×

অর্থনীতি

বাজারে ইলিশের দাম দ্বিগুণ, মাংস-সবজির দাম চড়া

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ এপ্রিল ২০১৯, ০৭:১১ পিএম

বাজারে ইলিশের দাম দ্বিগুণ, মাংস-সবজির দাম চড়া

ইলিশ মাছ/ ফাইল ছবি

নববর্ষে ইলিশের সঙ্গে পান্তা না হলে বাঙালিয়ানাই যেন বৃথা। পহেলা বৈশাখ ঘিরে তাই ইলিশের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় রাজধানীর বাজারে ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে সুস্বাদু এ মাছের দাম।

দুইদিন পরেই বাঙালির ঐতিহ্যময় উৎসব পহেলা বৈশাখ। নববর্ষকে কেন্দ্র করে বাজারে এক কেজির কিছু বেশি ওজনের একটি ইলিশের দাম চাওয়া হচ্ছে আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা। যা সপ্তাহখানেক আগেও দেড় হাজার টাকার কাছাকাছি ছিল। নববর্ষের দিন যতো এগিয়ে আসছে, ততোই উত্তাপ বাড়ছে রূপালি ইলিশের।

এদিকে মাছ ও মাংসের দাম মানুষকে অস্বস্তি দিলেও এ সপ্তাহে দাম বাড়েনি কোনো সবজির। গত দুই সপ্তাহ ধরে সবজির দাম একই রয়েছে। প্রায় সব ধরনের সবজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকায়। তবে বাজারে ডিমের দাম সামান্য কমেছে। প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। যা গত সপ্তাহে ছিল ১০৫ টাকা। অপরিবর্তিত রয়েছে সবধরনের মুদি পণ্যের দাম।

আজ শুক্রবার (১২ এপ্রিল) রাজধানীর কাওরানবাজার, যাত্রাবাড়ী ও সূত্রাপুর, নয়াবাজার, রায়সাহেব বাজার, সেগুনবাগিচা বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, সাপ্তাহিক ছুটির দিন থাকায় বাজারে ক্রেতা সমাগম বেশি। ইলিশের উপস্থিতি ও বিক্রি দুটোই বেড়েছে। ইলিশের পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। ক্রেতাদের কাছে টানতে বিক্রেতারা হাক ডাক দিচ্ছেন। বাজারে ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের প্রতিটি ইলিশের দাম দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা। এই ওজনের ইলিশ কিছুদিন আগেও এক হাজার থেকে এক হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।

এছাড়া নদীর ৯০০ থেকে ১ কেজি ওজনের প্রতি কেজি ইলিশ তিন হাজার টাকা চাওয়া হচ্ছে। এক কেজি ১০০ গ্রাম থেকে এক কেজি ২০০ গ্রাম ওজনের বড় ইলিশও কিছু বাজারে দেখা গেছে। দাম চাইছে প্রতি কেজি চার হাজার টাকা। আর দেড় কেজি বা দুই কেজির কাছাকাছি ওজনের ইলিশের প্রতি কেজির দাম চাওয়া হচ্ছে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা। তবে ৫০০ গ্রামের নিচে এক হালি ইলিশের দাম তিন হাজার টাকা। তবে বার্মিচ ও সাগরের ইলিশের দাম তুলনামূলকভাবে কম।

এছাড়া গত সপ্তাহের মতো সব থেকে কম দামে বিক্রি হচ্ছে তেলাপিয়া মাছ, দাম ১৬০ থেকে ২০০ টাকা কেজি। পাঙাস মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি, রুই ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি, পাবদা ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি, টেংরা কেজি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, শিং ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি, বোয়াল ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি, চিতল ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

কাওরানবাজারের ইলিশ বিক্রেতা জয়নাল আবেদিন বলেন, বৈশাখ এলে ইলিশের চাহিদা বাড়ার পাশাপাশি দাম থাকে আকাশচুম্বি। এছাড়া বাজারে ইলিশের ক্রেতাও অনেক কম। কারণ এখন আগে থেকেই সবাই ইলিশ সংরক্ষণ করে রাখে। আজ বাজারে এক কেজি ওজনের একটি ইলিশ ৩ হাজার, ১২০০ গ্রামের একটি ইলিশ ৪ হাজার টাকা, আর এক কেজি ৫০০ গ্রামের একটি ইলিশ ৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। যার দাম এক সপ্তাহ আগেও ছিল দেড় হাজার থেকে দুই হাজার টাকা।

