×

জাতীয়

অন্ধকার থেকে আলোর পথে ৬১৪ চরমপন্থি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ এপ্রিল ২০১৯, ১২:৩৩ পিএম

অন্ধকার থেকে আলোর পথে ৬১৪ চরমপন্থি
অন্ধকার জগৎ ছেড়ে একে একে আলোর পথে ফিরতে শুরু করেছেন অপরাধ জগতের বাসিন্দারা। পরিবার নিয়ে তারাও আর দশটা সাধারণ মানুষের মতোই স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে চান। তাদের সেই আকুতিতে সাড়া দিয়েছে সরকারও। এরই অংশ হিসেবে বনদস্যু, জলদস্যু ও মাদক কারবারিদের পর এবার আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছেন চরমপন্থিরা। অবশ্য ২০ বছর আগেও কুষ্টিয়ার বেশ কয়েকজন চরমপন্থি একইপথে হেঁটেছিলেন। এরপর কেটে গেছে দীর্ঘ সময়। এর মধ্যে ‘ক্রসফায়ার’ ও ‘এনকাউন্টার’-এ বিভিন্ন এলাকার বেশ কয়েকজন চরমপন্থি নিহত হয়েছেন। গ্রেপ্তার হয়ে কারাবন্দি আছেন অনেকে। বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লাগাতার অভিযানে চরমপন্থি দলগুলো পুরোই কোণঠাসা। এ পরিপ্রেক্ষিতে ৯ শর্তে আজ মঙ্গলবার বিকেলে পাবনার শহীদ এডভোকেট আমিন উদ্দিন স্টেডিয়ামে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের কাছে আত্মসমর্পণ করবেন ১৫ জেলার ৬১৪ জন চরমপন্থি। জানা গেছে, আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাওয়া চরমপন্থিদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর অংশ হিসেবে আজ তারা পাবেন আর্থিক প্রণোদনাসহ যুৎসই ব্যবসা করার সার্বিক সহায়তা। যাদের নামে মামলা রয়েছে তারা যাতে আইনিভাবে দ্রুত কারামুক্তির পর স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন সে উদ্যোগও রয়েছে। যারা অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করবে মামলা রুজু হলেও যাতে তাদের সহজে কারামুক্তি পান সেই বিষয়টিও রয়েছে মানবিক দৃষ্টিতে। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের ডিআইজি (অপারেশন) আনোয়ার হোসেন গতকাল সোমবার ভোরের কাগজকে জানান, আত্মসমর্পণকারী চরমপন্থিদের পুনর্বাসন পদ্ধতি নিয়ে কাজ চলছে। যারা অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করবে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে এবং তারা কারাগারে যাবে। পরে আইনি প্রক্রিয়ায় মুক্ত হয়ে তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরবে। ডিআইজি বলেন, এর আগে আত্মসমর্পণ করা জলদস্যু, বনদুস্য এবং মাদক কারবারিদের মতোই তারা স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সুযোগ পাবে। পাবনা জেলা পুলিশের তথ্য মতে, ২০০০ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত চরমপন্থি দলগুলোর অন্তঃকোন্দল ও পুলিশি অভিযানে মারা গেছে ১৯৭ জন। এই প্রেক্ষাপটে আজ পাবনায় বাবলু প্রামাণিকের নেতৃত্বে পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টি (লাল পতাকা) এবং ইউসুফ ফকিরের নেতৃত্বে পূর্ব বাংলার সর্বহারা দলের ১৬০ জন চরমপন্থি অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করবেন। বাকি ৪৫৪ জন অন্যান্য জেলার। আত্মসমর্পণ কার্যক্রম সমন্বয় করছেন পাবনার পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় এখনো পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টি, পূর্ববাংলা সর্বহারা পার্টি, পূর্ববাংলা লাল পতাকাসহ বিভিন্ন চরমপন্থি সংগঠন তৎপর রয়েছে। তারা সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, হত্যা, অপহরণসহ বিভিন্ন অপরাধ এবং দলীয় কোন্দলে খুনোখুনিতে লিপ্ত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক অভিযানে তারা অনেকটা বিপর্যস্ত হলেও দমে যায়নি। সরকার