×

জাতীয়

মেয়ে তো ফিরে পাব না তবে বিচার দেখে যেতে চাই

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০১৯, ০২:০৫ পিএম

মেয়ে তো ফিরে পাব না তবে বিচার দেখে যেতে চাই
কুমিল্লার আলোচিত কলেজছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনুর হত্যাকাণ্ডের তিন বছর পার হলেও এ মামলার তদন্তে দৃশ্যত কোনো অগ্রগতি হয়নি। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বদল হয়েছেন চারবার। সিআইডির ফরেনসিক ল্যাব থেকে ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট মেলেনি দেড় বছরেও। এখন তদন্ত সংশ্লিষ্টরাও এড়িয়ে চলেন মামলার বাদী ও তনুর পরিবারের সদস্যদের। তদন্ত সংশ্লিষ্টদের একের পর এক আশার বাণী নিরাশায় পরিণত হওয়ায় তনুর পরিবারকে গ্রাস করেছে হতাশা। তনুর অসহায় পরিবার করুণ আর্জি প্রকাশ করে বলেছেন, মেয়ে তো ফিরে পাব না তবে বিচার দেখে যেতে চাই। এ জন্য তারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তার কাছে বিস্তারিত জানানোর সুযোগ চান। তনুর অসহায় মা আনোয়ারা বেগম গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভোরের কাগজকে ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, সার্জেন্ট জাহিদ ও তার স্ত্রীকে আটক করলেই অনেক বিষয়ে খোলাসা হতো। তবে কেউ তো তাদের কিছু বলল না। বরং তাকে ঢাকায় বদলি করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তনুর হত্যার বিচারের আশায় নানা জায়গায় ঘুরে অসুস্থ হয়ে পড়েছি। এখন মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্টরা কেউ যোগাযোগ করে না। ফোন করে বা কার্যালয় গিয়েও তাদের পাওয়া যায় না। মেয়ে তো ফিরে পাব না, তবে তার খুনের বিচার দেখে যেতে চাই। বেঁচে থাকতেই মেয়ে হত্যার বিচার যেন দেখে যেতে পারেন এ আর্জি জানাতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চান বলেও জানান তিনি। চাঞ্চল্যকর তনু হত্যা মামলার তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জালাল উদ্দিন বলেন, এখনো ডিএনএ রিপোর্ট হাতে পাওয়া যায়নি। ওই রিপোর্ট পেলে প্রোফাইল ম্যাচিং করা হবে। এতে তদন্তে গতি পেতে পারে। তিনি বলেন, ডিএনএ রিপোর্ট অনেক সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তবে দেড় বছরেও ওই রিপোর্ট হাতে না পাওয়ায় তদন্তে অগ্রগতি হচ্ছে না বলে জানান তিনি। তনুর পরিবারের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সার্জেন্ট জাহিদ ও তার পরিবারের সঙ্গে তনুর পরিবারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। এখনো তারা কিছু তথ্য গোপন করছে বলে তিনি ধারণা করছেন। এ ছাড়া তদন্তের প্রয়োজনে এখনো অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে এবং আগে যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল তাদের মধ্যে অনেককে ফের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। তদন্ত শেষে চার্জশিট দাখিল করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, কবে তা হবে এখনো বলার সময় আসেনি। ২০১৬ সালের ২০ মার্চ রাতে কুমিল্লা সেনানিবাসের ওলিপুরের পাওয়ার হাউস এলাকায় ঝোপ থেকে উদ্ধার করা হয় স্থানীয় ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনুর লাশ। লাশ উদ্ধারের পরদিন তার বাবা ইয়ার হোসেন অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। মামলাটি প্রথমে তদন্ত শুরু করে থানা পুলিশ। এরপর ডিবির কাছে তদন্তভার ন্যস্ত হয়। চারবার তদন্ত কর্মকর্তা বদলের পর বর্তমানে মামলার তদন্ত করছে সিআইডি। তনুর মৃত্যুর ঘটনার প্রথম থেকে তার ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। লাশ উদ্ধারের ১৫ দিন পর দাখিল করা হয়েছিল প্রথম ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন। সেখানে মৃত্যুর কারণ নির্ণয় করতে পারেননি ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক ডা. শারমিন সুলতানা। তার বিরুদ্ধে আলামত গোপন করার অভিযোগ তোলে তনুর পরিবার। এরপর কবর থেকে লাশ তুলে দ্বিতীয় দফায় ময়নাতদন্ত করা হয়। দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, মৃত্যুর আগে তনুর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের আলামত পাওয়া গেছে। তবে সেটি ধর্ষণ ছিল কিনা, তা স্পষ্ট করেননি চিকিৎসকরা। ওই প্রতিবেদনে মৃত্যুর কারণ বলতে পারেনি চিকিৎসক দল। প্রথমবারের মতো গোঁজামিল দিয়ে দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হয় বলে অভিযোগ তোলেন তনুর পরিবার। এখন তনুর পরিবার বিচার পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছেন। সিআইডির একাধিক সূত্র মতে, তদন্তে তনুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে এ ধরনের আলামত পাওয়া গেছে। সন্দেহভাজনদের ডিএনএ প্রোফাইল তৈরি করে ধর্ষণের ঘটনায় পাওয়া আলামতের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হবে। তনুর অন্তর্বাসে তিনজন পুরুষের শুক্রাণু পাওয়া যায় ডিএনএ নমুনায়। এতে ধারণা করা হচ্ছে, ধর্ষণের পর তনুকে হত্যা করা হয়েছে। তবে এসব আলামত ব্যবহার করে এখনো সন্দেহাতীতভাবে কোনো আসামি শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। চিকিৎসক, তনুর স্বজন ও সেনাসদস্যসহ এখন পর্যন্ত বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার দেড়শ জনকে তারা জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App