×

বিনোদন

রপ্তানি ছবির হাল কেন বেহাল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০১৯, ০২:১৩ পিএম

রপ্তানি ছবির হাল কেন বেহাল
দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক মুক্তবাণিজ্য চুক্তি অর্থাৎ ‘সাফটা’ চুক্তির আওতায় বাংলাদেশে একাধিক ভারতীয় বাংলা ছবি আমদানি করা হয়েছে। বিনিময়ে সমপরিমাণ বাংলাদেশি সিনেমা পশ্চিম বাংলায় রপ্তানি করা হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে এরকম ছবি বিনিময় যে উদ্দেশ্য নিয়ে শুরু হয়েছিল তা এখন ব্যর্থ হতে চলেছে। বাংলাদেশের ছবির জন্য বিনিময় থেকে কোনো প্রাপ্তি নেই। ছবি রপ্তানি থেকে কিছুই পাচ্ছে না বাংলাদেশ। টালিগঞ্জে নির্মিত ছবি বাংলাদেশে একসঙ্গে অর্ধশত বা তারও বেশি সিনেমা হলে মুক্তি পায়। বিপরীতে ঢালিউডে নির্মিত ছবিগুলো কলকাতার সিনেমা হলে মুক্তি পায় নামে মাত্র। ছবিগুলো মুক্তি দেয়া হয় দায়সারাভাবে। আর মুক্তি পায় গ্রাম অঞ্চলে, বিশেষ করে বর্ডার এলাকায়। মুক্তির সময় কোনো প্রচারণাও করা হয় না। পশ্চিমবঙ্গের আমদানিকারকরা বাংলাদেশি ছবি কেন মুক্তি দিনে অনীহা দেখান, কেন যথাযথ প্রচারণা করা হয় না এসব প্রশ্ন সিনেমাপ্রেমীদের মনে গুঞ্জরিত হলে উত্তর জানেন না বাংলাদেশি রপ্তানিকারকরা। চলচ্চিত্র আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ইন উইন এন্টাপ্রাইজের কর্ণধার ইফতেখার উদ্দীন নওশাদ বলেন, এ বিষয়ে আমাদের কিছু করার নেই। তারা টাকা দিয়ে আমদানি করে যদি ছবি ফেলে রাখে সেটা তাদের ব্যাপার। আমি তো গিয়ে ছবি চালাতে জোর দিতে পারব না। এসব নিয়ে আমদানিকারকদের প্রশ্ন করা অমূলক বলেও তিনি মন্তব্য করেন। ২০১৫ সালে ভারতে সীমিত কয়েকটি সিনেমা হলে মুক্তি পেয়েছিল শিহাব শাহীন পরিচালিত ‘ছুঁয়ে দিলে মন’। ছবিটির পশ্চিমবঙ্গের অংশের পরিবেশকের দায়িত্বে ছিল পিয়ালি ফিল্মস। পিয়ালি ফিল্মসের স্বত্বাধিকারী দীপঙ্কর বিশ্বাস জানান, বাংলাদেশি ছবির চাহিদা এখানে সেভাবে তৈরি হয়নি। যার কারণে আমরা চাইলেও বেশি সিনেমা হলে মুক্তি দিতে পারি না। আমাদের চেষ্টা থাকে, কিন্তু বাস্তবতা তো মেনে নিতে হবে। এটা ঠিক যে, কিছুটা অবমূল্যায়ন করা হয় ঢাকার ছবিকে। ভারতের নির্মাতা প্রদীপ্ত ভট্টাচার্য পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশি চলচ্চিত্র প্রদর্শনের ক্ষেত্রে উদাসীনতা দূর করার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশি ছবি চলে না বলা হয়। তবে ছবি চলার সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে। পরীক্ষা করে দেখা উচিত। চলে না বলে বসে থাকলে তো কাজ হবে না। দুই বাংলার মানুষ একে অপরের সিনেমা দেখবেন এর চেয়ে ভালো আর কিছু হতে পারে না। এটা আমার বিশ্বাস। ইস্টার্ন ইন্ডিয়া মোশন পিকচার্স অ্যাসোসিয়েশেনের (ইম্পা) সাবেক সভাপতি কৃষ্ণ নারায়ণ দাগাও মনে করেন দুই বাংলার একসঙ্গে কাজ করা উচিত। তিনি বলেন, দুই বাংলা একসঙ্গে কাজ করার ইচ্ছা আমাদের অনেক দিনের। বাংলাদেশের যেমন কলকাতার ছবি মুক্তি পাচ্ছে, তেমনি কলকাতায়ও বাংলাদেশের ছবি মুক্তি পাওয়া উচিত। এটা হতে হবে সমতার ভিত্তিতে। তবে বাংলাদেশের ছবির মানের দিক থেকে বিবেচনা করলে সেটা আর হয়ে ওঠে না। এখনো বাংলাদেশের ছবি নিম্নমানের। যেখানে ভারতের ছবি উচ্চ প্রযুক্তি আর মানের দিক থেকে এগিয়ে, সেখানে তারা মানহীন বাংলাদেশের ছবি কেনইবা দেখবে! বাংলাদেশের শিল্পীদেরও এখানে সেভাবে কেউ চেনে না। সবমিলিয়ে ইচ্ছা থাকলেও কিছু করার থাকছে না। ব্যবসার কথা বিবেচনা করলে বাংলাদেশি ছবি মুক্তি না দেয়ার সিদ্ধান্ত ঠিক বলে মনে হয়। ক্রমাগত আর্থিক ক্ষতির মুখে দেশের সমস্ত সিনেমা হল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিল চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি। পরে তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রদর্শক সমিতির দাবি-দাওয়া মেনে নেয়ার আশ্বাস পাওয়া গেলে অবরোধ তুলে নেয় সমিতি। বাংলাদেশে ভারতীয় ছবি দ্রুত মুক্তি পাবে এমন আশ্বাসের খবরে চাপা আনন্দ বিরাজ করছে কলকাতার চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের মধ্যে। কলকাতার সিনেমার জন্য বড় একটি বাজার বাংলাদেশ। এই বাজারে নিজেদের ছবির ব্যবসা নিশ্চিত করতে চাইছেন কলকাতার নির্মাতারা। গত কয়েক বছরে কলকাতার ডজনখানেকের বেশি ছবি আমদানি হয়েছে। যৌথ প্রযোজনা হয়েছে কয়েক ডজন। কলকাতার ছবি যতটা গুরুত্ব দিয়ে এদেশে মুক্তি পাচ্ছে, ভারতে রপ্তানিকৃত ছবিগুলো সে পরিমাণ গুরুত্ব পাচ্ছে না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App