কমেডিয়ানরা কেমন আছেন
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০১৯, ০৪:০৭ পিএম
গত ৬ এপ্রিল না ফেরার দেশে চলে গেলেন কিংবদন্তি কমেডিয়ান টেলি সামাদ। পরিণত বয়সে এই মৃত্যু হলেও তার শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়। দেশের শ্রেষ্ঠ কমেডিয়ানরা একে একে চলে গেলেও তাদের অভাব রয়েই যাচ্ছে। ২০১৬ সালের ২২ আগস্ট মারা যান ফরিদ আলী। তার মৃত্যুও পরিণত বয়সে। কিন্তু মৃত্যুর আগে টেলি সামাদ কিংবা ফরিদ আলী কেউ তাদের মূল্যায়ন নিয়ে তৃপ্ত ছিলেন না। নীরবে নিভৃতেই কেটেছে তাদের শেষ জীবন। চলচ্চিত্রের অবস্থা ভালো নয়। তাই ভালো নেই কমেডিয়ানরাও। দীর্ঘদিন ধরে আছে কমেডিয়ানের সংকটও। একটা সময় যারা জনপ্রিয়তার সঙ্গে কাজ করেছেন, তারা এখনো সমর্থ হলেও আগের মতো দাপট নেই তাদের। জনপ্রিয় কমেডিয়ানরা কে কোথায় কেমন আছেন, তারই সন্ধান নিল ‘মেলা’
সুরুজ বাঙালি
জনপ্রিয় কমেডিয়ান সুরুজ বাঙালি ভালো নেই। হৃদরোগে ভোগার কারণে দীর্ঘদিন অভিনয় করতে পারছেন না তিনি। অর্থের অভাবে ওপেন হার্ট সার্জারি করাতে পারছেন না। চিকিৎসা দূরে থাক, অর্থের অভাবে পরিবার জন্য তিনবেলা অন্ন জোটাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে। ২০০৩ সালে হার্টে ব্লক ধরা পড়ে তার। ব্যয়বহুল চিকিৎসার সামর্থ্য তার নেই বলে তিনি এখন ধুঁকছেন এক সময়ে নিয়মিত পর্দায় দেখতে পাওয়া মুখ সুরুজ বাঙালি। তার সতীর্থরা বলছেন, অসহায় শিল্পীদের সহযোগিতায় তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনিই পারেন এই অভিনেতাকে আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে বাঁচাতে। ১৯৭৪ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত প্রায় চার শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন সুরুজ বাঙালি। বিটিভির তালিকাভুক্ত শিল্পীও তিনি। মঞ্চেও কাজ করেছেন প্রচুর। তার একমাত্র ছেলে প্লাটুন বাঙালি পড়াশোনা করেও বেকার। স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে চরম মানবেতর জীবনযাপন করছেন সুরুজ বাঙালি।
আফজাল শরীফ
ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় কমেডিয়ান আফজাল শরীফ। একাধারে মঞ্চ, নাটক ও সিনেমায় অভিনয় করেন তিনি। এখন পর্যন্ত আফজাল শরীফ পাঁচ শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন। অভিনয়ের সর্বোচ্চ স্বীকৃতিস্বরূপ বদিউল আলম খোকন পরিচালিত ‘নিঃশ্বাস আমার তুমি’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও লাভ করেন আফজাল শরীফ। তবে আগের মতো এখন আর আলোচনায় নেই দর্শকদের প্রিয় এই কমেডিয়ান। চলচ্চিত্রের চেয়ে আফজাল শরীফ আজকাল বেশি ব্যস্ত নাটক নিয়ে। সারাবছর নাটকে অভিনয় করেন, টুকটাক চলচ্চিত্রেও দেখা যায় তাকে। এ ছাড়া জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদির প্রতিটি পর্বে তাকে দেখা যায়। গত বছর প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে তিনি আর্থিক সাহায্য পেয়েছেন।
কাবিলা
