×

জাতীয়

অনাচারের বিরুদ্ধে শুভবোধের ডাক রমনা বটমূলে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ এপ্রিল ২০১৯, ১০:৪৭ এএম

অনাচারের বিরুদ্ধে শুভবোধের ডাক রমনা বটমূলে
রাজধানীর ঐতিহাসিক রমনার বটমূলে চলছে ছায়ানটের বর্ষবরণের অনুষ্ঠান। রবিবার ভোর সোয়া ৬টায় এ অনুষ্ঠান শুরু হয়। বর্ষবরণের ৫২তম এই আয়োজনের মূল প্রতিপাদ্য- ‘অনাচারের বিরুদ্ধে জাগ্রত হোক শুভবোধ’। আর সবাই নিজেকে বিশুদ্ধ করার চেষ্টা করার আহ্বানের কথা জানিয়েছেন ছায়ানটের সভাপতি সনজীদা খাতুন। তিনি বলেন, আর আমরা যেন নীতিবিহীন অন্যায় অত্যাচারের নীরব দর্শকমাত্র হয়ে না থাকি। সনজীদা খাতুনের ভাষায়, প্রতিবাদে প্রতিকার সন্ধানে হতে পারি অবিচল- নববর্ষ এমন বার্তাই সঞ্চার করুক আমাদের অন্তরে। শুভ হোক নববর্ষ। অর্থনৈতিক নানা সূচকে দেশের উন্নতি হলেও সামাজিক বৈষম্য-অনাচার আমাদের পিছু ছাড়ছে না। গত সপ্তাহে নিজের প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের যৌন নিপীড়নের প্রতিবাদ করায় তাকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। সারা দেশে সেই ঘটনার প্রতিবাদ চলছে। সেই বাস্তবতার কথা স্মরণ করে ছায়ানট সভাপতি সনজীদা খাতুন বলেন, চোখ মেললে কিংবা কান পাতলে নিত্যই শিশু, নারী, বল-ভরসাহীন মানুষ তথা সমগ্র মানবতার ওপর নির্মম আচরণের সংবাদ, নিয়ত মার খাচ্ছে সমাজের ধারণা। কোথায় যাচ্ছি? তার মতে, স্বার্থান্বেষী অমানুষদের আত্মসুখ সন্ধানের ফলে নির্যাতনের হাত থেকে পরিত্রাণ পায় না পরিবার। সমাজের কঁচিকাঁচা থেকে শুরু করে কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতী, সমাজের কোনো মানুষ। কিছু মানুষ কি পাষণ্ড হয়ে উঠল! তিনি বলেন, নববর্ষ যদি ভ্রাতৃত্ববোধ-মানবতাবোধের উন্মেষ না ঘটাতে পারে, তবে নতুন দিন কী বার্তা নিয়ে আসে? এ অন্যায়ের প্রতিবাদে এবার ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান সনজীদা খাতুন। এরপর সবাইকে দাঁড়িয়ে এক মিনিটি নীরবতা পালনের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা সবাই উঠে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করব, আমাদের ক্ষোভ জানাব, প্রতিবাদ জানাব, দেশে অনাচারের বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, নুসরাত জাহান, তনু, সাগর-রুনি, মিতু… যে সমস্ত বিষয়ে আমরা আজ পর্যন্ত কোনো খবর পেলাম না বিচারের, সেসব বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে এবং বিগত প্রাণগুলোর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা জানিয়ে আমরা এক মিনিট নীরবে দাঁড়িয়ে থাকব। এই নীরব প্রতিবাদের শেষে ছায়ানট সভাপতি বলেন, অত্যাচার অনাচার নিপাত যাক, জয় হোক সত্যের সুন্দরের। সংগীত পরিবেশনা পর্বে ছায়ানটের বড়দের দল সম্মেলক কণ্ঠে পরিবেশন করে ‘হিংসায় উন্মত্ত পৃথ্বী’, রবীন্দ্রসংগীত ‘সকল কলুষ তামস হর, জয় হোক তব জয়’, ‘আনো আনো অমৃত বারি’, ‘নাই নাই ভয়, হবে হবে জয়’, ‘কোন মেস্তরি নাও বানাইল’, ‘ও মোদের দেশবাসীরে আয়রে’। ছোটদের দল সম্মেলন কণ্ঠে পরিবেশন করে ‘আপনি অবশ হলি’, ‘ভাইয়ের দোরে ভাই কেঁদে যায়’, ‘তুমি বাহির থেকে’, ‘এমন মানব জনম আর কি হবে’। পরে ছোট ও বড়দের দল মিলে পরিবেশন করে ‘সংঘ শরণ তীর্থযাত্রা’, ‘আয়রে বাঙ্গালি আয় সেজে আয়’। প্রভাতী আয়োজনের গানগুলো কাজী নজরুল ইসলাম, অতুলপ্রসাদ সেন, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, রজনীকান্ত সেন, লালন শাহ, মুকুন্দ দাস, অজয় ভট্টাচার্য, শাহ আবদুল করিম, কুটি মনসুর, সলিল চৌধুরী ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনা থেকে নির্বাচন করা হয়েছে। এছাড়া বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, শিশু একাডেমি, বেঙ্গল ফাউন্ডেশন, জাতীয় প্রেস ক্লাব, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, কেন্দ্রীয় কচিকাঁচার মেলা, বেণুকা ললিতকলা কেন্দ্রসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন বর্ষবরণ অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে। রাজধানীর পাঁচতারকা হোটেল সোনারগাঁও, র‌্যাডিসন, ওয়েস্টিন, ঢাকা রিজেন্সি, খাজানাসহ হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলোর উদ্যোগেও উদযাপিত হবে নতুন বছরের উৎসব। পহেলা বৈশাখ উদযাপন করবে ঢাকা ক্লাব, গুলশান ক্লাব, উত্তরা ক্লাবও। তবে গত তিন বছরের ধারাবাহিকতায় নিরাপত্তাজনিত কারণে এবারও বিকাল ৫টার মধ্যে বর্ষবরণের সব অনুষ্ঠান শেষ করার নির্দেশনা দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অন্যদিকে পুরো জাতি মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির মৃত্যুর শোকে শোকাহত।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App