×

জাতীয়

যেকোন মূহুর্তে গ্রেপ্তার হচ্ছেন রুহুল আমিন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০১৯, ০৩:২৮ পিএম

যেকোন মূহুর্তে গ্রেপ্তার হচ্ছেন রুহুল আমিন
চাঞ্চল্যকর সোনাগাজী ইসলামীয়া ফাজিল মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় অনেক তথ্য বেরিয়ে আসছে। ১৪এপ্রিল মামলার অন্যতম আসামী নুর উদ্দিন ও শাহাদাত হোসেন শামীমের ১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দীতে মাদ্রাসা কমিটির সহ সভাপতি ও উপজেলা আ.লীগের কথিত সভাপতি রুহুল আমিনসহ ১৩ জনের নাম উল্লেখ আছে বলে জানানো হয়। পিবিআইয়ের সূত্র ও আদালত সংশ্লিষ্ট একাধিক সুত্র এসব বিষয় নিশ্চিত করেছে। সুত্র জানায়, ওই দুই আসামী ও সর্বশেষ বুধবার আদালতে মাদরাসা ছাত্র শরীফ জবানবন্দীতে পুরো ঘটনার বর্ণনা দেয়। এতে মোট ২৫ থেকে ২৬ জনের সম্পৃক্ততার কথা উঠে আসে। সবার নাম বলতে পারেনি তারা। তবে তাদের দেয়া তথ্যমতে এজাহার নামীয় ৮জনসহ ১৭জনকে আটক করা হয়। ঘটনার পর শাহাদাত হোসেন শামীম তার মোবাইল ফোন থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের কথিত সভাপতি ও মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সহ সভাপতি রুহুল আনিকে ফোনে ‘কাজ হয়ে যাবার’ ম্যাসেজ জানায়। এসময় রুহুল বলেন, ‘আমি জানি। তোমরা পালিয়ে যাও। আমি থানায় যাচ্ছি।’ রুহুল আমিনের এমন নির্দেশের পর তার সহযোগীরা ঘটনাস্থল থেকে তাদরেকে সিএনজি ও মোটরসাইকেল যোগে সরিয়ে নেয়। দুদিন নিকটবর্তী নোয়াখালীর মুছাপুরে আত্বীয়ের বাড়ীতে গিয়ে তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে। এরপর নুর উদ্দিন ময়মনসিংহের ভালুকা ও শামীম মুক্তাগাছায় চলে যায়। একই সাথে শুরু হয় একে আত্মহত্যা বলে প্রচারের চেষ্টা। এটি সমন্বয় করেন থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন ও রুহুল আমিন। সহযোগিতা করেন কাউন্সিলর মকসুদ আলম। টাকার যোগান দেন অধ্যক্ষের স্ত্রী ফেরদৌস আক্তার। এ কাজে ৩ জন স্থানীয় সাংবাদিককে দায়িত্ব দেন রুহুল আমিন । এদের প্রত্যেককে টাকাও দেন তিনি। এদের দায়িত্ব ছিল নিজ নিজ গণমাধ্যমে এ ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে প্রচার করা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম-ফেসবুকে নিজেদের আইডি থেকে অপপ্রচার চালানো। অর্থের যোগানের জন্য ঘটনার আগের দিন অর্থাৎ ৫ এপ্রিল মাদরাসার ভেতরের পুকুর থেকে সোয়া এক লাখ টাকার মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করেন রুহুল আমিন ও মকসুদ আলম। আদালতের সূত্র মতে- ঘটনার পর রুহুল আমিন ও শামীমের ৬ সেকেন্ডের ফোনালাপের নিশ্চিত তথ্য পিবিআই কর্মকর্তাদের কাছে রয়েছে। আদালতে দেয়া জবানবন্দীতে নুর উদ্দিন ও শামীম স্বীকার করেন, রুহুল আমিন ও পৌর কাউন্সিলর মকসুদ আলম গত ২৭ মার্চ তারিখে ওই মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা যৌন হয়রানির দায়ে গ্রেপ্তার হলে তারা অধ্যক্ষ মুক্তি পরিষদ গঠন করেন, মিছিল-সমাবেশের আয়োজন করেন এবং ওসিকে ম্যানেজ করে ব্যাপক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করেন। এসব