×

জাতীয়

দগ্ধ রাফির সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিতে নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ এপ্রিল ২০১৯, ১২:১০ পিএম

দগ্ধ রাফির সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিতে নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

ফাইল ছবি

প্রবেশের অনুমতি না থাকলেও ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের আইসিইউয়ের দরজার সামান্য ফাঁক দিয়ে নজর দিতেই দেখা গেল মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে (১৮)। হাসপাতালের বিছানায় মুখমণ্ডল ছাড়া সমস্ত শরীর ব্যান্ডেজে মোড়ানো তার। নৃশংস এ ঘটনার বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে রাফির ছোট ভাই রাশেদুল হাসান রায়হান ভোরের কাগজকে জানান, পোড়া ঘায়ের যন্ত্রণায় ঘায়েল তার আদরের বোনটি ভালো নেই। রবিবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ‘শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের’ সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন দেখা করতে গেলে প্রধানমন্ত্রী এসব নির্দেশনা দেন। ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ফেনীর ওই ছাত্রীর ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। দগ্ধ নুসরাতকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী তার কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ঘটনায় জড়িত কেউ যাতে ছাড় না পায়। তিনি জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছেন। চিকিৎসকরা জানান, শরীরের ৮০ শতাংশ পুড়ে যাওয়া সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী রাফির অবস্থা আশঙ্কাজনক। তার চিকিৎসার জন্য ৮ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। ফেনী সোনাগাজী উপজেলার উত্তর চরচান্দিয়া গ্রামের মাওলানা এ কে এম মুসা মানিকের মেয়ে নুসরাত জাহান রাফি। মা শিরিন আক্তার। তিন ভাই এক বোনের মধ্যে রাফি তৃতীয়। সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী ছিলেন তিনি। একই মাদ্রাসার দশম শ্রেণির ছাত্র রাফির ছোট ভাই রাশেদুল হাসান রায়হান বলেন, যৌন হয়রানির অভিযোগে মামলার জেরে মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল সিরাজউদ্দৌলার পক্ষের কয়েকজন রাফিকে মাদ্রাসার ৩য় তলার ছাদে ডেকে নিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে তার চিৎকারে মাদ্রাসার অন্য ছাত্রছাত্রীরা ছাদ থেকে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। এরপর সদর হাসপাতাল, সেখান থেকে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তিনি বলেন, গত ২৭ মার্চ মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা তার পিয়ন নুরুল আমিনকে দিয়ে রাফিকে তার রুমে ডেকে নেন। তখন রাফি তার সঙ্গে আরো ৩-৪ জন বান্ধবীকে নিয়ে অধ্যক্ষের রুমে ঢুকতে চাইলে বান্ধবীদের না ঢুকিয়ে শুধু রাফিকে ভিতরে ঢুকান। এরপর দরজা আটকে অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা রাফিকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখান। ১ এপ্রিল আলিম পরীক্ষার আধা ঘণ্টা আগে তাকে প্রশ্নপত্র দেয়া হবে, যদি সে অধ্যক্ষর কুপ্রস্তাবে রাজি হয়। এর পরই অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা রাফির শরীরের স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দেয়ার চেষ্টা করে। কিছুক্ষণ ধস্তাধস্তির পর রাফি দৌড়ে কক্ষ থেকে বের হয়ে বাইরে গিয়ে বেহুঁশ হয়ে পড়ে যায়। এরপর মাদ্রাসায় থাকা ছোট ভাই রায়হানকে খবর দেয়া হলে সে রাফির কাছে যায়। এরপর অধ্যক্ষ তাকে জানান, তার বোন অসুস্থ। অধ্যক্ষের কাছে ছুটির আবেদন করতে এসেছিল। এসে আবার সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। সেখান থেকে রাফিকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। কিছুটা সুস্থ হলে রাফি জানান, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ তার শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেছিল। এরপরে ক্ষুব্ধ হয়ে স্বজনরা মাদ্রাসায় গিয়ে অধ্যক্ষকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তবে তিনি ওই অভিযোগ অস্বীকার করেন। এরপর মাদ্রাসা অধ্যক্ষই উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকে ফোন দেন। আওয়ামী লীগের নেতা পুলিশসহ মাদ্রাসায় যায়। মাদ্রাসায় গিয়ে সব ছাত্রছাত্রীর মাধ্যমে সত্য ঘটনা জানতে পেরে পুলিশ উল্টো অধ্যক্ষকেই আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এরপর রাফির মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে মামলা করেন। পরের দিন অধ্যক্ষকে আদালত থেকে কারাগারে পাঠানো হয়। রাশেদুল হাসান রায়হান জানান, গত শনিবার আরবি ১ম পত্র পরীক্ষা ছিল। রাফি সকালে পরীক্ষা কেন্দ্রে গেলে বোরকা পরিহিত একজন তাকে বলে, রাফির বান্ধবী নিশাতকে কারা যেন ছাদে মারধর করছে। পরে রাফি মাদ্রাসার ৩য় তলার ছাদে গেলে সেখানে বোরকাপরা, হাতে মোজা লাগানো আরো ৪ জন তাকে মামলা তুলে নিতে চাপ দেয়। মামলা তুলে না নিলে তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। তিনি জানান, রাফি মামলা তুলে নিতে অস্বীকৃতি জানালে ওই ৪ জন তার শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এরপর তারা পালিয়ে যায়। বোরকা পরিহিত থাকায় তাদের চেনা যায়নি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে- তারা অধ্যক্ষের লোক। এছাড়া তারা আসলে ছাত্রী বা নারী কিনা তা নিয়েও সন্দেহ আছে। ঢামেক বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক ডাক্তার সামন্ত লাল সেন ভোরের কাগজকে বলেন, মেয়েটির অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক। মুখ ছাড়া তার পুরো শরীরেই আগুন লেগেছিল। আমরা তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করছি। অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল হলে দু-একদিনের মধ্যেই অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তার চিকিৎসার জন্য শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রকল্প পরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল কালামকে প্রধান করে ৮ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড করা হয়েছে। বোর্ডের অন্য সদস্যরা হলেন- ঢামেক বার্ন ইউনিটের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. রায়হানা আউয়াল, রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. মহিউদ্দিন আহমেদ, প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ নওয়াজেস খান, একই বিভাগের অধ্যাপক ডা. লুৎফর কাদের লেনিন, অধ্যাপক ডা. বিধান সরকার, ডা. নজরুল ইসলাম ও ডা. মো. জাহাঙ্গীর কবির। তিনি জানান, গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে রাফির পুরো ঘটনা জানিয়েছি। সব কিছু শুনে তিনি মর্মাহত হয়ে পড়েন। রাফির সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করাসহ দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App