×

আন্তর্জাতিক

চরম দারিদ্র্য হটাতে লড়ছে কংগ্রেস

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ এপ্রিল ২০১৯, ১২:৪৯ পিএম

বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশ ভারতে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভার প্রতিনিধি নির্বাচনের লক্ষ্যে ভোটদান প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে কাল বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল), চলবে ১৯ মে পর্যন্ত। ফল জানা যাবে ২৩ মে। ১৩০ কোটি জনসংখ্যার দেশটির নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বর্তমান ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এবং শীর্ষ রাজনৈতিক দল কংগ্রেসের মধ্যে। এতে আগামী ৫ বছরের জন্য সরকার নির্বাচনের লক্ষ্যে ভোট দেবে প্রায় ৯০ কোটি ভোটার। নির্বাচনী প্রচারণা আগেই শুরু হলেও দলগুলোর ইশতেহার ঘোষণার পালা শেষ হয়েছে সম্প্রতি। এতে কংগ্রেস জোর দিয়েছে দেশ থেকে চরম দারিদ্র্য হটানোর ওপর। এ জন্য তাদের হাতের অস্ত্র ‘ন্যূনতম আয় যোজনা’, বা ন্যায় প্রকল্প। দলীয় প্রচারণার ‘থিম’ সঙ্গীতেও বিজেপি সরকারের যাবতীয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে ‘ন্যায়’ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কংগ্রেস। খ্যাতিমান কবি ও গীতিকার জাভেদ আকতারের রচনায় ওই গানের ভিডিওতে বেকারত্ব, নোট বাতিল, ব্যবসা ক্ষেত্রে মন্দা, স্টেশনের নাম বদল এবং কৃষি ক্ষেত্রে দুর্দশার মতো বিষয়গুলো উল্লেখের মাধ্যমে মোদি সরকারের অন্যায়ের ফিরিস্তি তুলে ধরা হয়েছে। পাশাাপশি বলা হয়েছে ন্যায়ের সুবাদে মানুষের ভাগ্য ফেরানোর প্রতিশ্রুতি। খবর আনন্দবাজার, এনডিটিভি। বিজেপির আগেই নিজেদের ইশতেহার ঘোষণা করেন কংগ্রেসের সভাপতি রাহুল গান্ধী। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যখন বালাকোটে বিমান হামলা এবং মহাকাশে শেল ফাটিয়ে দেশভক্তি ও দেশাত্মবোধের স্লোগান তুলে বৈতরণী পার হওয়ার চেষ্টা করছেন, তখন সমাজের তৃণমূল স্তরের মানুষকে টার্গেট করে রাহুলের এ ন্যায়-প্রকল্পকে অনেকেই দেখছেন ‘ওস্তাদের মার’ হিসেবে। অন্যদিকে বিজেপির সদ্য প্রকাশিত ইশতেহার আক্রমণ করে রাহুল বলেছেন, এটি আগ্রাসী এবং এতে কোনো দূরদর্শিতার ছাপ নেই। একে তিনি অভিহিত করেন ‘বিচ্ছিন্ন মানুষের কণ্ঠস্বর’ হিসেবে। এ বিষয়ে নিজের টুইটে রাহুল বলেন, আলোচনার মধ্য দিয়ে তৈরি হয়েছে কংগ্রেসের ইশতেহার। সেখানে লাখ লাখ মানুষের কথা রয়েছে। অন্যদিকে বিজেপির ইশতেহার তৈরি হয়েছে বদ্ধ ঘরে বসে, যাকে একটি ‘বিচ্ছিন্ন কণ্ঠস্বর’ ছাড়া আর কিছুই বলা চলে না। কংগ্রেসের এবারের স্লোগান ‘ন্যায়।’ এতে দলটি ছত্তিশগড়, রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশের ধারা অনুসরণ করে কৃষকদের ঋণ মওকুফ করার অঙ্গীকার করেছে। পাশাপাশি, ২৫ কোটি পরিবারের দেশটির ২০ শতাংশ চরম গরিব বা ৫ কোটি পরিবারকে বছরে ৭২ হাজার টাকা (এক হাজার মার্কিন ডলার) দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে তারা। তবে কী প্রক্রিয়ায় এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে, কারা হবেন এর গ্রহীতা, কীভাবে বাছাই করা হবে তাদের, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া হয়নি ওই ইশতেহারে। তাত্তি¡ক বিবেচনায়, এতে ভারতের অর্থনীতি আরো গতিশীল হওয়ার কথা, যেমন হাতে টাকা আসায় মাথাপিছু আয় বাড়ার সুবাদে দেশে ভোক্তা এবং প্রবৃদ্ধি বাড়বে। তবে এতে সংশয় প্রকাশ করছেন অর্থনীতিবিদরা। কংগ্রেস বলছে, ২০৩০ সালের ভিতর দারিদ্র্য শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনবেন তারা। ন্যায় বাস্তবায়ন কৌশল বিষয়ে নেতারা জানান, কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের উদ্যোগে ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে এ নগদ সহায়তা প্রকল্প। এতে বছরে ৫ হাজার কোটি ডলারের বেশি ব্যয় হবে সরকারের কোষাগার থেকে। প্রথম বছরে দেশটির জিডিপির (প্রায় ২.৭ ট্রিলিয়ন ডলার) ১ শতাংশের কম খরচ হবে। পরবর্তী বছরগুলোতে ব্যয় হবে এর ২ শতাংশের সামান্য কম। রাহুল বলেছেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য আয়কর বাড়ানো হবে না। দলের নীতি-নির্ধারকরা বলছেন, বাড়তি কর চাপানোর দরকার হবে না। ব্যাংক থেকে যেসব ঋণ দেয়া হয়েছে, অথচ আদায় করা হয়নি, সেগুলো আদায় সম্ভব হলেই তিন বছর অবধি চালানো সম্ভব হবে এ প্রকল্প। শুধু গত অর্থবছরেই অনাদায়ি এ ঋণের পরিমাণ প্রায় ১০ লাখ কোটি টাকা। পাশাাপশি শিক্ষা খাতে ব্যয় বাড়ানোর ঘোষণাও রয়েছে কংগ্রেসের ইশতেহারে। রাহুল বলেছেন, দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বিনা খরচে সরকারি স্কুলে পড়ার সুযোগ দেয়া হবে। কংগ্রেসের অভিযোগ, মোদি সরকারের আমলে দেশে ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান চরম আকারে বেড়েছে। দেশে বেকারত্বের হার বিগত ৪৫ বছরে সর্বোচ্চ মাত্রায় উপনীত হয়েছে। আঘাত হানা হয়েছে দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর। সর্বস্তরে অন্যায়ের শিকার হয়েছেন দেশের মানুষ। এবার তাই দেশবাসীকে ‘ন্যায়’ প্রদানে বদ্ধপরিকর হয়েছে কংগ্রেস। এদিকে বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশটির প্রায় ১৮ কোটি লোক এখনো অবস্থান করছে চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে। আর দারিদ্র্যসীমার নিচে রয়েছে প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী। তবে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে বৈষম্য বাড়লেও এ সময়ে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সামরিক শক্তিতে পরিণত হয় দেশটি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App