কাবিলা ১৯৮৮ সালে ‘যন্ত্রণা’ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রের ক্যারিয়ার শুরু করেন। ২০০৩ সালে ‘অন্ধকার’ ছবিতে অভিনয় করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান এই অভিনেতা। প্রথম দিকে তিনি নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। পরবর্তী সময়ে বরিশালের আঞ্চলিক ভাষায় সংলাপ বলে কমেডিয়ান হিসেবে আরো বেশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন কাবিলা। এক টাকার বউ, সবার উপরে তুমি, এবাদত, আমার প্রাণের প্রিয়া, জন্ম তোমার জন্য, আমাদের ছোট সাহেব, তুমি আমার প্রেম, বাবা আমার বাবা, তুমি স্বপ্ন তুমি সাধনা, তোমাকে বউ বানাবো, প্রেমিক নাম্বার ওয়ান, ফুল এন্ড ফাইনালসহ অসংখ্য ছবিতে অভিনয় করেছেন এ অভিনেতা। বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থতার কারণে চলচ্চিত্র থেকে দূরে আছেন তিনি। কাবিলা দীর্ঘদিন ধরে কণ্ঠনালি সমস্যায় ভুগছেন। চিকিৎসকের পরামর্শমতো খুব বেশি জরুরি না হলে তিনি কথা বলতে পারেন না। কোনো সিনেমার ডাবিং করছেন না। এখন আরামবাগের বাসাতেই সময় কাটে কাবিলার। পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ ভাণ্ডারিয়া গ্রামেও যাওয়া আসা করেন।
কাজল
সোনালি যুগে ঢাকাই সিনেমার দাপুটে কমেডিয়ান ছিলেন খান জয়নুল। তাকে দেখেই কাজল এসেছেন কৌতুকাভিনয়ে। তাকে অনুসরণ করেই একজন জনপ্রিয় কমেডিয়ানে পরিণত হয়েছেন কাজল। বিটিভিতে প্রচারিত শহীদুল হক খানের ‘রংধনু’তে কাজল প্রথম পারফরমেন্স করেন কাজল। এরপর ‘কথার কথা’, ‘রংবেরং’, ‘সাত সতেরো’, ‘শুভেচ্ছা’সহ আরো অনেক জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে পারফরমেন্স করেছেন। কাজলের অভিনয়ের প্রথম অডিও ক্যাসেট ছিল ‘হে আবুল’। এরপর ‘পাগলির প্রেমে কাজল’, ‘কাজলের বিয়ে’সহ প্রায় সত্তরটি ক্যাসেট প্রকাশিত হয়েছে তার। এহতেশাম পরিচালিত ‘চোখে চোখে’ ছবিতে কাজল প্রথম অভিনয় করেন। এরপর তিনি এহতেশামেরই ‘চাঁদনী রাতে’সহ ‘টাকার অহঙ্কার’, ‘এক পলকে’, ‘সেই তুফান’সহ আরো বেশ কিছু সিনেমায় অভিনয় করেন। নব্বই দশকের শুরুর দিকে টিভিতে জনপ্রিয়তার সূত্র ধরে সিনেমায় যান। তরুণ বয়সের সেই ক্রেজ কাজলের এখন না থাকলেও স্টেজ শো করেই জীবন চলে তার।
চিকন আলী
প্রথম বাংলাদেশি কমেডিয়ান ইউটিউবার হিসেবে ইউটিউব থেকে সিলভার বাটন স্বীকৃতি পেয়েছেন চিকন আলী। ইউটিউবে কোনো চ্যানেল এক লাখ সাবস্ক্রাইবার অতিক্রম করলে এই স্বীকৃতি দেয়া হয়। ইউটিউবে চিকন আলীর ‘সি এ কমেডি চ্যানেল’-এর বর্তমান সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা ২ লাখের উপরে। ২০০৬ সালে ‘রঙিন চশমা’ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় চিকন আলীর। তারপর ‘মনে প্রাণে আছো তুমি’, ‘তোর কারণে বেঁচে আছি’, ‘ভালোবাসলেই ঘর বাঁধা যায় না’, ‘এক টাকার দেনমোহর’, ‘লাভ ম্যারেজ’, ‘হিটম্যান’, নিয়তি’, ‘বসগিরি’ ছাড়া আরো বেশ কিছু ছবিতে অভিনয় করে কাবিলা, আফজাল শরীফের পর কমেডি অভিনেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। বর্তমানে এই কমেডি অভিনেতা কাজ করছেন প্রায় এক ডজন ছবিতে।