×

মুক্তচিন্তা

বিশুদ্ধ পানির নিশ্চয়তা ওয়াসাকেই দিতে হবে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০১৯, ১০:০৪ পিএম

ঢাকা ওয়াসার ৯১ শতাংশ গ্রাহকই পানি ফুটিয়ে পান করেন। আর এই পানি ফোটাতেই বছরে জ্বালানি বাবদ ব্যয় হচ্ছে ৩৩২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ বাসাবাড়িতে ৩৬ কোটি ৫৭ লাখ ৩৭ হাজার ঘনমিটার গ্যাস পুড়ছে পানি বিশুদ্ধকরণে। দুর্নীতিবিরোধী বেসরকারি সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। ঢাকা ওয়াসার সরবরাহকৃত পানির মান নিয়ে বরাবরই প্রশ্ন রয়েছে।

রাজধানীবাসীর পানি সরবরাহের একমাত্র প্রতিষ্ঠান ঢাকা ওয়াসার পানির ওপর ন্যূনতম ভরসা করার কোনো উপায় নেই। পানি দুর্গন্ধযুক্ত। পানিতে ময়লা-আবর্জনা-কেঁচো ইত্যাদি পাওয়া যাচ্ছে। এই নিয়ে গণমাধ্যমে লেখালেখি, সরকারের নানা উদ্যোগও কম হয়নি। কিন্তু ফলাফল শূন্য। ‘ঢাকা ওয়াসা : সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনটি বুধবার প্রকাশ করে টিআইবি।

ঢাকা ওয়াসার ১০টি মডস জোনের আওতাধীন আবাসিক, বাণিজ্যিক, শিল্প প্রতিষ্ঠান ও বস্তি এলাকার পানি ও পয়ঃসংযোগ এ গবেষণার আওতায় পড়েছে। গত বছরের এপ্রিল থেকে এ বছরের মার্চ পর্যন্ত সময়ে এ গবেষণা চালানো হয়। জরিপে অংশ নেয়া সেবাগ্রহীতাদের মধ্যে সাড়ে ৫১ শতাংশ ব্যবহারকারী ওয়াসার পানিকে অপরিষ্কার এবং ৪১.৪ শতাংশ দুর্গন্ধযুক্ত বলে অভিযোগ করেছে।

ঢাকার মিরপুর, সবুজবাগ, খিলগাঁও, মালিবাগ, বাড্ডা ও পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকার সেবাগ্রহীতারা বেশি অভিযোগ করেছে। ঢাকা ওয়াসার ভূউপরিস্থ পানির উৎস অধিক মাত্রায় দূষিত হওয়ার কারণে পরিশোধনের পরও স্বাভাবিক অবস্থায় আসে না। ওয়াসার সরবরাহ করা পানি পান করে ২৪.৬ শতাংশ পরিবারের সদস্য পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।

৯১ শতাংশ ব্যবহারকারীর ওয়াসার পানির ওপর আস্থা না থাকায় পানি ফুটিয়ে জীবাণুমুক্ত করতে বিপুল পরিমাণ এই জ্বালানি খরচ হচ্ছে। জানা যায়, রাজধানীর প্রায় দেড় কোটি মানুষের জন্য প্রতিদিন ২৩০ কোটি লিটার পানির চাহিদা থাকলেও এর বিপরীতে ওয়াসার উৎপাদন ক্ষমতা ২১০ কোটি লিটারের মতো। এর ৭৮ শতাংশ তোলা হয় গভীর নলকূপ দিয়ে, বাকিটা বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যার পাঁচটি শোধনাগারে শোধনের মাধ্যমে।

যা শোধনের পরও দূষিত ও মানহীনই থাকছে। এদিকে বিভিন্ন স্থানের পাইপলাইনে রয়েছে অসংখ্য ফুটো বা লিকেজ। এসব ফুটো দিয়ে বর্জ্য ঢুকছে পাইপলাইনের মধ্যে। একইভাবে বর্জ্য যুক্ত হচ্ছে স্যুয়ারেজ লাইনেও। এ পানি অতিমাত্রায় ফুটানোর পরও পানযোগ্য করতে পারছেন না নগরবাসী। ওই পানি ব্যবহারে চোখ জ্বলা, গা চুলকানোসহ নানা উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। কলেরা হাসপাতালেও বেড়ে যায় রোগীদের ভিড়।

আমরা মনে করি, পানির মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে কোনো ধরনের অবহেলার অবকাশ নেই। রাজধানীতে পানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পানির বিকল্প উৎস যেমন সন্ধান ও ব্যবহার করতে হবে তেমনি ঢাকা ওয়াসার কার্যক্রম আরো বাড়াতে ও গতিশীল করতে হবে। এই মুহূর্তে ঢাকা ওয়াসাকে সরবরাহকৃত পানির বিশুদ্ধতা সংরক্ষণে মনোযোগ দিয়ে প্রয়োজনীয় কার্যব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

যে কোনো মূল্যে বিশুদ্ধ পানির নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে। ওয়াসার সরবরাহকৃত পানি বিশুদ্ধ করার পাশাপাশি নদী দূষণ রোধে টাস্কফোর্স গঠনসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া দরকার।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App