তাদের অন্ধকার জগৎ থেকে আলোতে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে। পাবনা, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, রংপুর, জয়পুরহাট, নওগাঁ, টাঙ্গাইল, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী, খুলনা, সাতক্ষীরা, ফরিদপুর, বাগেরহাট ও যশোর জেলার ৬১৪ জন চরমপন্থি স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সুযোগ পাবেন। তাদের কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে গতকাল সোমবার পাবনায় আনা হয়েছে। এ জন্য পাবনায় বাড়তি নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। র‌্যাব, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় ৫শ সদস্য মোতায়েন রয়েছে। আত্মসমর্পণ করার পর তারা নতুন করে অপরাধে জড়াচ্ছে কিনা সে বিষয়ে পুলিশের বিশেষ নজরদারি থাকবে। তিনি আরো জানান, ৬১৪ জনের মধ্যে যে ৫০ জনের নামে মামলা রয়েছে তারা এরই মধ্যে আত্মসমর্পণ করে কারাগারে রয়েছেন। তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে আইনি সহায়তা দেয়া হবে। ইতোপূর্বে গ্রেপ্তার হয়ে কারাদণ্ড ভোগ করে ছাড়া পেয়েছেন এমন চরমপন্থির আত্মসমর্পণের তালিকায় রয়েছে। জানা গেছে, ৯ শর্তে আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। শর্তগুলো হচ্ছে, তাদের কাছে থাকা সব অবৈধ অস্ত্র পুলিশের কাছে হস্তান্তর করতে হবে; আত্মসমর্পণের আগে দায়ের হওয়া মামলা ও বিচার কার্যক্রম স্বাভাবিক নিয়মে চলবে; অপরাধমূলক কাজের মাধ্যমে নিজের ও পরিবারের সদস্য বা আত্মীয়স্বজনের নামে-বেনামে অর্জিত সব সম্পদ দুদক, সিআইডির মানি লন্ডারিং শাখা ও এনবিআরের মাধ্যমে যাচাই করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে; আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়ায় দায়ের হওয়া মামলায় সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে সহায়তা দেয়া হবে; এখনো সক্রিয়দের ব্যাপারে তথ্য দিয়ে সহায়তা করতে হবে; আইনি প্রক্রিয়ায় মুক্ত হলে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার পাশাপাশি নিজ নিজ এলাকায় সক্রিয় চরমপন্থিদের আত্মসমর্পণে উদ্যোগ এবং পুলিশকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করতে হবে, ভবিষ্যতে কখনো আগের মতো অপরাধে জড়িত হওয়া যাবে না; সংশ্লিষ্ট সংস্থার মাধ্যমে তাদের অর্জিত সব স্থাবর, অস্থাবর সম্পত্তি যাচাই সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ভোরের কাগজকে বলেন, ১৯৯৯ সালে কুষ্টিয়া অঞ্চলের চার শতাধিক চরমপন্থি আত্মসমর্পণ করেছিল। কমিউনিস্ট আদর্শে বিশ্বাসী সশস্ত্র কয়েকটি দল পাবনা, কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা অঞ্চলে এক সময় সক্রিয় থাকলেও এখন তাদের তৎপরতা আগের মতো নেই। বাংলাদেশে প্রায় ৩০-৪০ বছর আগে চরমপন্থিরা নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করত। তারা একটা বলয় সৃষ্টি করে অরাজকতা সৃষ্টি করত। এগুলো ক্রমেই ছোট হয়ে দুর্বল হয়ে গেছে। যে কজন অবশিষ্ট ছিলেন, তারা তাদের কৃতকর্মের জন্য লজ্জাবোধ করছেন। তারা সেই পথ থেকে সরে আসবেন। তাদের সুযোগ দিয়েছি। কী নিশ্চয়তায় তারা আত্মসমর্পণ করছেন? জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, এর আগে জলদস্যু-বনদস্যুরা যেভাবে আত্মসমর্পণ করেছে, এবারও সেই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে আর আগের মতো কার্যকলাপ করবেন না এই ওয়াদা করলে তাদের আইনি সহযোগিতাসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়া হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App