কারওয়ানবাজারে বাজারে ইলিশ কিনতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী অমিত বলেন, বাজারে ইলিশ কিনতে আসলাম। ৮০০ টাকা দিয়ে একটি কিনেছি। বিক্রেতা ওজন বলছে ৭শ’ গ্রাম। জানি না আসলে কতটুকু হবে। তবে দাম নিয়ে কোনো ক্ষোভ নেই। মাছটা যেন বার্মিজ না হয়ে দেশী ইলিশ হয়।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, দাম নিয়ন্ত্রণে কারও কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখছি না। প্রতিবছর রোজার সময় আসলেই বিভিন্ন মহল বাজার মনিটরিংয়ে তৎপর হয়। কিন্তু রোজার আগেই যেসব জিনিসের দাম বহুগুণে বেড়ে যায়, সে বিষয়ে কারো কোনো ধারণা নেই। জিনিসপত্রের দামের বিষয়ে দায়িত্বশীল কারো কোনো বক্তব্যও শুনছি না। যত দুর্ভোগ সব নিম্ন আয়ের মানুষের।

রাজধানীর বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে প্রতিকেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ টাকা। আর খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ থেকে ৮৮০ টাকা। আর বয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ থেকে ১৭০টাকা। লেয়ার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা। আর কক মুরগির দাম অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে কেজি ৩০০ টাকায় পৌঁছে গেছে। এখন বাজারভেদে কক মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৯০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি।

চড়া দামে বিক্রি হওয়া সবজির দাম এ সপ্তাহে অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে নতুন আসা সবজি বরবটির বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়। পটল ৫০ থেকে ৭০ টাকা, করলা ৭০ টাকায়। ঢেঁড়স বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি। একই দামে বিক্রি হচ্ছে কচুর লতি। শিম বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা কেজি, বিক্রি ৭০ থেকে ৮০ টাকা পিস, ফুলকপি ৫০ থেকে ৬০ টাকা পিস, ধুন্দুল ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি, বেগুন ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি, মূলা বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি।

তুলনামূলক একটু কম দামে পাওয়া যাচ্ছে পেঁপে, পাকা টমেটো, শশা ও গাজর। পেঁপে আগের মতোই ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে, পাকা টমেটো ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি, গাজর পাওয়া যাচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজি, শসা ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

দাম অপরিবর্তিত থাকার তালিকায় রয়েছে দেশি পেঁয়াজ। বাজারভেদে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি। আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ আগের মতোই ১৮ থেকে ২০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। কাঁচামরিচ প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।

গরুর মাংসের দামের বিষয়ে নয়াবাজারের ব্যবসায়ী আবদুল সামাদ বলেন, গত সপ্তাহ থেকে ৫৫০ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস বিক্রি করেছি। প্রতিদিন গরু কিনতে আমাদের খরচ বাড়ছে। ফলে আমরা বাধ্য হচ্ছি মাংসের দাম বাড়াতে।

অপরিবর্তিত রয়েছে চাল ও অন্যান্য মুদিপণ্যের দাম। বাজারে প্রতি নাজির ৫৮ থেকে ৬০ টাকা। মিনিকেট চাল ৫৫ থেকে ৫২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। স্বর্ণা ৩৫ থেকে ৩৮ টাকা, বিআর ২৮ নম্বর ৩৮ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এছাড়া খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে ২৬টাকা, প্যাকেট ৩২টাকা, চিনি আমদানিকৃত ৫০, ডাল ৪০ থেকে ৯০, লবন ৩০ থেকে ৩৫, পোলাউর চাল ৯০ থেকে ৯৫। তবে বেড়েছে সবধরনের ডিমের দাম মুরগির ডিম প্রতি ডজনে ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১০৫ টাকায়। যা গত সপ্তাহে ছিল ১০০ টাকা। হাঁসের ডিম ১৫৫ টাকা, দেশী মুরগির ডিম ১৭০ টাকা ডজন বিক্রি হতে দেখা গেছে।

এছাড়া খোলা সয়াবিন তেল ৯০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। আর ৫ লিটারের প্রতি গ্যালনে রুপচাঁদা ৫০০ টাকা, পুষ্টি ৪৭০ টাকা, তীর ৪৯০ টাকা, ফ্রেস ৪৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া খোলা সরিষার তেল প্রতি কেজি ১৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App