সংস্কারের দাবিতে গৌরীপুর-হোমনা সড়ক অবরোধ
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭ এপ্রিল ২০১৯, ০৩:৩৯ পিএম
কুমিল্লার দাউদকান্দিতে সড়ক সংস্কারের দাবিতে অবস্থান ধর্মঘট করেছে সিএনজি চালকরা। রবিবার সকালে গৌরীপুর-হোমনা সড়কের বাজার থেকে মোড় পর্যন্ত এককিলোমিটার সড়কজুড়ে বিদ্যুতের খুঁটি, বাঁশ ও গাছ ফেলে এ অবরোধ ও ধর্মঘটের ডাক দেন তারা। এদিকে বেলা বাড়ার সাথে সাথে সিএনজি চালকদের সমর্থন জানিয়ে এলাকাবাসী ও সড়কের দু’পাশের স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদেরও বিক্ষোভ মিছিল করতে দেখা যায়।
তাৎক্ষনিক খবর পেয়ে দাউদকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহবুব আলম ঘটনাস্থলে আসেন এবং সড়ক সংস্কারের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নিলেও সিএনজি চালকরা তাদের ধর্মঘট অব্যাহত রেখেছে। সকাল থেকে চলা ধর্মঘটে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় এসড়কে চলাচলকারী যাত্রীরা সাময়িক ভোগান্তিতে পড়েন।
জানাযায়, হোমনা-গৌরীপুর-ঢাকা সড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুর বাজার হতে মোড় পর্যন্ত এক কিলোমিটার অংশে অসংখ্য গর্ত ও খানাখন্দে দীর্ঘদিন যান চলাচল অনুপযোগীয় হয়ে পড়েছে। সড়কের দু’পাশের সরকারী খাল প্রভাবশালীরা দখল করে ভরাট করায় সামান্য বৃষ্টি হলেই সড়ক না খাল চেনার উপায় থাকেনা। সৃষ্ট গর্তে পরে প্রতিদিনই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে যানবাহন এবং চরম দূর্ভোগ পোহাচ্ছেন সড়কে চলাচলকারী শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ। এছাড়া এ সড়ক দিয়ে পার্শ্ববতি জেলার বাঞ্জারামপুর উপজেলাসহ কুমিল্লার মুরাদনগর, হোমনা, মেঘনা ও তিতাস উপজেলার মানুষ নিয়মিত চলাচল করেন। ঢাকা-কুমিল্লায় যাত্রী ও মালামাল পরিবহনে এ সড়কে প্রতিদিন অসংখ্য যাত্রীবাহী বাস, ট্রাক, প্রাইভেটকার, কাভার্ডভ্যান, পিকআপভ্যান, সিএনজি চালিত অটোরিকশা ও রিকশা চলাচল করে। এক কিলোমিটার সড়কের পাশে জনতা ব্যাংকসহ কয়েকটি বেসরকারী ব্যাংকের শাখা, স্কুল কলেজ এবং প্রায় ২০টি বেসরকারী হাসপাতাল রয়েছে। এপথ দিয়ে প্রতিদিন এসকল প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক- শিক্ষার্থীরা চলাচল করেন। কিন্তু গৌরীপুর বাজার থেকে মোড় পর্যন্ত এক কিলোমিটার সড়কে পানি নিষ্কাশনের ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা, দু’পাশের সড়ক ও জনপথ বিভাগের সরকারী ডোবাগুলো ব্যাক্তিস্বার্থে ভরাট হওয়া এবং পাতাতা রেস্তোরা সংলগ্ন দু’পাশের সরকারী খাল দখল হওয়ার ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার সৃষ্ট হয়। রবিবার সকালে শাপলা মেডিকেলের সামনে গর্তে পড়ে ট্রাক বিকল হলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে সিএনজিসহ সকল যানবাহন চালকরা যান চলাচল বন্ধ করে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে। তাদেও দেখে ভয়েজার স্কুল এন্ড কলেজ, অক্সফোর্ড স্কুল এন্ড কলেজ, মাইলস্টোন স্কুলের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিলে যোগদেন।
এ সড়কে চলাচলকারী সিএনজি চালক জাহাঙ্গীর, সায়েম, নুরা আলম ও হারুন মিয়া জানান, এ সড়কে গাড়ী চালিয়ে প্রতিদিনই আমাদের ব্যাথার ঔষধ খেতে হয়। আর কয়দিন পর পর সিএনজির কাজ করানো লাগে, তাই মালিকরাও আমাদের থেকে জরিমানা কেটে নেয়। এখন আমরা সিএনজি চালিয়ে ছেলে মেয়ে নিয়ে ভাত খাইবো নাকি ঔষুধ খাইবো নাকি মালিকদের জরিমানাসহ জমার টাকা দিবো ? কোনটাই যখন পারতেছিনা তাই বাধ্য হয়ে রাস্তায় নামছি। সরকারের কাছে আমাদের দাবী রাস্তাটি তারাতারি ঠিক করলে আমরা ছেলে মেয়ে নিয়ে ডাইল(ডাল) ভাত খেয়ে বাচতে পারি।
গৌরীপুর গ্রীন সিএনজি মালিক সমিতির সভাপতি মোঃ হারুনুর রশিদ বলেন, চালকদের অনুরোধে কয়েকদিন পর পর মাটি সুরকি দিয়ে মেরামত করলেও একদিন বৃষ্টি হলেই আর থাকেনা। এ অবস্থার জন্য অনেক মালিকরাও এখন গাড়ী বন্ধ রেখেছে। সড়কটি মেরামতে দ্রæত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের নিকট বিনীত আবেদন জানাচ্ছি।
ভয়েজার স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ সুমন, অক্সফোর্ড এর অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম বলেন, সংস্কারের অভাবে প্রায় তিন বছর যাবৎ সড়কটির দেড় কিলোমিটার অংশ চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এখানকার পুরো অংশজুড়ে খানাখন্দে ভরা। ছেলে মেয়েরা পায়ে হেটে আসতে পারেনা। সিএনজি চালকদের আন্দোলন করতে দেখে শিক্ষার্থীরা ক্লাশ ফেলে তাদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে ।
দাউদকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহবুব আলম জানান, গৌরীপুর-হোমনা সড়কের এ দেড় কিলোমিটার অংশের টেন্ডার প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। আজ(রোববার) আন্দোলনকারীদের সাথে নিয়ে সড়কটি পরিদর্শন করেছি। আগামী এক সপ্তাহের মধে ঠিকাদার কাজ শুরু করবে। আর সরকারী খাল উদ্ধারে অচীরেই অভিযান চালানো হবে।