লোকসংস্কৃতির নবজাগরণ
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৪ এপ্রিল ২০১৯, ০৯:৫৩ এএম
পহেলা বৈশাখ বাঙালির জাতীয় উৎসব। লোকসংস্কৃতির নবজাগরণের দিন। লোকসংস্কৃতির জাগরণের কথা ভাবতে গেলে আমার ভাবনায় জুড়ে বসে থাকে সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের ‘এক বিশাল পুনরুত্থানের ছবি’।
সংস্কৃতি নিয়ে স্বপ্নে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ‘এক বিশাল পুনরুত্থানের ছবি’ দেখেন, ‘যে, পুনরুত্থান মানুষকে তার শেকড়ে এবং মাটিতে নিয়ে যাচ্ছে; সমষ্টির জীবনের ও ভালোবাসার কাছে, তার সামান্য চাওয়া-পাওয়া, তার সম্মান এবং বিশ্বাসের জায়গাটায় নিয়ে যাচ্ছে। দৃশ্যমাধ্যম আমাদের উৎপাদন নয়, তবে আমরা একে ব্যবহার করব, প্রয়োজন হলে আত্মস্থ করব। কিন্তু তা পশ্চিমের আরোপিত সূত্র মেনে নয়, বরং আমাদের চিরকালীন সৌন্দর্য, মূল্যবোধ ও ভালোবাসার সূত্র মেনে’। ইফতেখারুজ্জামান সেইদিন টিআইবিকে বন্ধ করে দেবেন।
দুই.
এমন একটি অনাগত স্বপ্নীল পরিস্থিতিতে সংস্কৃতির ‘এক বিশাল পুনরুত্থানের ছবি’ নির্মাণের জন্য প্রয়োজন পড়ে আমাদের লোকসংস্কৃতির নবজাগরণের। আমার চিন্তাটা এরকম এই ‘বিশাল পুনরুত্থানের ছবি’টি হতে পারে বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতির একটি আদর্শ চিত্র, হতে পারে রূপকল্প বা কল্পচিত্র। স্বপ্ন তো দেখতেই হবে। প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির ব্যবধান যত দুস্তরই হোক তা অব্যাহত রাখতেই হবে। ‘একজন লাতিন দার্শনিক একবার বলেছিলেন, আমাদের স্বপ্ন দেখতেই হবে, কেননা স্বপ্ন না দেখলে আমরা তো কখনো জেগে উঠতে পারব না।’ স্বপ্নের স্বদেশের প্রায় একশ পৃষ্ঠার বিবরণ পড়তে পড়তে এক সময় আমিও স্বপ্নদর্শী হয়ে পড়ি। আমি আমার স্বদেশে আমাদের লোকসংস্কৃতির নবজাগরণের স্বপ্ন দেখি।
তিন.
