×

জাতীয়

রাজনৈতিক শক্তির মদদ!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ এপ্রিল ২০১৯, ১১:১৬ এএম

রাজনৈতিক শক্তির মদদ!
ফেনীর মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে কেরোসিন ঢেলে গায়ে আগুন ধরিয়ে হত্যার ঘটনায় প্রতিনিয়ত বেরিয়ে আসছে নতুন নতুন তথ্য। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা উদ্ধার করছেন সহায়ক আলামত ও ক্লু। নুসরাত হত্যা ধামাচাপা দিতে লেনদেন হয়েছে মোটা অঙ্কের অর্থ। ঘাতকচক্রের পেছনে রয়েছে বড় ধরনের রাজনৈতিক শক্তি। ঘটনার মূলহোতা সিরাজউদদৌলার পৃষ্ঠপোষক শুধু সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমীনই নন; আছেন এক প্রভাবশালী সংসদ সদস্যও, যিনি নানা কারণে আলোচিত। মামলার তদন্তে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সংস্থার অনুসন্ধানে ঘটনার মূল নায়ক এক সময়ের জামায়াত নেতা অধ্যক্ষ সিরাজউদদৌলার খোলস পাল্টানোসহ নানাবিধ অপকর্মের পেছনে আওয়ামী রাজনীতির ইন্ধনের তথ্য মিলেছে বলে জানা গেছে। এদিকে রিমান্ডে থাকা কামরুন নাহার মনি ও জাবেদ গতকাল শনিবার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাদের জবানবন্দিতে রয়েছে তদন্তে সহায়ক চাঞ্চল্যকর তথ্য। এ ছাড়া আগুন দেয়ার সময় পরিচয় আড়াল করতে আসামিরা যে বোরকা পরেছিল, হত্যা মামলার আসামি জোবায়েরের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ভিত্তিতে তাও একটি উদ্ধার করেছে পিবিআই। গতকাল শনিবার সোনাগাজীর ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অদূরে কাশমির বাজার সংলগ্ন ডাঙ্গি খাল থেকে বোরকাটি উদ্ধার করা হয়েছে। অন্যদিকে নুসরাত হতার দ্রুত বিচারের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ, ফেনীর সোনাগাজীসহ দেশের বিভিন্নস্থানে গতকালও বিক্ষোভ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার গতকাল ভোরের কাগজকে জানান, ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে রুহুল আমীনকে আটক করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তদন্ত সহায়ক তথ্য দিয়েছেন তিনি। পরে তাকে ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। শুনানি শেষে আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এ ঘটনায় পুলিশের গাফিলতি তদন্তে গঠিত কমিটির প্রধান পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (মিডিয়া এন্ড প্ল্যান) এস এম রুহুল আমিন বলেছেন, নুসরাত হত্যাকাণ্ডে স্থানীয় রাজনীতিরও প্রভাব রয়েছে। অধ্যক্ষের অনেক অতীত অপকর্ম রয়েছে, যা গভর্নিং বডির সদস্যরাও জানতেন। যদি তার ব্যাপারে আগে ব্যবস্থা নেয়া হতো, তাহলে এ ধরনের ঘটনা ঘটত না। এ ঘটনায় গঠিত পুলিশের তদন্ত কমিটি সরেজমিন সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করেছে। আগামী ৭ দিনের মধ্যেই প্রতিবেদন দেয়া হবে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অর্গানাইজ ক্রাইম টিমের বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম জানান, নুসরাত হত্যার ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে অনেক অর্থ লেনদেন হয়েছে। সিআইডির একটি টিম এ নিয়ে অনুসন্ধান করেছে। প্রাথমিক তদন্তে কয়েকজনের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। একটি টিম সোনাগাজী গিয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধান করবে। পরে তথ্যপ্রমাণের সূত্রে পৃথক একটি মামলা হবে। পিবিআইর পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. শাহ আলম জানান, আসামির পরিহিত বোরকাটি এ হত্যা মামলার অন্যতম আলামত। বোরকা উদ্ধার হওয়ায় এটি মামলাটির বিচার প্রক্রিয়ায় ভ‚মিকা রাখবে। এর আগে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার নুর উদ্দিন ও শাহাদাত হোসেন শামীমের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানা যায়, বোরকা পরে পাঁচজন এ হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছিল। উদ্ধার করা বোরকা সেগুলোরই একটি। রিমান্ডে থাকা আসামি কামরুন নাহার মনিকে নিয়ে শুক্রবার সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা ভবনের ছাদ ও বোরকার দোকান পরিদর্শন করে পিবিআই। পিবিআই বিশেষ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইকবাল জানান, তদন্তে যথেষ্ট অগ্রগতি রয়েছে। ক্লু, আলামত ও তথ্যপ্রমাণ মিলছে। জড়িতরা কেউ পার পাবে না। সূত্র মতে, বিতর্কিত ও প্রভাবশালী এক সংসদ সদস্যদের সঙ্গে সিরাজউদদৌলার সখ্য থাকায় স্থানীয় প্রশাসন ও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতারা তার সঙ্গে ভাব রাখতেন। প্রয়োজনে ডাক পেলে সাড়া দিতেন। গভর্নিং বডি নিয়ে দুই কাউন্সিলরের মধ্যকার বিরোধের সুযোগে সিরাজ আওয়ামী লীগে অনেকটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, সিরাজের স্ত্রী ফেরদৌস আক্তার জনতা ব্যাংকের সোনাগাজী শাখা থেকে ১৮ লাখ টাকা উত্তোলন করে কয়েকজনের মধ্যে বিলি করেন ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে। ২৮ মার্চ টাকা তুলে বিলি করে তিনি লাপাত্তা হন। তার পেছনে ফেনীর সরকারদলীয় একজন প্রভাবশালী সংসদ সদস্যও রয়েছেন। সিরাজের সঙ্গে ওই সংসদ সদস্যকে বিভিন্ন সময় ঘনিষ্ঠভাবে দেখা গেছে। ফেরদৌসের মোবাইল ফোনের কললিস্টে রয়েছে মামলার তদন্তে সংশ্লিষ্ট ক্লু। মামলার তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই গতকাল সকালে রাঙ্গামাটি টিএন্ডটি কলোনি থেকে ইফতেখার উদ্দিন রানা (২৩) নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। যিনি হত্যা পরিকল্পনার বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বলে পিবিআই তথ্য পেয়েছে। প্রসঙ্গত, গত ৬ এপ্রিল সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে মাদ্রাসার ছাদের ওপর শরীরে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ এপ্রিল ঢাকায় তার মৃত্যু হয়। ৮ এপ্রিল রাতে অধ্যক্ষ সিরাজউদদৌলা ও পৌর কাউন্সিলর মুকছুদ আলমসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন অগ্নিদগ্ধ রাফির বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান। ওই ঘটনায় এখন পর্যন্ত এজহারের আটজন গ্রেপ্তারসহ মোট ২০ জনকে আটক করা হয়েছে। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন চারজন। ১৩ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড দেয়া হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App