×

জাতীয়

কৃষকের মাথায় হাত

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০১৯, ১১:১০ এএম

কৃষকের মাথায় হাত
বুকভরা আশা নিয়ে ধান চাষ করেছিলেন হাওরের কৃষকরা। কয়েক দিন আগেও তারা সোনালি ধান ঘরে তোলার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন। কিন্তু সে স্বপ্ন এখন ফিকে হয়ে গেছে। সংসার পরিচালনার সব পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে। খরা, শিলা বৃষ্টি, কালবৈশাখী, ধানে চিটা পড়া ও ব্লাস্টের আক্রমণ- এই পাঁচ কারণে হাওরাঞ্চলের কৃষকদের মাথায় হাত দিয়ে হতাশা ও দুশ্চিন্তায় সময় ক্ষেপণ ছাড়া অন্য কোনো উপায় নাই। কারণ, যে টাকা খরচ করে ফসল চাষ করেছিলেন, ধান বিক্রি করে তার অর্ধেকও পাবেন না। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে ভিন্ন কথা। তাদের মতে, ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এ কথার সঙ্গে একমত হতে পারছেন না হাওরপাড়ের দরিদ্র্য কৃষকরা। তারা বলছেন, চিটা হয়ে গেছে ব্রি-২৮ জাতের ধান। চলতি বছর তাহিরপুর উপজেলার ২৪টি হাওরে ১৭৪০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার শনিরহাওরে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা বলছেন, বেশির ভাগ ধানের ভেতর চালের বদলে চিটা পড়েছে। উচ্চফলনশীল আর আগাম ফসল উঠে যাওয়ার কারণে ব্রি-২৮ জাত বেশ জনপ্রিয়। তবে এবার এই জাতের ধান চাষ করে তারা লোকসানে পড়েছেন। ক্ষেতের বেশির ভাগ ধানের ভেতর চালের বদলে চিটা পড়েছে। বীজে কোনো সমস্যার কারণে এটা হতে পারে। তবে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, যারা আগেভাগে এই ধান লাগিয়েছেন, কেবল তারাই ক্ষতির মুখে পড়েছেন। তাহিরপুর উপজেলার হাওরের কৃষকরা সব সময়ই অকালবন্যার আতঙ্কে থাকেন। এ কারণে তারা সাধারণত আগাম জাতের ধানের দিকে বেশি ঝুঁকে থাকেন। এ ক্ষেত্রে তাদের সামনে কয়েকটি দেশীয় জাতের ধান রয়েছে। কিন্তু এসব জাতের ধানের ফলন তুলনামূলক কম হয়। এ কারণে কৃষকরা উচ্চফলনশীল জাতের ধান চাষ করে থাকেন। তুলনামূলকভাবে ব্রি-২৮ ধানের ফসল আগে ঘরে উঠে। ফলে উচ্চফলনশীল জাতগুলোর মধ্যে ব্রি-২৮ বেশি জনপ্রিয়। গত কয়েক বছর কৃষকরা ব্রি-২৮ জাতের ধান চাষ করে ভালো ফলন পেয়েছেন। কিন্তু গত বছর হাওরের কিছু এলাকায় ব্রি-২৮ ধানে ব্লাস্টরোগ দেখা দেয়। আর এবার ব্লাস্টের পাশাপাশি ধান চিটা হয়ে গেছে। ফলে কৃষক কাক্সিক্ষত ফলন পাচ্ছেন না। সরেজমিনে দেখা গেছে, সোনালি ফসলে ভরপুর হাওরের কিছু জমির ধান কাটা শুরু হয়েছে। কেউ বা ক্ষেতের ফসল কবে কাটতে পারবেন তা যাচাই করে দেখছেন। তবে যেসব কৃষকের ক্ষেতের ধানে চিটা দেখা দিয়েছে, তাদের চোখেমুখে হতাশার ছাপ। শনিরহাওরের কৃষক কাওছার বলেন, এবার আমি পাঁচ কেদার (৩০ শতকে এক কেদার) জমিতে ধানের আবাদ করেছি। তার মধ্যে দুই কেদারে লাগিয়েছিলাম ব্রি-২৮ ধান। এই দুই কেদার জমিতে ধানে ফসল ভালো হয়নি। বেশির ভাগ ধানে চালের বদলে ছোঁচা (চিটা) দেখা যাচ্ছে। তিনি জানান, এই দুই কেদার জমিতে খরচ হয়েছে কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা। এখন চার মণ ধানও পাবেন না। অথচ ভালো ফলন হলে এখানে ৩০ মণ ধান পাওয়ার কথা। একইভাবে তাহিরপুর সদরের কৃষক ফকর উদ্দিন জানান, সাড়ে চার কেদার জমিতে ব্রি-২৮ জাতের ধান পেয়েছেন মাত্র ১১ মণ। গত বছর একই জমি থেকে তিনি ধান পেয়েছিলেন ৬০ মণ। তার মতে, ধানের বীজে সমস্যার কারণে এমনটি হয়েছে। তাহিরপুর উপজেলার শনিরহাওরের মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন জানান, সাড়ে তিন একর জমিতে ব্রি-২৮ আবাদ করেছিলাম। সম্পূর্ণ জমিই ব্লাস্টে নষ্ট হয়েছে। জমির দিকে তাকালে কান্নায় বুক ভেঙে যায়। তিনি বলেন, এক একর জমিতে ৫০ মণ ধান পাওয়ার কথা। ব্লাস্টের কারণে মাত্র সাত মণ পেয়েছি। এবার আমাদের অনেক লোকসান গুনতে হবে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুস ছালাম বলেন, ঠাণ্ডাজনিত কারণ ও সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় ব্রি-২৮ ধান এবার কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত বছর এই জাতের ধানে ব্লাস্টরোগ দেখা দিয়েছিল। ফলে এবার এই জাতের ধানের আবাদ তুলনামূলক অনেক কম হয়েছে। তবে কৃষি বিভাগের তৎপরতায় এবার বেশির ভাগ ক্ষেতে ব্রি-২৮ জাতের ধান ভালো হয়েছে। কিন্তু যেসব কৃষক অগ্রহায়ণ মাসে ব্রি-২৮ রোপণ করেন, তারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কারণ, এই ধান রোপণের উপযুক্ত সময় হচ্ছে পৌষ মাস। তিনি আরো বলেন, ব্রি-২৮ ধান অনেক পুরনো হওয়ায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। উৎপাদনও দিন দিন কমছে। আমরা নিয়মিত কৃষকদের মধ্যে ব্লাস্ট প্রতিকারে ফিলিয়া, নাটিবো, টুপা, ব্লাসিং ইত্যাদি স্প্রে করার পরামর্শ দিয়েছি। এ ছাড়া ব্রি-২৮ জাতের পরিবর্তে উন্নত জাতের ব্রি-৮১ ধান চাষ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ব্রি-২৮ ধান তাহিরপুরের কৃষকদের হতাশার কথা উল্লেখ করে উপজেলা কৃষক লীগের আহবায়ক আলহাজ জিল্লুর রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, বিষয়টি কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তদন্ত করে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানো দরকার।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App