আমার স্বপ্নের স্বদেশে লোকসংস্কৃতির নবজাগরণ ঘটলে আজকের চা বাগানগুলোতে যেমন দেখা যায়, তেমনি পাড়ায় পাড়ায়, নগরের মহল্লায় নাটমণ্ডব হবে। এ সব নাটমণ্ডবে মাদার গীত, মনসার গান, আলকাপ, ঈমান যাত্রা, কুশান পালা, কবির গান পরিবেশিত হবে। জহির উদ্দিন পালানের দেহতত্ত্বের গান নগরে নগরে তরুণের আড্ডায় গীত হবে। রেখারানীর ‘মহাপ্রভু নিলাচলে’ শোনার জন্য স্টেডিয়াম কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যাবে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, অসংখ্য তরুণ, যুবা, প্রাসাদবাসী নারীকুল দল বেঁধে একটা টিকেটের জন্য ছুটবে। আশরাফ আলীর ‘মনসার গান’ শুনে তারা ফুঁপিয়ে উঠবে। রেখারানীর ‘মহাপ্রভু নিলাচলে’ শুনে হাউমাউ করে কাঁদবে।
পলানদার শতসহস্র শিষ্য ‘যুগীপর্ব’ পরিবেশন করে দেশ-বিদেশে খ্যাতি অর্জন করবে। পুনা ফিল্ম ইনস্টিটিউট ফেরত চলচ্চিত্রকার পুঠিয়ার ‘মিছিল গান’ চিত্রায়িত করে পুরস্কার লাভ করবেন। ভাটিয়ালি, জারি, সারি, মুর্সিদি, লালন, হাছন, শ্রীকৃষ্ণ কীর্তনের সিডি বিক্রি মাসের পর মাস সর্বোচ্চ তালিকায় স্থান পাবে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণের স্থায়ী যাত্রা মঞ্চে প্রতিদিন শয়ে শয়ে লোক টিকেট কেটে যাত্রা দেখবে।
বিশিষ্টজনরা বলেছেন, আমার স্বপ্নের স্বদেশের ‘গ্রামে গ্রামে ইন্টারনেট পৌঁছে যাবে’। আমি মনে করি, লোকসংস্কৃতির নবজাগরণ ঘটলে এমনটি হবে। তারপর ইন্টারনেটের মাধ্যমে অসংখ্য তরুণ, যুবা শেফালী ঘোষ, শ্যাম সুন্দর বৈষ্ণবের গান ডাউনলোড করবে। লোকসংস্কৃতির ই-ম্যাগাজিন ইন্টারনেটের কল্যাণে তারুণ্যের পাঠের অংশ হয়ে যাবে। গুগলে ছড়িয়ে পড়বে শ্রীকৃষ্ণ লীলা, মাদার গীত, মনসার ভাসান, শীবের গাজন।
চার.
আমার স্বপ্নের স্বদেশে লোকসংস্কৃতির নবজাগরণ ঘটলে ঘরে ঘরে লোক পুরাণের চর্চা হবে। লোকসংস্কৃতির নবজাগরণের কালে সেই চারণরা রিভু সম্মানে পূজিত হবেন। দেশের ধনীদের তালিকায় লোকসংস্কৃতির চারণ শিল্পীদের নাম যুক্ত হবে। কারণ আমাদের চারণরা রচনা করেন আমাদের লোকসংস্কৃতির সোপান।
নাট্যকার অহীভ‚ষণ ভট্টাচার্য ১৮৯৪ সালে ‘সুরথ উদ্ধার’ যাত্রায় বিবেক নামের চরিত্র সৃষ্টি করে যাত্রা শিল্পে নতুন মাত্রা যোগ করেন। তারপর থেকে যাত্রায় বিবেকের গান অপরিহার্য হয়ে ওঠে। যাত্রা পালায় বিবেকের গান পরিবেশন করে মানিকগঞ্জের বিবেক শিল্পী বলাই দাস, উপেন দাস জেলার সর্বোচ্চ করদাতা হবেন। ময়মনসিংহের বিবেক শিল্পী নিখিল সরকারের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি পদক লাভ করবেন। তবে অধিক অর্থের কারণে কারো শিল্পী সত্তা বিনষ্ট হবে না, কারণ বর্তমানে এমন এক বয়াতিকে দেখছি, দেশ-বিদেশে সুনাম ছড়ানোর পর তার কণ্ঠের সেই মাধকতা, রস মঞ্জুরি কেমন জানি লোপ পেয়েছে। নানা দুর্নাম তার সঙ্গী। আমার স্বপ্নের স্বদেশে লোকসংস্কৃতির নবজাগরণের কারণে তেমনটি হবে না। জয়দুর্গা অপেরার বিবেক শিল্পী কালীপদ দাশ, বাবুল অপেরার বিবেক শিল্পী মোহন লাল রায়, নিউ বাবুল অপেরার বিবেক শিল্পী বাবুলাল রায়, দুলাল বিশ্বাস, নব রঞ্জন অপেরার গৌরাঙ্গ আদিত্য, ঝিনাইদহের মহীতোষ বিশ্বাস, খুলনার চুকনগরের তপন দেবনাথ, ঢাকার সরল খাঁর অসংখ্য শিষ্য যাত্রা শিল্পে বিবেকের গান পরিবেশন করে সুনাম অর্জন করবে। যাত্রা পালার বিবেকের গানের মাধ্যমে জাতির বিবেককে জাগ্রত করবে। চারণ কবি মুকুন্দ দাশের গান লোকমুখে কারণে-অকারণে উচ্চারিত হবে।
পাঁচ.
