুড়াছড়ি এবং ৯ শতাংশ ছিল বরকলে। বিলাইছড়িতে ২০১৭ সালে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিল তিন হাজার ১৫৫ জন। ২০১৮ সালে এ সংখ্যা ছিল ৯২৬ জন। বাঘাইছড়িতে এ সংখ্যা যথাক্রমে এক হাজার ৬৮৬ ও ৮২৪, জুড়াছড়িতে ৮৭৩ ও ৫১৪ এবং বরকলে ৪৭৫ ও ২৭৮ জন। অন্য দিকে আক্রান্তের দিক থেকে সবচেয়ে কম রয়েছে সদর উপজেলায়। সেখানে ২০১৭ সালে ৭৩ ও ২০১৮ সালে ২৫ জন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়। জেলার ৪৯টি ইউনিয়নে এক হাজার ৫৫৫টি গ্রামে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের হার কমছে। এ ছাড়া পরিসংখ্যান বলছে, আক্রান্তের মধ্যে নারী-পুরুষ এবং বয়সের তারতম্যও রয়েছে। আক্রান্তের মধ্যে নারীর চেয়ে পুরুষের সংখ্যাই বেশি। ২০১৭ সালে রাঙ্গামাটিতে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিল চার হাজার ৯৫০ পুরুষ। একই সময়ে নারী আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার ৮৮০। বয়সের দিক থেকে ১৫ বছরের ঊর্ধ্বদের আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। ২০১৭ সালে এ বয়সীদের মধ্যে আক্রান্ত হয়েছিল চার হাজার ৫৯৩ জন। ২০১৮ সালে এক হাজার ৬৭৯ জন। রাঙ্গামাটি জেলায় এক বছরের কম বয়সী শিশুদের আক্রান্তের হার সবচেয়ে কম। ২০১৭ সালে আক্রান্ত হয়েছিল মাত্র ১৬ জন। ২০১৮ যা ১৪ জনে নেমে এসেছিল। পুরুষদের চেয়ে নারীরা এ রোগে কম আক্রান্ত হওয়ার কারণ সম্পর্কে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুরুষের তুলনায় নারীরা বেশি সচেতন এবং পুরুষের চেয়ে নারীর বাইরে বিচরণ কম। এ ছাড়া পাহাড়ে পুরুষরা জুম চাষ ও কাঠ কাটার কাজে বেশি নিয়োজিত থাকেন। ফলে সেখানে মশা কামড়ানোর ঝুঁকি বেশি। জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. এম এম আক্তারুজ্জামান জানান, দেশের তিনটি পার্বত্য জেলা ম্যালেরিয়ার চূড়ান্ত ঝুঁঁকিতে রয়েছে। যেগুলো ভারতের ত্রিপুরা এবং মিজোরামের সীমান্ত। এ ছাড়াও সিলেটের যে অঞ্চলগুলো ভারতের মেঘালয় এবং আসাম সীমান্তের সংলগ্ন, সেখানেও ম্যালেরিয়ার ঝুঁকি রয়েছে। ম্যালেরিয়ার সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্যসেবা আরো কীভাবে সীমান্তবর্তী এলাকায় বিস্তৃত করা যায় সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। ‘ক্রস বর্ডার কোলাবরেশন’ নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি। ত্রিপুরার ধলাইয়ে চলতি বছর একটি বৈঠক হবে। আশা করছি, ২০৩০ সালের মধ্যে ম্যালেরিয়া নির্মূলের যে টার্গেট আমাদের রয়েছে ধাপে ধাপে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা সেই লক্ষ্যপূরণ করতে পারব।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App