নিয়ে স্থানীয় মেয়র ও কাউন্সিলর সহ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতাও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ফেনীর আদালত ও পিবিআইয়ের একাধিক স‚ত্রমতে, নানাভাবে এখানে প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিনের নাম চলে এসেছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে। অপরদিকে অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে রুহুল আমিনের সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদটি হাতিয়ে নেয়ার পেছনেও রয়েছে নানা কাহিনী। জানা গেছে, সর্বশেষ ২০১৩ সালে উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হন ফয়জুল কবীর। আর সহসভাপতি নির্বাচিত হন সাবেক সাংসদ রহিম উল্লাহ। আর রুহুল আমিনকে করা হয় ৪৪ নম্বর সদস্য। কিন্তু জেলা আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতার টেন্ডারবাজি ও অনিয়ম দুর্নীতির বিরোধীতা করায় হঠাৎ রহিম উল্লাহকে বাদ দিয়ে ২০১৫ সালে এক নং সহসভাপতি করা হয় রুহুল আমিনকে। এরপর ২০১৭ সালে ফয়জুল কবীর চিকিৎসাধীন থাকার সুযোগে প্রথমে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হন রুহুল আমিন। এরপর ২০১৮ সালে কোনো কাউন্সিল ও দলীয় রেজুলেশন ছাড়াই নিজেকে সভাপতি ঘোষণা দেন তিনি। আর এসবের নেপথ্যে ছিল জেলা আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতা। জেলা আ.লীগের সভাপতি আবদুর রহমান রহমান বলেন, সদস্য থেকে রুহুল আমিন কিভাবে সহসভাপতি এবং সভাপতি হলেন তা আমার জানা নেই। এসব বিষয়ে ফেনীস্থ পিবিআই’র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেছেন আসামীদের স্বীকারোক্তিতে যাদের নাম এসেছে তাদের মধ্যে অনেককে আটক করা হয়েছে। ধৃতদের আদালতে সোপর্দ করাও হয়েছে। এবং কয়েকজনকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এছাড়া রুহুল আমিন সহ যাদের নাম এসেছে। সে তথ্যগুলো যাছাই বাছাই করা হচ্ছে। তারা (রুহুল আমিনসহ ৬জন) সর্বোচ্চ নজরদারীতে আছেন । তথ্যগুলো নিশ্চিত হওয়া গেলে আটক করা হবে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ফেনীস্থ পিবিআই’র পরিদর্শক শাহ আলম জানান, সহসা ভালো কিছু খবর দিতে পারব। সার্বিক বিষয়ে গণমাধ্যমকে বিস্তারিত জানানো হবে বলে তিনি জানান। ফেনী জেলা জজ আদালতের সরকারী কৌসূলী (পিপি) হাফেজ আহাম্মদ ভোরের কাগজকে বলেন, ইতোমধ্যে তিনজন গুরুত্বপূর্ণ আসামীর ১৬৪ ধারায় দেয়া বয়ান লিপিবদ্ধ করা হয়েছে এবং তা বিজ্ঞ জেলা জজ মহোদয়ের দপ্তরে এসেছে। এসব বিষয়ে আ.লীগ নেতা রুহুল আমিন বলেন, ২৭ মার্চ অভিযুক্ত অধ্যক্ষকে তিনি পুলিশে সোপর্দ করেছিলেন। তাহলে তিনি কেন আবার অধ্যক্ষ সিরাজকে বাঁচাতে যাবেন। প্রসঙ্গত, সোনাগাজীর ইসলামীয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার আলীম পরিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে গত ৬ এপ্রিল পরীক্সা কেন্দ্রের একটি চারতলা ভবনের ছাদে নিয়ে গায়ে আগুন দেয় দূর্বৃত্তরা। ১০ এপ্রিল রাতে তিনি ঢামেক এর বার্ন ইউনিটে মারা যান।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App