জাপানের নো নাটকের খবর আমরা এখন রাখি। গোব থিয়েটারে গিয়ে শেক্সপিয়ারের নাটক দেখি। তখন আমরা বরিশালে গিয়ে মনসার ভাসান দেখব। রাজশাহীতে আলকাব দেখব। আমরা তাই বলে শেক্সপিয়ার, ইবসেনের বিরোধী হবো না। আমাদের যাত্রা মঞ্চে তখন মিলন কান্তি দে, অমলেন্দু বিশ্বাসের শিষ্যরা হ্যামলেট, ম্যাকবেথ করবে। ডলস হাউজ, এনিমি অব দ্য পিপলস মঞ্চস্থ হবে মানিকগঞ্জের তরা গ্রামে। শেক্সপিয়ার, ইবসেনের দেশের লোকেরা অবাক বিস্ময়ে দেখবে তাদের চাইতে বেশি আন্তরিকতায় তাদের মানুষগুলো বাঙালির লোকসংস্কৃতির অংশ হয়ে উঠেছে। রবীন্দ্রনাথ, শেক্সপিয়ার, ব্রেশট, মাইকেল, দীনবন্ধু মিত্র, সৈয়দ শামসুল হক, সেলিম আলদীন, শম্ভু মিত্র, উৎপল দত্তের নাটক বাংলার নাটমঞ্চে মঞ্চস্থ হবে। রবীন্দ্রনাথের মুক্তধারা, রক্তকরবী, রাজা যাত্রা দেখার জন্য গ্রামে গ্রামে ধুম পড়ে যাবে। তবে বুঝে না বুঝে উন্মাদের মতো রবীন্দ্র চর্চায় মত্ত হবে না। কারণ রবীন্দ্রনাথের ১৫০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রবীন্দ্র নাটক মঞ্চায়নের জোয়ার দেখে এমনটি বললাম। তাই জোয়ারে বড় বেশি ভয় পাই। বেনোজল ঢুকে যাওয়ার ভয়।
ছয়.
আমার স্বপ্নের স্বদেশে লোকসংস্কৃতির নবজাগরণ ঘটলে আমার দেশের তারুণ্য যুগিপর্বের তাত্তি¡ক ভিত্তি, ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ, বাংলার লোক ঐতিহ্য যাত্রার বিশেষত্ব ও স্বাতন্ত্র্য সম্পর্কে তর্কে লিপ্ত হয়ে রাতের পর রাত পার করে দেবে। শিব গাজনের গীত, বাংলার নাট্য কবি আর লোক নাট্য আঙ্গিক সংক্রান্ত আলোচনায় সানন্দে অংশগ্রহণ করবে। দর্শক টিকেট কেটে এই আলোচনায় যোগ দেবে।
সাত.
আমার স্বপ্নের স্বদেশে লোকসংস্কৃতির নবজাগরণ ঘটলে বাংলাদেশ জাতিসংঘের নেতৃত্বের আসনে বসবে। তখন নছিমন পালা, যুগীপর্ব, ভাসান যাত্রাসহ ৩৫টি লোক পালার সংগ্রাহক কাজী সাইদ হোসেন দুলাল বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক দূত হিসেবে দেশ দেশে বক্তৃতা দিয়ে বেড়াবেন। দেশে দেশে মানুষ টিকেট কেটে তার কথা শুনবে। তার শিষ্যরা রাজশাহীর পুঠিয়াতে ডেড়া বানিয়ে রাতের পর রাত বাংলার লোকসংস্কৃতির চর্চা করবে। তাদের সংগ্রহের তালিকা শতক ছাড়িয়ে যাবে।
আট.
