×

জাতীয়

ফায়ার সার্ভিস কেন ব্যবস্থা নেয়নি?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ এপ্রিল ২০১৯, ১২:০৪ পিএম

ফায়ার সার্ভিস কেন ব্যবস্থা নেয়নি?
বনানীর এফ আর টাওয়ার ও চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর আবারো নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। ফায়ার সার্ভিস, রাজউক, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়সহ সব সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এখন বেশ সরব। অথচ কিছুদিন আগেও তারা সবাই নীরব ছিলেন। গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী বলেছেন, ‘কোনো ভবনে জরুরি মুহূর্তে বের হয়ে আসার রাস্তা না থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, চিহ্নিত ভবনগুলোকে ঝুঁকির ব্যাপারে আগেও সতর্ক করা হয়েছিল। এখন ‘অতি ঝুঁকিপূর্ণ’ ঘোষণা করে ব্যানার ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। এরপরও ভবন মালিকরা কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে প্রয়োজনে মামলা করা হবে। অথচ ঝুঁকিপূর্ণ ভবন হিসেবে সতর্ক করার পর এতদিনেও কেন ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে মামলা দেয়া হয়নি বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কেন পদক্ষেপ নেয়নি তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানান, এর আগে ফায়ার সার্ভিস ৩৯টি ভবন চিহ্নিত করে অগ্নিনিরাপত্তার ব্যাপারে মালিকদের তাগিদ দিয়েছে। কিন্তু মালিকরা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এরই পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে এবার এসব ভবনের সামনে সতর্কতার অংশ হিসেবে ‘অতি ঝুঁকিপূর্ণ’ ঘোষণা করে ব্যানার ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। ওই সব ভবন মালিকদের বারবার তাগিদ দেয়া হয়েছে। এরপরও এখন যদি মালিকরা কার্যকর ব্যবস্থা না নেন, তাহলে প্রয়োজনে মামলা করা হবে। অগ্নিনিরাপত্তা ঝুঁকি থাকায় ঢাকার ১৫টি, সাভারে ৫টি, গাজীপুরে ৭টি এবং নারায়ণগঞ্জে ১২টি ভবন ও মার্কেটকে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিষয়টি দৃশ্যমান করার জন্য ভবন মালিক ও সাধারণ জনগণকে সতর্ক করতে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ব্যানার ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। এতে জনগণের সচেতনতা বাড়বে বলে মনে করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) মেজর এ কে এম শাকিল নেওয়াজ বলেন, জরিপে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন হিসেবে চিহ্নিত এবং এখনো ঝুঁকি নিরসনের উদ্যোগ নেয়া হয়নি এমন সব মার্কেট, আবাসিক ভবন, বাণিজ্যিক ভবন, হাসপাতাল, শিল্পপ্রতিষ্ঠানসহ সব স্থাপনায় এই কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখা হবে। মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টিকে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। এভাবে ভবন পরিদর্শন ও ঝুঁকি ঘোষণার কার্যক্রম চলবে। অন্যদিকে বহুতল ভবনের অগ্নিনির্বাপণের ব্যাপারে এতদিন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কোনো মাথাব্যথা না থাকলেও এবার গুরুত্বপূর্ণ এই মন্ত্রণালয়টিও নড়েচড়ে বসেছে। বনানীর এফ আর টাওয়ারের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির এক অনুষ্ঠানে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, কোনো ভবনে জরুরি মুহূর্তে বাইরে আসার রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আবার কোনো কোনো ভবনে সেই জরুরি রাস্তাটাই রাখা হয়নি। জরুরি নির্গমন পথ যে ভবনে নেই, তাদের আমরা নির্ধারিত সময় বেঁধে দেব। তাদের সেই সময়ের ভেতরে ব্যবস্থা নিতে হবে। যে ভবনে জরুরি রাস্তা থাকার পরও ব্যবহার করছে না, তাদেরও সময় দেব। এই সময়ের মধ্যে বিল্ডিং কোড অনুসরণ করতে হবে। আমরা আবার পরিদর্শনে লোক পাঠাব। তারা দেখে সনদ দেয়ার পর আমরা সেই ভবনকে ব্যবহার উপযোগী ঘোষণা করব। প্রশাসনের এই নড়েচড়ে বসার পর সবার প্রশ্ন আগে কেন এই উদ্যোগ নেয়া হয়নি? এই উদ্যোগ আরো আগে নেয়া হলে মানুষ সতর্ক হতে পারত। এফ আর টাওয়ারের মানুষ সতর্ক হলে ২৬ জনকে বেঘোরে প্রাণ হারাতে হতো না। ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক দেবাশীষ বর্ধন ভোরের কাগজকে বলেন, জনবল সঙ্কট থাকা সত্ত্বেও আমরা সর্বোচ্চ কাজ করে যাচ্ছি। ভবন নির্মাণ ইমারত আইন অনুযায়ী, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে নোটিশ দিচ্ছি। কিন্তু কেউ কর্ণপাত করছে না। কারণ, আমরা তাৎক্ষণিকভাবে কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারি না। এজন্য মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে মন্ত্রণালয়ে কাছে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের আবেদন করা হয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ পেলে সবাই কথা শুনতে বাধ্য হবে। পাশাপাশি এ সংক্রান্ত আইন সংশোধন করতে হবে এবং ফায়ার সার্ভিসকে আরো ঢেলে সাজাতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App