বাংলার লোক সংস্কৃতির বিকাশের ধারায় রবীন্দ্রনাথ থেকে সেলিম আলদীন পর্যন্ত সব বিশিষ্টজন যুক্ত ছিলেন। দীনেশ চন্দ্র সেন, আশুতোষ ভট্টাচার্য্য, আশুতোষ চৌধুরী, আবদুল হক লোকসংস্কৃতির অসীম ভাণ্ডারকে আমৃত্যু উন্মোচিত করেছেন। তাদের পথ ধরে তরুণ প্রজন্ম এগিয়ে যাবে। আমার স্বপ্নের স্বদেশে লোকসংস্কৃতির নবজাগরণ ঘটলে এ প্রজন্মের লোকগবেষক সাইমন জাকারিয়া, তপন বাগচী দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে লোকসংস্কৃতির হাজার শ্রেণিবিভাগ নিয়ে ক্লাস নিতে চুক্তিবদ্ধ থাকবে। তাদের মেধা এবং সক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহারে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সহযোগিতা করবে।
নয়.
প্রশ্ন উঠতে পারে, আমার স্বপ্নের স্বদেশে লোকসংস্কৃতির নবজাগরণ কীভাবে সম্ভব?
দশ.
বাংলাদেশের নেতৃত্বের আসনে প্রকৃত স্বপ্নদ্রষ্টারা অধিষ্ঠিত হলে লোকসংস্কৃতির নবজাগরণ হবেই হবে। আমাদের তারুণ্য যদি এগিয়ে যায়, তবে সমষ্টির লোক সংস্কৃতি চর্চার ধারা প্রতিষ্ঠিত হতে বাধ্য। আলোকিত দেশে আলোকিত মানুষের সংখ্যা দিনে দিনে বাড়তে থাকলে তবে ভাটিয়ালি, মুর্সিদী, অষ্টক গানের শ্রোতা তো বৃদ্ধি পাবেই। বাংলাদেশের সমতাভিত্তিক রূপকল্প প্রণীত হলে বাংলা লোকসংস্কৃতির সঙ্গে এ দেশের অর্ধশত আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর সংস্কৃতির প্রচার, প্রসার ঘটবে। বাংলার লোকসংস্কৃতির নবজাগরণ একক জাতির আধিপত্যকে রহিত করে সমষ্টির প্রসার ঘটাবে।
এগার.
আমার স্বপ্নের স্বদেশে লোকসংস্কৃতির নবজাগরণ সূচিত হবে। লোক নাট্যের ঐতিহ্যের রেলগাড়িটি জিক জিক করে বিশ্ব ভ্রমণ করবে। এজন্য আপন ঐতিহ্যের অঙ্গনে শুধু টিকে থাকার জন্য নয়, অনিশেষ চর্চার জন্য সম্ভাব্য উপায়সমূহ খুঁজে বের করবে গবেষকগণ। গবেষণার জন্য থাকবে নানান সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা। এ ব্যাপারে প্রধান ভ‚মিকা পালন করবে লোকসংস্কৃতি ইনস্টিটিউট। জেলায় থাকবে লোকসংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের শাখা। আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় এই শাখা আদিবাসী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট নামে কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এই লোকসংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের সঙ্গে গ্রাম থিয়েটার, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন, আইটিআইসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো সংম্পৃক্ত থাকবে। এর মাধ্যমে লোকসংস্কৃতির সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং চর্চা অব্যাহত থাকবে। ফলে আমার স্বপ্নের স্বদেশে লোকসংস্কৃতির নবজাগরণ ঘটবে।
বারো.
দেশকালের বাস্তবতায় সেই হাজার বছর আগেই এই বাংলায় এক উন্নত শিল্পরুচি তৈরি হয়। বলার অপেক্ষা রাখে না, সেই রুচিবোধ আজো প্রবহমান। সেই সমৃদ্ধ রুচি নির্মাণে আমাদের পুতুল নাচ, গম্ভীরা, আলকাপ, লীলা, শাস্ত্রগান, কবিগান, ভাসান, গাজীরগান, পালা, কথকতা, লক্ষ্মীর গান, যুগীপর্বের গান, বিচারগান, ঝুমুর, গীতিকা, যাত্রা, অষ্টক, ঘেটু, জারি, সারি, নাটগীত, পাঁচালী, লেটু, ভাটিয়ালি, মুর্সিদী, গাজীরগান ইত্যাদি লোকসংস্কৃতির বিচিত্র অনুষঙ্গের অপরিসীম ভ‚মিকা রয়েছে। আমাদের মাইজভাণ্ডারি গানের কথা ভুলি কী করে? লোকপরম্পরায় এর চর্চার পাশাপাশি গাজন, রথযাত্রা, নবান্ন, মেলা, তাজিয়া ইত্যাদি উৎসব-পালা, পার্বণের আয়োজন সমৃদ্ধ করেছে। এমনিতেই আমাদের বারো মাসে তের পার্বণ। আর এই পার্বণকে ঘিরেই নানা লোকাচারে পূর্ণ আমাদের লোকায়ত জীবন। ছায়ানটের পহেলা বৈশাখে, চট্টগ্রামে জব্বারের বলি খেলার জন্য ১২ বৈশাখ কাউকে ডাকতে হয় না। এখন আর এ সব লোক মেলা আয়োজনের জন্য আয়োজকের দরকার পড়ে না। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে হয় না। বাংলা মাসের নির্দিষ্ট দিনে এসে বসে যায় এসব মেলা।
তেরো.
উপরে উল্লিখিত বাংলার ঐতিহ্যবাহী লোকসংস্কৃতি কতকগুলো বিশেষ বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত রীতি, পদ্ধতি, কাঠামোর মধ্য দিয়ে বিকশিত হয়েছে। সৈয়দ জামিল আহমেদ এগুলোকে ছয়টি ভাগে বিভক্ত করেছেন ১. সংস্কৃত নাট্য প্রভাবজাত রীতি, ২. কথানাট্য, ৩. নাটগীতি, ৪. লৌকিক হাস্যরসাত্মক নাট্য, ৫. মিশ্রনাট্য এবং ৬. পুতুল নাচ। এছাড়াও আছে উপনিবেশ প্রভাবিত নাট্য ধারা। লোকসংস্কৃতির নবজাগরণের ফলে সব বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত রীতি, পদ্ধতি, কাঠামো অক্ষু্ণ্ণ থাকবে। একের কারণে অন্যের বিনাশ ঘটবে না। কারণ বাংলার চিরায়ত ধারার সঙ্গে এই ঔপনিবেশিক ধারাও বর্তমানে আমাদের সংস্কৃতি চর্চার অংশ হয়ে গেছে। তবে স্বপ্নের স্বদেশে লোকসংস্কৃতির নবজাগরণ ঘটলে বর্তমানের মতো সংমিশ্রণের মাধ্যমে বাংলার চিরায়ত ধারার বিকৃতি ঘটবে না। গ্রুপ থিয়েটার অঙ্গনে মনসার ভাসান, লোক পালার নামে আমরা যা করছি, তা চিরায়ত ধারার পাশ্চাত্য সংস্করণ। ভিন্নভাবে বললে ওই বিকৃতিরই নামান্তর। বহির্বিশ্ব ঐটা দেখে বাংলার লোকংস্কৃতির স্বাদ নিচ্ছে। তরুণ প্রজন্ম ওই বিকৃতি জানছে। লোকসংস্কৃতির নবজাগরণের ফলে এ সব রহিত হবে।